Dipa Karmakar

গভীর অনিশ্চয়তায় দীপার কেরিয়ার, এই মুহূর্তে অলিম্পিক্স নিয়ে ভাবছেনই না কোচ

এই মুহূর্তে রাজধানীতে রিহ্যাব চলছে দীপার। আরও মাসখানেক পর ফিট সার্টিফকেট হাতে আসার একটা ভাসাভাসা খবর রয়েছে। কিন্তু তা নিয়েও থাকছে ধোঁয়াশা। ফলে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছেন অলিম্পিকের যোগ্যতা অর্জনের দৌড়ে।

Advertisement

সৌরাংশু দেবনাথ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১০:১৯
Share:

দীপা কবে ফিট হবেন, তা নিয়ে রয়েছে ধোঁয়াশা। ফাইল ছবি।

জিমন্যাস্টিক্স নয়, আগে জীবন! বাতাসে যতই আগমনী সুর ভেসে বেড়াক, তা দীপা কর্মকারের কানে বাজছে না। অনিশ্চয়তার বেড়াজালেই যে আপাতত বন্দি তিনি।

Advertisement

পরের বছর টোকিয়ো অলিম্পিক। কোথায় তিনি যোগ্যতা অর্জনের লড়াইয়ের প্রস্তুতিতে ঘাম ঝরাবেন, তা নয়। সেই মরিয়া তাগিদের থেকেও এখন বেশি জরুরি ফিট হয়ে ওঠা। ঝুঁকি নিয়ে চটজলদি প্রত্যাবর্তনের রাস্তায় গেলে যে বিপদ বাড়ার আশঙ্কাই বেশি। চুম্বকে, দীপার জীবনে প্রিয় জিমন্যাস্টিকের চেয়েও প্রাধান্য পাচ্ছে চোট-মুক্ত জীবন।

এই মুহূর্তে রাজধানীতে রিহ্যাব চলছে দীপার। ঠিকানা মাঝে মাঝে বদলে হয়ে উঠছে মুম্বইও। ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দিন দশ-বারো করে থাকছেন দুই জায়গায়। মুম্বইয়ের ডাক্তার অনন্ত যোশীর তত্ত্বাবধানে রয়েছেন বলে যেতে হচ্ছে সেখানে। আর নয়াদিল্লিতে ব্যক্তিগত ফিজিয়োর সঙ্গে খাটাখাটনি চলছে সময়কে হার মানানোর। ক্যাটক্যাটে বাস্তবের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টাও থাকছে পাশাপাশি। যাতে অলিম্পিকের দরজা বন্ধ হয়ে গেলেও মাথায় আকাশ ভেঙে না পড়ে।

Advertisement

আরও পড়ুন: বিশ্বকাপের আগে প্রমাণ করো নিজেদের, কড়া বার্তা কোহালির

মুশকিল হল, কোনও কিছুই পরিষ্কার নয় এখনও। আরও মাসখানেক পর ফিট সার্টিফকেট হাতে আসার একটা ভাসাভাসা খবর রয়েছে। ডাক্তারের তরফ থেকে তেমন ইঙ্গিতই দেওয়া হয়েছে। তবে সেটাকেই আঁকড়ে ধরে থাকা হচ্ছে না। যদি মাসখানেকের বেশি সময় লাগে, তখন তো গ্রাস করতেই পারে যন্ত্রণা। তার হাত থেকে বাঁচার সুরক্ষাবলয় তৈরি রাখা সেজন্যই দরকার। কোচ বিশ্বেশ্বর নন্দী মোবাইলে আনন্দবাজার ডিজিটালকে আগরতলা থেকে তাই বললেন, “ডাক্তার বা ফিজিয়োর উপর দিয়ে আমি যাব না। আমি কোচ, সেটা করা উচিতও না। তাড়াহুড়োর দরকার নেই। শুধু স্পোর্টস লাইফ না, দীপার সেকেন্ড লাইফের কথাও আমাকে চিন্তা করতে হবে।”

কোচের সঙ্গে দীপার এই দৃশ্য ফের দেখা যাবে তো? ফাইল ছবি।

মোদ্দা কথা হল, দীপা কবে সুস্থ হয়ে উঠবেন, তা নিশ্চিত নয়। কবে অনুশীলন শুরুর অবস্থায় আসবেন, অনিশ্চিত সেটাও। প্রোদুনোভা ভল্ট বাদই দিন, অন্য ভল্টই বা কবে দিতে দেখা যাবে, সেটাও বলার মতো অবস্থা নেই। ফলে, অলিম্পিকের যোগ্যতা অর্জনের মান ক্রমশ কঠিন যতই হয়ে উঠুক, হাত যতই নিশপিশ করুক, মন যতই ছুটে এসে লাফানোর ছবি কল্পনা করুক, রুক্ষ বাস্তবে তা চুরমার হয়ে পড়ছে। সামনে কোনও লক্ষ্য টাঙিয়ে তৈরি হওয়ার ব্যাপারই থাকছে না। কারণ, কবে ফিট সার্টিফিকেট হাতে আসবে, ধোঁয়াশা সেখানেই।

আর যা নিয়ে বিন্দুমাত্র ধোঁয়াশা নেই, তা হল, যখনই সুস্থ হয়ে উঠুন না কেন, ফের চোটের ঝুঁকি নেওয়া নৈব নৈব চ। কোনও ভাবেই দীপার আশপাশে চোটের প্রবেশাধিকার যেন না ঘটে। তাতে অলিম্পিকে অংশ নেওয়া যদি ফসকে যায় তো যাবে। কোচের কথায়, “এখন কিছুই বলার জায়গায় নেই। যতক্ষণ না ডাক্তার আর ফিজিয়ো মাঠে নামানোর কথা বলবে, আমি নিজে থেকে কিছু করব না। দীপার লাইফটাকে আগে দেখব। রিকভারি আগে দেখব। সবকিছু আগে খতিয়ে দেখব। তারপর কবে অনুশীলন শুরু করা যায়, সেই সিদ্ধান্তে আসব। আমি তাই এখন একদম চুপচাপ বসে আছি। ডাক্তার যে পরামর্শ দেবেন, তা মেনে এগোব।”

আরও পড়ুন: বাইশ নম্বর বিশ্বখেতাব, বিশ্বের খেলাধুলোর মানচিত্রেও বিরল পঙ্কজের ধারাবাহিকতা​

তিন বছর আগে রিও অলিম্পিকে অল্পের জন্য পদক হাতছাড়া হয়েছিল দীপার। তবে পদক না জিতলেও জিমন্যাস্টিক দুনিয়ায় নজর কেড়েছিলেন অসমসাহসী প্রোদুনোভা ভল্টে। গত বছর এশিয়াডে চোট পেয়েছিলেন তিনি। গত মার্চে আজারবাইজানের বাকুতে হওয়া বিশ্বকাপে হাঁটুতে চোট পাওয়ার পরই কার্যত ছিটকে গিয়েছেন। জুনে মঙ্গোলিয়ায় এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে পারেননি। অক্টোবরে জার্মানিতে হতে চলা বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেও তিনি নেই। হুট করে যে ফিট হওয়ার পর টোকিয়ো অলিম্পিকে নামার যোগ্যতা অর্জন করে ফেলবেন, ব্যাপারটা তা নয়। আটটি বিশ্বকাপের সেরা তিন জন অলিম্পিক্সে নামার সুযোগ পাবেন। ফলে সেই পথে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছেন ত্রিপুরার বঙ্গতনয়া। কোচের গলাতেও কি হতাশা? তাঁর স্বীকারোক্তি, “হ্যাঁ, টাফ হয়ে উঠছে অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার ব্যাপারটা। তবে সেটা না হলেও কিছু করার নেই।”

বাকুতে নতুন শেখা ভল্টে সাফল্য পেয়েছিলেন দীপা। ‘ব্যাক ৭২০ টার্ন’ ভল্টের সঙ্গে পুরানো ‘হ্যান্ড ফ্রন্ট ৫৪০ টার্ন’ দিয়েছিলেন তিনি। যখনই ফিট হোন, রিহ্যাবের পর কোন ভল্টের প্রস্তুতিতে ঘাম ঝরাবেন দীপা? কোচের কথায়, “প্রোদুনোভাতে আর যাব না। ওটা খুব হার্ড ভল্ট। ওর হাঁটুতে মারাত্মক চাপ পড়বে। আগে ফিট হোক, তারপর দেখা যাবে।” বোঝা গেল, যে ভল্ট বিখ্যাত করেছে, চিরতরে সেটাও ছেঁটে গিয়েছে দীপার জীবন থেকে।

রিও অলিম্পিকে প্রোদুনোভা ভল্টে চমকে দিয়েছিলেন দীপা। ফাইল ছবি।

বাকুতে পাওয়া চোটের জন্য আক্ষেপ তাই বাড়ছে। বিশ্বেশ্বরের কথায়, “ওখানে গিয়েও ও বেশি চোট পেয়ে গিয়েছিল। তারপর দোহাতে একটা প্রতিযোগিতায় যাওয়ার কথা ছিল। বাকু থেকেই আমরা সোজা দিল্লি চলে আসি। লিগামেন্টে লেগেছিল। ডাক্তার দেখে অনেক এক্সরে-এমআরআই করেছিল। তারপর থেকে রিহ্যাব চলছে।” দমবন্ধকরা কয়েক মাসের মধ্যেও অবশ্য স্বপ্নের বিসর্জন ঘটছে না পুরোপুরি। নেপথ্যে তা থাকছে। কোচ বলেই দিলেন, “আমরা তো আশা ছাড়িনি। বছরের শেষেও অনেক টুর্নামেন্ট রয়েছে। আমরা তখন ফেডারেশনের সঙ্গে বসব, বিশেষজ্ঞদের মতামত নেব, তারপর ঠিক করব। তবে পুরনো পারফরম্যান্সে ফিরতে হলে প্র্যাকটিস দরকার কিছুদিন। যা সাবধানে করাতে হবে।” পুরোদমে অনুশীলনে নেমে পড়া নয়, ধীরে ধীরে এগোনোর কথাই মাথায় রাখতে হচ্ছে। সঙ্গী হচ্ছে সতর্কতা।

এক ঝলকে, এই শরত মোটেই শিউলি, কাশফুল, ঢাকের বাদ্যিতে মিশে আসছে না। বরং অনিশ্চয়তার কঠিনতম চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। দীপা হাল ছাড়ছেন না, চোট সারানোতেই দিচ্ছেন মন। আর তাতেও যদি সময়ে ফিট না হওয়া যায়, অলিম্পিক পদক যদি অধরা মাধুরী হয়েই থেকে যায়? প্রিয় ছাত্রীকে এটাই বোঝাচ্ছেন বিশ্বেশ্বর যে জিমন্যাস্টিকেই শেষ নয়, তার পরেও কিছু বেঁচে থাকে জীবন!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন