protima bedi

অর্ধশতক আগে লিভ ইন, নুড মডেলিং! সাহসী প্রতিমার মৃত্যু পাহাড়ের টানেই

১৯৭৫ সালে একটি অনুষ্ঠান প্রতিমার জীবনে নতুন অধ্যায় যোগ করল। একটি ওড়িশি নাচের অনুষ্ঠান দেখে তিনি মুগ্ধ হয়ে যান। ঠিক করেন, এই নৃত্যশৈলী তাঁকে শিখতেই হবে। প্রখ্যাত নৃত্যগুরু কেলুচরণ মহাপাত্রের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন তিনি। ২৬ বছর বয়সে এসে ধ্রুপদী নাচ শিখতে শুরু করায় যথেষ্ট প্রতিকূলতার মধ্যে তাঁকে পড়তে হয়েছিল। প্রতি দিন ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা অনুশীলনে সেই প্রতিকূলতা জয় করেছিলেন প্রতিমা।

Advertisement
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৫:৩৮
Share:
০১ ১৩

নিজের সময়ের থেকে ছিলেন কয়েক যোজন এগিয়ে। এক দিকে ধ্রুপদী নৃত্যসাধনা। অন্য দিকে সাহসী মডেলিং। দুই বিপরীত মেরুর যুগলবন্দি ছিলেন তিনি, প্রতিমা বেদী। কিন্তু শেষ জীবনে পুত্রশোকে আমূল বদলে ফেলেছিলেন নিজেকে। চলেও গেলেন আচমকা, সবাইকে অবাক করে দিয়ে।

০২ ১৩

১৯৪৮ সালের ১২ অক্টোবর প্রতিমার জন্ম দিল্লিতে। তাঁর বাবা লক্ষ্মীচাঁদ গুপ্ত ছিলেন হরিয়ানার সম্পন্ন ব্যবসায়ী। মা রেবা বাঙালি। ভিন জাতে বিয়ে করায় লক্ষ্মীচাঁদকে বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল। তিনি দিল্লিতে কাজের সূত্রে এসে নতুন সংসার শুরু করেছিলেন।

Advertisement
০৩ ১৩

দিল্লির পাশাপাশি প্রতিমার শৈশব কেটেছে গোয়া ও মুম্বইয়ে। মাঝে নয় বছর বয়সে তাঁকে কিছু দিন থাকতে হয়েছিল হরিয়ানার কারনালেও। তারপর তাঁকে পাঠানো হয় পঞ্চগনির একটি নামী আবাসিক স্কুলে। এরপর স্নাতক তৎকালীন বম্বের সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে।

০৪ ১৩

ছয়ের দশকের শেষে দেশের প্রথম সারির মডেলদের মধ্যে একজন ছিলেন প্রতিমা। কাজের সূত্রেই আলাপ কবীর বেদীর সঙ্গে। বাড়ির অমতে তাঁর সঙ্গে লিভ ইন শুরু করেন প্রতিমা। ১৯৬৯ সালে বিয়ে করেন কবীর-প্রতিমা।

০৫ ১৩

তাঁদের মেয়ে পূজার জন্ম ১৯৭০ সালে। দু’বছর পরে জন্ম ছেলে, সিদ্ধার্থের। তার দু’বছর পরে দুঃসাহসী মডেলিং প্রতিমার। চলচ্চিত্র সংক্রান্ত একটি পত্রিকার জন্ম উপলক্ষে প্রতিমা মুম্বইয়ের জুহু সৈকতে দিনের আলোয় সম্পূর্ণ বিবস্ত্র হয়ে মডেলিং করেন।

০৬ ১৩

এর মাঝেই ব্যাহত ব্যক্তিগত জীবন। ১৯৭৮ সালে ভেঙে যায় কবীর বেদীর সঙ্গে দাম্পত্য। গুঞ্জন, অভিনেত্রী পরভীন বাবির সঙ্গে কবীরের সম্পর্কই বিবাহবিচ্ছেদের কারণ।

০৭ ১৩

১৯৭৫ সালে একটি অনুষ্ঠান প্রতিমার জীবনে নতুন অধ্যায় যোগ করল। একটি ওড়িশি নাচের অনুষ্ঠান দেখে তিনি মুগ্ধ হয়ে যান। ঠিক করেন, এই নৃত্যশৈলী তাঁকে শিখতেই হবে।

০৮ ১৩

প্রখ্যাত নৃত্যগুরু কেলুচরণ মহাপাত্রের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন তিনি। ২৬ বছর বয়সে এসে ধ্রুপদী নাচ শিখতে শুরু করায় যথেষ্ট প্রতিকূলতার মধ্যে তাঁকে পড়তে হয়েছিল। প্রতি দিন ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা অনুশীলনে সেই প্রতিকূলতা জয় করেছিলেন প্রতিমা।

০৯ ১৩

এর পর থেকে নাচই হয়ে ওঠে তাঁর জীবন। পাল্টে ফেলেন তাঁর জীবনধারাও। পাশ্চাত্য শৈলি থেকে নিজেকে সাজিয়ে তোলেন ভারতীয় ঘরানায়। নতুন নাম নেন প্রতিমা গৌরী। দেশবিদেশে অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ১৯৯০ সালে বেঙ্গালুরুর উপকণ্ঠে গড়ে তোলেন ‘নৃত্যগ্রাম’। গুরুকুলের মতো প্রাচীন গুরু শিষ্য পরম্পরায় শুরু হয় নৃত্য অনুশীলন।

১০ ১৩

সাতটি ধ্রুপদী ধারার নৃত্যশৈলির পাশাপাশি নৃত্যগ্রামে শেখানো হতো ছৌ ও কলরীপায়ট্টু। এই প্রতিষ্ঠান ছিল প্রতিমার মানসসন্তান। কিন্তু এক বিপর্যয়ে সুর কাটল ধ্রুপদী ছন্দে।

১১ ১৩

নর্থ ক্যারোলিনায় উচ্চশিক্ষারত কবীর-প্রতিমার ছেলে ২৬ বছর বয়সী সিদ্ধার্থ আত্মঘাতী হন ১৯৯৭ সালে। এই শোকের অভিঘাতে নিজেকে সব কিছু থেকে সরিয়ে নেন প্রতিমা। নিজেকে সমর্পণ করেছিলেন হিমালয়ের কাছে। হিমালয় সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াতেন তিনি।

১২ ১৩

১৯৯৭ সালের অগস্টে কৈলাস মানস সরোবর যাত্রায় রওনা হন প্রতিমা। পথে, ভারত-নেপাল সীমান্তে পিথোরাগড় জেলায় মালপা গ্রামে রাত্রিবাসের জন্য থেমেছিলেন যাত্রীরা। ১৮ অগস্ট রাতে ভয়াবহ ধস ও হড়পা বানে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় মালপা গ্রাম। প্রাণহানি হয় ২২১ জনের। তাঁদের মধ্যে ছিলেন প্রতিমা বেদী-সহ ৬০ জন কৈলাস-পুণ্যার্থী।

১৩ ১৩

জীবন কাটিয়েছেন নিজের শর্তে, নিজের ছন্দে। মাঝে মাঝে ছন্দপতন হয়েছে। কিন্তু আবার ছত্রভঙ্গ পথকে সাজিয়ে নিয়েছেন প্রতিমা। বিস্ময়ে ভরা জীবনের শেষে মৃত্যুতেও সবাইকে বাকরুদ্ধ করে গেলেন বোহেমিয়ান প্রতিমা বেদী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
Advertisement
আরও গ্যালারি
Advertisement