ছোটগল্প
Bengali Short Story

বিউটি পালাবে

কথাটা নিবারণ প্রামাণিকের মেয়ে বিউটিকে নিয়ে। যে কিনা কলেজে উঠেছে সবেমাত্র উচ্চ মাধ্যমিকে সেকেন্ড ডিভিশনে পাস করে। নিবারণ প্রামাণিকের সেলুন আছে এক ফালি জমির উপর। ছোট্ট দোকান। এক কালে লাইন পড়ত ছোট্ট ঘরটার সামনে।

অঙ্কন মুখোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৫:০৫
Share:

ছবি: প্রসেনজিৎ নাথ।

বিউটি পালাবে...

কথাটা কিছু দিন ধরে চাপা বুনো ফুলের গন্ধের মতো ভেসে বেড়াচ্ছে দাসপাড়ার বাতাসে। বিশেষ করে উঠতি বয়সের ছেলেপুলেরা ফিসফাস করছে লুকিয়ে-চুরিয়ে। তাদের নিষিদ্ধ গুঞ্জন বড় রহস্যঘন। কিন্তু চাপা থাকে না কিছুই। দরমার ঘরের ফাঁকফোকর গলে যেমন উনুনের ধূসর ধোঁয়া বেরিয়ে আসে পাকিয়ে পাকিয়ে, তেমনই গোপন কথাটা ছড়িয়েছে পাড়াময়। ছড়িয়েছে এ কান থেকে ও কানে, এ মুখ হয়ে ও মুখে। সকলেই অপরের কানে কথাটা তুলেছে ফিসফিসিয়ে, আর জুড়ে দিয়েছে বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ— ‘কথাটা কাউকে বলিস না কিন্তু!’— ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়েছে।

কথাটা নিবারণ প্রামাণিকের মেয়ে বিউটিকে নিয়ে। যে কিনা কলেজে উঠেছে সবেমাত্র উচ্চ মাধ্যমিকে সেকেন্ড ডিভিশনে পাস করে। নিবারণ প্রামাণিকের সেলুন আছে এক ফালি জমির উপর। ছোট্ট দোকান। এক কালে লাইন পড়ত ছোট্ট ঘরটার সামনে। হাতের কাঁচি থামানোর ফুরসত পেত না নিবারণ প্রামাণিক। এখন ফ্যাশনেবল পার্লার গজিয়ে উঠেছে চার দিকে। সেখানে দেওয়াল-জোড়া কাচ। ঝিকিমিকি লাইট জ্বলে সর্বক্ষণ। মেশিনে চুলের কাটিং, দাড়ি ট্রিমিং হয় কাস্টমারদের। কত রকম কাট! সে সবের চার্জ লেখা ক্যাটালগও নাকি আছে। নিবারণ অত কিছুর নামও শোনেনি কস্মিন্কালে। নিবারণের দোকানে আসে কিছু বেরসিক ছাপোষা কাঠখোট্টা মানুষ। যাদের বাহার করার মতো শখ, বয়স, চুল, কোনওটাই তেমন অবশিষ্ট নেই।

নিবারণ প্রামাণিকের বৌ অলকার মেয়ের কোলে মেয়ে। ছোটটি জামার হাতায় নাকের শিকনি মুছতে মুছতে সরকারি ইস্কুলে যায় ধুলোপায়ে। মিড-ডে মিলের ডিম কাড়াকাড়ি করে খায় বন্ধুদের সঙ্গে। বড় মেয়ে বিউটি দল পাকিয়ে কলেজ করে। বিউটি দেখতে-শুনতে খুব চটকদার কিছু নয়, টানাটানির সংসারের মেয়েরা যেমন হয়, নেহাতই সাদামাটা। পাড়ার মোড়ের বিশাখা বৌদির দোকান থেকে কেনা ফর্সা হওয়ার সস্তার ক্রিম মাখে সে এখন রোজ দু’বেলা নিয়ম করে। কলেজে গেলে এ সব বাহার একটু করতে হয়। কলেজটাই বাহার করার উপযুক্ত জায়গা। কত জায়গার ছেলেমেয়ে আসে, একটু ফিটফাট না হলে চলবে কেন! বিশাখা বৌদিই সাজেশন দেয় ওকে, কোন ক্রিমে বিউটির মাজা রঙে জৌলুস আসবে, কোনটা মাখলে বসন্তের দাগগুলো মিলিয়ে যাবে ওর মুখ থেকে, আর কী ভাবেই বা বিউটির রুক্ষ শণের মতো চুলের গোছা বদলে গিয়ে হয়েউঠবে বিউটিফুল।

এলাকায় বিশাখা বৌদির নানা বদনাম আছে। উঠতি ছেলেমেয়েদের বিপথে চালনা করতে নাকি সে ওস্তাদ। সবাই বলে, “ও মেয়েছেলেটা নিজে যেমন, তেমনই কচি কচি মেয়েদেরও মুখে রং মাখতে শেখাচ্ছে... ছিঃ ছিঃ!” অবশ্য বিশাখা বৌদির কিছু যায় আসে না লোকের কথায়। স্বামী হঠাৎ মারা যাওয়াতে দোকানটা দিতে বাধ্য হয় বিশাখা বৌদি গত বছর। অনেক কষ্ট করে পেট চালাতে হয় তাকে। ঘরে বৃদ্ধা শ্বাশুড়ি আর ন’বছরের ছেলে। বদনামের কথা ভাবলে তিনটে পেট চলত না এ বাজারে।

বিশাখা বৌদির দোকানের সামনেই বাইকটা এসে থেমেছিল সে দিন। হলুদ ওড়না জড়ানো বিউটিকে প্রথমে চেনা যায়নি। গাড়ি থেকে নেমে এসে সাবধানে একটা উড়ন্ত চুম্বন ছুড়ে দিয়েছিল ঘাড়ের কাছে কাঁকড়াবিছের উল্কি আঁকা ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে। ছেলেটাও কম নয়, বিউটির সেই উড়ন্ত চুম্বনকে বিরাট কোহলির মতো নিজের জামার পকেটে ক্যাচ করে নেয় সে বিশেষ ভঙ্গিতে। মুচকি হেসে বিউটি ‘বাই’ করে আলতো করে হাত নেড়ে। তার পরেই ধাঁ করে বেরিয়ে যায় বিউটির সেই প্রেমিক, কালো বাইকটা শূন্যে উড়িয়ে। যেন রূপকথার রাজকন্যা আর রাজকুমার। গাড়িটা রাজকুমারের পক্ষিরাজ।

কথাটা ছড়িয়ে পড়েছিল তার পর থেকেই। বিউটি অবশ্য ভয় করে না কাউকে। সে এখন গোড়ালি-উঁচু জুতো পরে কলেজে যায়। ভয় কেন পাবে? সে কি তার ওই ন্যাড়া মাথায় হেয়ারব্যান্ড পরা বোন রুনুর মতো আছে না কি? লায়েক হয়েছে। মাঝে মাঝে ফোনে রিল্‌স বানিয়ে নাচে হিন্দি গানের সঙ্গে। সেখানে ওর দশ হাজার ফলোয়ার হয়ে গেছে এর মধ্যেই। ও পাবে ভয়! তবুও বাস্তব দুনিয়ায় এক জন আছে, যার সামনে সব সাহস উবে যায় বিউটির। যার সামনে ভাল করে চোখ তুলে তাকাতে পারে না ওর বাবা নিবারণও। সে ওর মা অলকা।

অলকা চিরদিনই গম্ভীর প্রকৃতির মহিলা। টানাটানির সংসারে পড়ে আরও কয়েক পোঁচ গাম্ভীর্যের প্রলেপ পড়েছে অলকার দেহে-মনে। তার পর যবে থেকে শুনেছে মেয়ের ব্যাপারটা, তখন থেকেই দাহ্য বস্তুর মতো হয়ে আছে অলকা। যখন-তখন জ্বলে উঠছে সে কোনও কারণ ছাড়াই। তার ঝাঁজের বেশির ভাগটাই তপ্ত কড়াই থেকে গরম তেল ছিটকে আসার মতো গিয়ে পড়ছে স্বামীর উপর। নিবারণ প্রামাণিক নিরীহ মানুষ। সে আর কী করে! শুধু শোনে, আর তাকিয়ে থাকে পিটপিট করে। ওর কাঁচিহীন ডান হাতের আঙুলগুলো থেকে থেকে নড়ে ওঠে অভ্যাসবশত। যেন শূন্যে চুল কাটছে কারও। ও দিকে ভাতের ফ্যান ঝাড়তে ঝাড়তে অলকা বলে ওঠে, “সময় থাকতে থাকতে মেয়ের ব্যবস্থা করো বলে দিচ্ছি। ও মেয়ের কিন্তু মরণপাখা গজিয়েছে।”

নিবারণ আমতা আমতা করে বলে, “ছেলেটা মন্দ নয় শুনেছি... বাপের ফলাও ধান-চালের কারবার, হালে একটা তেলকলও...”

ফের ফুলকি ছোটে, “এই তুমিই ওর সর্বনাশটা ডেকে...” বলে ঝাঁকুনি দিয়ে উঠতে যাচ্ছিল অলকা, তখনই দরজার পাশে বিষণ্ণ ছায়াটা এসে দাঁড়াল। নিবারণ প্রামাণিক আর অলকার দৃষ্টি গিয়ে পড়ল ছায়ার অধিকারিণীর উপর। পরক্ষণেই আবার ছায়াটা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিঃশব্দে মিলিয়ে গেল ঘরের ভিতর।

গত এক মাস ধরে বিউটির কলেজ যাওয়া বন্ধ। ঘটনা জানাজানির পর অলকা মেয়েকে এক রকম বন্দি করেই রেখেছে বলা যায়। শুধু কি বন্দি করে রাখা, শারীরিক প্রহার পর্যন্ত চালিয়েছে অলকা মেয়ের উপর, “এই জন্য তোর এত সাজের ঘটা? অ্যাঁ... এই জন্য দিনরাত আয়নার সামনে বসে মুখ ঘষা শুধু? হারামজাদি, শয়তানি মেয়ে...” চড়ের পর চড় মেরে মেরে বিউটির নরম গাল দুটো লাল করে দিয়েছিল সেদিন অলকা। বিউটির সব বাহারের প্রসাধনী টান মেরে তুলে নিয়ে, ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল আঁস্তাকুড়ের মধ্যে। বিউটি কিছু বলেনি। সব সহ্য করেছিল নীরবে। শুধু প্ল্যান কষেছিল বালিশ বুকে আঁকড়ে ধরে। সে দিনই ঠিক করে ফেলেছিল, পালাবে। এই বাড়ি ছেড়ে বিউটি পালাবে ওর ভালবাসার মানুষের সঙ্গে। এ বাড়ির লোকজন এখন তার শত্রু। শত্রু না হলে কেউ এমন করে! বাবাটা শত্রু, মা-টা শত্রু, বোনটা... না বোনটা ছাড়া। রুনুকে ধর্তব্যের মধ্যে রাখেই না বিউটি।

সেদিনের পর থেকে চলছে এক রকম। গোটা পাড়ার মতো বাড়িটা যেন অপেক্ষা করে আছে বিশেষ কোনও মুহূর্তের। বিউটি এখনও পালায়নি। স্বস্থানেই রয়েছে। তবে ওর পালানোর আগাম অনুমানের একটা চাপা গুঞ্জন উঠেছে পাড়ায়। সবাই যেন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছে বিউটি কখন পালাবে। পরের বাড়ির ভবিষ্যৎ সর্বনাশটা দেখার আনন্দে এখন থেকেই কানাকানি শুরু হয়েছে অনেকের মধ্যে। কে কেমন ভাবে সহানুভূতি জানাবে, তার প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেছে যে যার মতো। এখন শুধু বিউটির পালানোর অপেক্ষা...

বিউটি নিজেও জানে না, কী ভাবে তার গোপন কথাটা জেনে গেছে সবাই। ওর প্রিয় বান্ধবী সোমার মারফত গোপন যোগাযোগ আছে বুম্বার সঙ্গে। হ্যাঁ, ঘাড়ে কাঁকড়াবিছের ট্যাটুওয়ালা সেই বাইক-বাহাদুরের নামই বুম্বা। বিউটির ফোনটা অলকা কেড়ে নিয়েছে আগেই। সোমাই এখন ওর একমাত্র ভরসা। ওই সোমাই কি তবে... পরক্ষণেই জেগে ওঠা সন্দেহের ঢোকটা গিলে নেয় বিউটি। না না, সোমা খুব বিশ্বাসী। ও কিছু গোলমাল করবে না। কত পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে ও! তবে আর বেশি দেরি করা যাবে না। মা যা শুরু করেছে, তাতে ভরসা নেই কোনও। যা করার খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে এখন বিউটিকে।

বিউটি পালিয়েছে...

এক সপ্তাহ হল ঘটনাটা ঘটেছে। দাসপাড়ার ঘরে ঘরে এখন একটাই মুখরোচক আলোচনা। নিবারণ প্রামাণিকের মেয়ে বিউটি প্রামাণিক শেষ পর্যন্ত পালিয়ে গেছে সকলের আশা পূর্ণ করে। সে শুধু পালায়নি, পালিয়ে বিয়ে করে নিয়েছে ধানহাটার ওই ছেলেটাকেই। যে ছেলের কালো মোটরবাইক বিউটির মাথা ঘুরিয়েছিল, যার ঘাড়ের কাছে কাঁকড়াবিছের উল্কি আঁকা, সেই বুম্বাকেই বিয়ে করে পালিয়েছে, কিংবা পালিয়ে বিয়ে করেছে বিউটি।

বিউটির শ্বশুরবাড়ি অবশ্য ভাল। ওর শাশুড়ি বরণ করে ঘরে তুলেছে ছেলে-বৌকে। হা-ঘরের মেয়ে হওয়ায় দোনামোনা করেছিল ওরাও প্রথমটায়। বুম্বার মা কেঁদেছিল খুব। সে কান্না যত না হা-ঘরের মেয়ে বাড়ির চৌকাঠ পেরোনোর জন্য, তার চেয়ে বেশি একমাত্র ছেলের বিয়েতে কানাকড়ি না পাওয়ায়। কিন্তু শেষ অবধি ওঁরা মেনে নিয়েছেন। ছেলের সুখেই বাবা-মায়ের সুখ। শেষ পর্যন্ত নিজের গলা থেকে ভারী গয়না খুলে বুম্বার মা পরিয়ে দিয়েছে বৌমা বিউটির গলায়।

আজ বিউটির রিসেপশন। শ্বশুরবাড়ি থেকে জমকালো আয়োজন হয়েছে। বেয়াই-বেয়ান, জামাই, মেয়ে এক সঙ্গে এসে নেমন্তন্ন করে গেছিল নিবারণদের। সেই মতো রুনুকে সঙ্গে নিয়ে ধানহাটা গেছে নিবারণ প্রামাণিক। শুধু অলকা যায়নি। নিবারণ অনেক করে ধরেছিল। কিন্তু অলকার মত বদলায়নি। শুধু গলার সরু হার আর এক জোড়া ফিনফিনে কানের দুল খুলে দিয়েছিল স্বামীর হাতে, বলেছিল, “মেয়েটাকে দিয়ো।”

নিবারণরা চলে যাওয়ার পর নিত্যদিনের মতো ঘরকন্নার কাজে মন দিয়েছিল অলকা। গত তেইশ বছর ধরে এই এক কাজ করে চলেছে সে। মাঝে বাপের বাড়ি গেছে হাতে গুনে কয়েক বার মাত্র। শ্বশুর-শাশুড়ির মৃত্যু, ননদের বিয়ে, মেয়েদের জন্ম দেওয়া, বড় করা... এ সব করতে করতে কখন যে পাক ধরতে শুরু করল অলকার চুলে! অলকা অবশ্য টের পায়নি কিছুই। উঠোনে ঝাঁট দিতে দিতে, কলতলায় কাপড় কাচতে কাচতে, ঘর পরিষ্কার করতে করতে ফেলে আসা জীবনের কথা আজ বড় মনে পড়ছে তার। বেশি কিছু নয়, বরের জন্য একটা মোটরবাইক আর বাড়ির জন্য একটা ফ্রিজের বড় শখ ছিল অলকার। কত বার বলেছে সে নিবারণকে! কিন্তু তত দিনে নিবারণের কাঁচিতে ধার নেই, তাই অপূর্ণই থেকে গেছে অলকার সব সাধ।

আজ রাতে আর একার জন্য রান্নার হাঙ্গামা করেনি অলকা। এক বাটি মুড়ি, আর বেচুর দোকান থেকে কিনে আনা আলুর চপ খেয়ে ঝামেলা মিটিয়েছিল। নিবারণ আর রুনু ও-বাড়ি থেকে ফিরে আসার পর দেখে, ওদের হাত দিয়ে মায়ের জন্য রকমারি খাবার পাঠিয়েছে বিউটি। সব কিছু তুলে রেখেছে অলকা। নিবারণও গল্প জমাতে চেয়েছিল মেয়ের বাড়ির প্রশংসা করে। অলকা সেখানেও পাত্তা দেয়নি। নিরুত্তাপ গলায় বলেছে, “রাত হল, ঘুমোও...”

মাথার উপর ঘট ঘট শব্দ করে ঘুরে চলেছে পুরনো পাখাটা।

এখন একাই বসে আছে অলকা ঘরের রোয়াকে। চতুর্দশীর চাঁদ উঠেছে আকাশ জুড়ে। আগামী কাল পূর্ণিমা। শীতল, স্নিগ্ধ জ্যোৎস্না এসে লাগছে অলকার মুখে-চোখে। বড় শীতল অনুভূতি। লোডশেডিং হওয়ায় কখন যেন বন্ধ হয়ে গেছিল পাখাটা। বদ্ধ ঘরের বিছানায় অনেক ক্ষণ ধরে এ পাশ-ও পাশ করে শেষে বাইরে উঠে এসেছে। অনেক দূরের কোনও এক গাছের ডালে বসে ঘুটঘুট করে প্যাঁচা ডাকছে। অলকার হাতের তালপাতার পাখাটা মাঝে মাঝে নড়ছে। কিছু সময় পরে কাঁধের উপর নিবারণের হাতের স্পর্শ অনুভব করল অলকা।

“ঘুমোওনি যে?”

“ঘুম ভেঙে গিয়ে দেখি তুমি নেই। তাই উঠে এলাম।”

নিবারণ বসে পড়ে অলকার কাছ ঘেঁষে। তালপাতার পাখাটার গতি বাড়ে। নিবারণকে অবাক করে দিয়ে অলকা কেমন আনমনা গলায় বলে ওঠে, “হ্যাঁ গো, বিউটির শ্বশুরবাড়িতে ফিরিজ আছে?”

নিবারণ মনে করার চেষ্টা করল। খুব খাতির করে ওকে আর রুনুকে বসিয়েছিল জামাই। যে ঘরে বসেছিল, সেখানেই ফ্রিজ দেখেছিল নিবারণ। ওখান থেকেই ঠান্ডা জল বার করে কে এক জন দিল তো নিবারণদের।

“আর ঘর ঠান্ডা করার মেশিন আছে?” অলকা জিজ্ঞেস করল তালপাতার পাখাটা নাড়তে নাড়তে।

“তা আবার থাকবে না? বলে ছিলাম না, ছেলেদের অবস্থা ভাল! ছেলের বাবার ধান-চালের কারবার, আবার তেলকল খুলেছে। তুমি তখন শুধু শুধু মানা করলে। মেনে নিলে এত ঝামেলাই হত না।”

“আমরা মেনে নিলে ওরা যদি না মানত, তখন?” অলকার হাতপাখাটা থেমে গেল। নিবারণ উদাসীন দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে স্ত্রীর দিকে। অলকাকে সমুদ্রের জলের মতো দুর্বোধ্য লাগছে। ওর অন্তর দেখা যায় না! অলকা বলে চলে, “পারতে ওদের যুগ্যি আয়োজন করে মেয়ের বিয়ে দিতে? মেয়েকে সাজিয়ে দিতে পারতে? খাওয়াতে পারতে পঞ্চাশ-একশো বরযাত্রী?”

বোকার মতো চেয়ে থাকে নিবারণ। কথাগুলো কি সে ভাবেনি? না ভাবতে চায়নি? এক বারের জন্যেও কি তার মনে হয়নি, ভগবান যা করেন মঙ্গলের জন্য? না হলে অলকার জ্বলন্ত প্রশ্নগুলোর কোনওটারই উত্তর নেই কেন তার কাছে!

নিবারণের উত্তরের অপেক্ষা করে না অলকা, দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, “এই বেশ ভাল হল। অন্তত, অশান্তির চোটে ভাল ছেলেটা তো হাতছাড়া হল না বিউটির কপাল থেকে!”

নীরবে ফের পাখার বাতাস করতে শুরু করল অলকা। মৃদু বাতাস, অথচ শান্তি-ভেজা। অলকা জিজ্ঞেস করে, “ওদের ক’তলা বাড়ি গো?”

“দোতলা,” বলে নিবারণ।

“বিউটির ঘরটা দেখলে নাকি? পাথরের মেঝে, তাই না?...”

কথায় কথায় আকাশের চাঁদটা যেন আরও বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। বিশাখা বৌদির দোকানের ক্রিম মেখে বিউটি যেমন উজ্জ্বল হতে চেয়েছিল, তেমন উজ্জ্বল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন