সেই বিতর্কিত ফেসবুক পোষ্ট।
ফাঁদ পেতে ধরে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছিল মেছো বিড়ালটিকে। তার পরে রক্তাক্ত প্রাণীটিকে নিয়ে, কখনও দাঁড়িয়ে কখনও বা হাঁটু মুড়ে বসে বেশ কয়েকটা ছবি পোস্ট করা হয়েছিল ফেসবুকে। দিন কয়েক আগে সে ছবি নজরে পড়ায় তদন্ত শুরু করে বন দফতর। ফেসবুকের ছবির সূত্র ধরেই বুধবার হাওড়ার জগৎবল্লভপুরের বামনপাড়া থেকে পাঁচ যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশের হাতে তুলে দিল বন দফতর।
জিম্বাবোয়ের জাতীয় উদ্যানে একটি সিংহ শিকার করে একই ভাবে ছবি-সহ নিজের ‘বীরগাথা’ পোস্ট করে বিতর্ক ছড়িয়েছিলেন ওয়াল্টার পামার। জিম্বাবোয়ের পশুপ্রেমীদের কাছে লুইস নামে ওই সিংহটি শুধু জনপ্রিয় নয়, ছিল অন্যতম পর্যটন আকর্ষণও। পেনসিলভেনিয়ার ওই চিকিৎসকের লুইস-শিকারের বিরুদ্ধে তাই বিশ্ব জুড়ে উঠেছিল প্রতিবাদের ঝড়। ক্ষোভ থিতিয়ে যাওয়ার আগে, গত শনিবার সেই তালিকায় নাম তুলে ফেলেছিলেন আমেরিকার ইডাহো বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্ট্যান্ট সাব্রিনা কর্গটেলিও। জিরাফ শিকার করে, পাশে দাঁড়িয়ে ফেসবুকে পোস্ট করা তাঁর ছবির নিচে ওই ‘বীরাঙ্গনা’ লিখেছেন—‘জিরাফেরা বড় ভয়ঙ্কর!’
আফ্রিকার বিভিন্ন প্রান্তে এই হনন-উল্লাসের সুতোয় এ বার জড়িয়ে গেল হাওড়ার জগৎবল্লভপুর। তবে, হাওড়ার বনাধিকারিক ফাল্গুনী মল্লিকের দাবি, ‘‘এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হল, ফেসবুকে ছবির সূত্র ধরে আমরা পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছি। আফ্রিকায় সেটা হয়নি।’’
মেছো বিড়াল পশ্চিমবঙ্গের ‘রাজ্য পশু’। বছর কয়েক আগেও সুন্দরবনের বাদাবন ছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন জলা-জঙ্গলে তাদের দেদার দেখা মিলত। এমনকী, কলকাতার লাগোয়া ভেড়ি এলাকাতেও মেছো বিড়ালের উপস্থিতি ছিল। কিন্তু বছর দশেক ধরে, কংক্রিটের জঙ্গলের দাপটে শহরতলি, মফস্সল থেকেও হারিয়ে গিয়েছে জলাজমি। উধাও হয়ে গিয়েছে মেছো বিড়ালও।
বন দফতরের খবর, হাওড়ার ওই অঞ্চলে এবং হুগলির কোন্নগর-হিন্দমোটর এলাকায় এখনও রয়ে গিয়েছে মেছো বিড়ালেরা। ধৃতেরা জানায়, জুন মাসের গোড়ায় বামনপাড়া এলাকায় ওই মেছো বিড়ালটিকে ধরে পিটিয়ে মেরেছিল তারা। তাদের এক পরিচিত ছবি তুলে তা পোস্ট করেছিলেন ফেসবুকে। এ দিন বন্যপ্রাণী দফতরের সদর দফতর এবং হাওড়া ডিভিশনের কর্মীরা যৌথ ভাবে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করেন ওই পাঁচ যুবককে।