ভরা নদ আর বিদ্যুতের তারে আটকে হাতির দল

অতি বৃষ্টিতে ভরা দ্বারকেশ্বর নদ। সেই নদের জল ঢেলেও কয়েকটি হাতি ওপারে গিয়েছিল। কিন্তু ইলেকট্রিক তারের বেড়ায় বিদ্যুতের ঝটকা খেয়ে তারা আর এগোতে পারেনি। তাই ফের নদ টপকে হাতির দল ফিরে এসেছে জয়পুর বনাঞ্চলে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৫ ০২:২৬
Share:

সেই তারের বেড়া। জয়পুরের উলিয়াড়ায় ছবিটি তুলেছেন শুভ্র মিত্র।

অতি বৃষ্টিতে ভরা দ্বারকেশ্বর নদ। সেই নদের জল ঢেলেও কয়েকটি হাতি ওপারে গিয়েছিল। কিন্তু ইলেকট্রিক তারের বেড়ায় বিদ্যুতের ঝটকা খেয়ে তারা আর এগোতে পারেনি। তাই ফের নদ টপকে হাতির দল ফিরে এসেছে জয়পুর বনাঞ্চলে। এমনই দাবি করছে বন দফতর। হাতিদের এ ভাবে পথ আটকাতে পেরে বন দফতর যেমন কিছুটা পরীক্ষায় পাস করার তৃপ্তি পাচ্ছে, ততটাই অসন্তুষ্ট হাতি উপদ্রুত এইসব এলাকার বাসিন্দারা।

Advertisement

দিন কয়েক আগে মেদিনীপুর হয়ে বাঁকুড়ার জয়পুরে ঢোকা ন’টি হাতির দল তাই আটকে পড়েছে জয়পুর বনাঞ্চলের গ্রামগুলিতে। এতে বাড়ছে ক্ষয়ক্ষতির বহর। ক্ষোভ ছড়াচ্ছে নদের এ পারের গ্রাম গোঁসাইপুর, মোবারকপুর, বাসানিপাড়া, তাঁতিপুকুর, সাটপুকুর ইত্যাদি গ্রামে। শুক্রবার রাতে গোঁসাইপুর রত্নেশ্বর হাইস্কুলে হামলা চালায় ওই হাতিরাই। দলের মধ্যে দু’টি হাতি স্কুলের জানলা ভেঙে মিড-ডে মিলের চাল সাবাড় করে গিয়েছে। স্কুল লাগোয়া হস্টেলও প্রায় ঘিরে ফেলেছিল দলের বাকি হাতিরা। তাতে আতঙ্কে হস্টেলের ছাত্রেরা ছাদে উঠে চিৎকার করে লোক ডেকে আনে। তাড়া খেয়ে হাতিরা কোনওক্রমে ফিরে যায়। কিন্তু এলাকা ছাড়েনি। শনিবার রাতেই ওই দলটি লাগোয়া সাটপুকুর গ্রামে ঢুকে ভাঙচুর চালায়। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামবাসীরা বনকর্মীদের ঘিরে বিক্ষোভও দেখান।

বন দফতরের জয়পুর রেঞ্জের আধিকারিক মনোজ যশের দাবি, ‘‘দ্বারকেশ্বর নদে জল বাড়লেও ওই দলের কয়েকটি হাতি ওপারে গিয়েছিল। কিন্তু বিদ্যুৎবাহী তার পেরিয়ে ওরা যেতে পারেনি। ফলে ভয় পেয়ে এ পাড়েই ফিরে এসেছে হাতির দলটি। স্বাভাবিক কারণেই আমাদের এলাকায় ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে। শনিবারও ঘরবাড়ি ভাঙায় সাটপুকুর গ্রামে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে আমাদের। এখন হাতিগুলিকে নির্দিষ্ট রুট এড়িয়ে কোনদিকে নিয়ে যাওয়া যায় সে নিয়ে চিন্তায় পড়েছি আমরা।”

Advertisement

ইলেকট্রিক তারের বেড়া দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন রাধানগর রেঞ্জের আধিকারিক অলোক আচার্য বলেন, “আমাদের এলাকায় হাতির হামলায় ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছিল দিনের পর দিন। তাই পরীক্ষামূলক ভাবে পানেরডাঙর থেকে পাতলাপুর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার এলাকায় ইলেকট্রিক তারের বেড়া দেওয়া হয়েছে। তাতে কিছুটা কাজ হয়েছে। কতদিন এই বেড়া অক্ষত থাকে সেটাই এখন দেখার।” এ দিকে ওই ইলেকট্রিকের বেড়া নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছে জয়পুর বনাঞ্চল এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে। তাঁদের আশঙ্কা, ওই ইলেকট্রিক তারের বেড়ায় এই ছোট দলটি আটকে পড়ে যথেচ্ছ তাণ্ডব চালাচ্ছে এলাকায়। আর কিছুদিনের মধ্যে দলমার বড় হাতির দলটি ঢুকবে। তারাও বাধা পেয়ে ফিরে এলে আমাদের এলাকায় বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। বন দফতরকে বিষয়টি দেখতে বলেছি।

তবে ওই বেড়ায় কিছুটা ফাঁকও রয়েছে। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, ওই ইলেকট্রিকের বেড়ার মধ্যে উলিয়াড়া গ্রামের কাছে কিছুটা ফাঁক থাকায় দুই রেসিডেন্ট দাঁতাল সম্প্রতি জয়পুর থেকে সোনামুখীতে ঢুকে পড়েছে। শনিবার রাতে সেই দুই দাঁতাল সোনামুখীর কল্যাণপুর গ্রামে একটি দোকান ও দু’টি বাড়িতে ভাঙচুর চালায়। সোনামুখীর রেঞ্জ অফিসার সুভাষ সরকার বলেন, “সম্ভবত জয়পুরে আসা হাতির দলের তাড়া খেয়ে এই দু’টি হাতি আমাদের এলাকায় চলে এসেছে। কল্যাণপুর গ্রামে শনিবার রাতে একটি দোকান ও দু’টি বাড়ি ভাঙার অভিযোগ পেয়েছি। বনকর্মীদের এই দুই হাতির দিকে বিশেষ নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement