নায়িকা সংবাদ

আমজনতার জন্য বানানো হলেও আভাঁ গার্দ বাংলা সিনেমা কেন শহরের সাড়ে সতেরোটা মাল্টিপ্লেক্সের বাইরে কেউ দেখে না, পরদাপ্রথা ভেঙে ছোট পরদার জনপ্রিয় শো’য় নতুন সিনেমার বড় নায়িকাদের আবির্ভাব দেখেই স্পষ্ট বোঝা গেল।

Advertisement

সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:০০
Share:

আমজনতার জন্য বানানো হলেও আভাঁ গার্দ বাংলা সিনেমা কেন শহরের সাড়ে সতেরোটা মাল্টিপ্লেক্সের বাইরে কেউ দেখে না, পরদাপ্রথা ভেঙে ছোট পরদার জনপ্রিয় শো’য় নতুন সিনেমার বড় নায়িকাদের আবির্ভাব দেখেই স্পষ্ট বোঝা গেল। দু’পা হাঁটলে হাঁপ ধরে, কিন্তু নিয়ম করে ম্যারাথন দৌড়ে ফাটিয়ে দিচ্ছি, দাবি করলে পাবলিক প্যাঁক দিয়ে পিতৃদেবের নাম খগেন্দ্র করে দেবে, অক্ষরজ্ঞান নেই কিন্তু লেখক হতে চাই বললে কলেজ স্ট্রিটে ঢিঢি পড়ে যাবে, কিন্তু কতিপয় নায়িকাকে দেখলে পরিষ্কার বোঝা যায়, সিনেমায় এ সব সোজা হিসেব চলে না— যিনি দু’লাইন টানা বাংলা বলতে পারেন না, এবং ঢাক পিটিয়ে সে কথা সজোরে জানিয়ে দেওয়ার বুকের পাটা রাখেন, তিনিই শহুরে বাংলা সিনেমার হিরোইন। তিনি বাক্যের তেরোটা শব্দের মধ্যে এগারোটা বলেন ইংরিজিতে, বাকি দুটো আধো-আধো বোলে হিন্দি এবং বাংলায়, বাক্য শুরু করেন ‘সো’ দিয়ে, শেষ করেন ‘ইউ নো’ সহ। ইংরিজিতে এতই যখন দখল, তখন কোটপ্যান্ট বাগিয়ে সিধে হলিউড চলে গেলেই হয়, কিন্তু অভিনয় দক্ষতার কথা ছেড়ে দিলেও, এই ধাড়ি জিভে মার্কিনি অ্যাকসেন্ট আনা অসম্ভব, অগত্যা বাংলা নেটিভ জনসমাজের সামনেই জিভ ছুলতে বসা।

Advertisement

এখানে অবশ্যই কোনও বিশুদ্ধবাদিতার কথা হচ্ছে না। দু-চারটি বিদেশি শব্দ সব ভাষাতেই হরবখত ঢুকে পড়ে, এই লেখাও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু ‘হিজ লুক ইজ ঘটিয়া, বাটিয়া (but yeah), দা চাউনি ইজ গুড’ জাতীয় ঘটি-বাটি-হারানো বাক্য, ভাষায় স্রেফ দু’একটা বেআক্কেলে শব্দের আচমকা ঢুকে পড়া নয়। বরং যে ভাষায় কথা বলি, তাকে নাক সিঁটকে ‘ঠিক বলতে পারি না’ বলে ঘ্যাম চরিতার্থ করা, যে বাস্তবতায় বসবাস করি তাকে হরদম অস্বীকার করাই এখানে লক্ষ্য এবং মোক্ষ। এবং এই পুরো প্রক্রিয়াটার মধ্যে পশ্চিমের পায়ে পড়ে হ্যাহ্যা করার একটা ভঙ্গি আছে, নাগরিকত্বের নামে সেটাকে বিলকুল না দেখতে পাওয়ার যে গগনচুম্বী আকাটপনা চলছে, এ তারই রুপোলি সংস্করণ। বড় পরদার ‘নকল’ আর ছোট পরদার ‘আসল’ এখানে আলাদা কিছু না। পরদার আকার নির্বিশেষেই কতিপয় নায়িকারা সতত সুইট ইংলিশে খিস্তি দেন, ডিজাইনার আসবাবের জঙ্গলে বসবাস করেন। অভিনয় যে একটা সিরিয়াস বিষয়, র‌্যাম্পে মার্জারপনার সঙ্গে এর কিছু তফাত আছে, সেটা এঁদের দেখলে টের পাওয়া যায় না।

এবং শুনলে যতই গোসা হোক, মাল্টিপ্লেক্সের শহরতলি ছাড়ালেই যে বিস্তীর্ণ ওঁচাটে এলাকা, সেখান থেকে দেখলে এঁদের চিড়িয়াখানার জীবের মতই লাগে। যতই টিভিতে গ্যাঁট হয়ে বসুন, যতই উঁকি দিন পেজ থ্রি-তে, আপামর মূর্খ পাবলিকের কাছে দক্ষিণি রিমেক কিংবা ঘ্যানঘেনে টিভি সিরিয়ালও এঁদের কাজকর্মের চেয়ে কম অলীক। মাল্টিপ্লেক্সের অভয়ারণ্যের বাইরে বেরোলেই নতুন বাংলা সিনেমার গর্জন যে শেষ, তাতে বিন্দুমাত্র আশ্চর্যের কিছু নেই।

Advertisement

bsaikat@gmail.com

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement