Yashasvi Jaiswal

‘পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, নিজেকে বলি, পারতেই হবে’

যুব বিশ্বকাপ এখন অতীত হলেও রয়ে গিয়েছে তার রেশ। প্রিয়ম গর্গের ভারত চ্যাম্পিয়ন না হলেও ক্রিকেটমহলের মন জিতেছেন বাঁ-হাতি ওপেনার। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে যে ছন্দে ব্যাট করেছিলেন, তা আত্মবিশ্বাস বাড়াচ্ছে।

Advertisement

সৌরাংশু দেবনাথ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১২:৪৬
Share:

যশস্বী জয়সওয়াল কি আগামী দিনের তারকা হয়ে উঠতে পারবেন? —ফাইল চিত্র।

অনূর্ধ্ব-১৯ থেকে অনূর্ধ্ব-২৩। জাতীয় দল থেকে ঘরোয়া ক্রিকেট। ভারত থেকে মুম্বই।

Advertisement

পাল্টে গিয়েছে আবহ! বদলে যাচ্ছে প্রতিযোগিতা, দল, সতীর্থও। একই রকম থাকছে শুধু ফোকাস। বাড়ছে বরং জেদ। যুব বিশ্বকাপের সেরা ক্রিকেটার যশস্বী জয়সওয়ালের পৃথিবীটা এ রকমই।

শনিবার থেকে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে কর্নেল সিকে নাইডু ট্রফির কোয়ার্টার ফাইনালে পুদুচেরির বিরুদ্ধে নামলেন যশস্বী। মুম্বই দলে এ বার তাঁর সতীর্থরা হলেন অর্জুন তেন্ডুলকর, সরফরাজ খানের মতো পরিচিতরা। তার আগে আনন্দবাজার ডিজিটালকে সাফ বললেন, “বিশ্বকাপ এখন অতীত। সামনের প্রতিযোগিতায় মন দিচ্ছি। অনূর্ধ্ব-২৩ প্রতিযোগিতার জন্য খেটেছি। এটাতেও সফল হতে চাই।”

Advertisement

যুব বিশ্বকাপ এখন অতীত হলেও রয়ে গিয়েছে তার রেশ। প্রিয়ম গর্গের ভারত চ্যাম্পিয়ন না হলেও ক্রিকেটমহলের মন জিতেছেন বাঁ-হাতি ওপেনার। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে যে ছন্দে ব্যাট করেছিলেন, তা আত্মবিশ্বাস বাড়াচ্ছে। যশস্বী বললেন, “বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি রান করতেই হবে, এমন জেদ ছিল। কোচ জ্বালা স্যারও সেটাই বলেছিলেন। সেই চেষ্টাই করে গিয়েছি। মাথায় রেখেছিলাম যে, ধারাবাহিক থাকতে হবে। আমার নিজের মধ্যেও ভাল করার, দেশের হয়ে সাফল্য ছিনিয়ে আনার বাড়তি তাগিদ ছিল।”

আরও পড়ুন: রাহানেকে ভরসা না করেই রান আউট পন্থ, বলছেন বিশেষজ্ঞরা​

বিশ্বকাপের ফাইনালে বাংলাদেশের কাছে পরাজয় সেই কারণেই যন্ত্রণা বাড়াচ্ছে। যশস্বী একক লড়াই জারি রেখেছিলেন একপ্রান্ত থেকে। কিন্তু, উল্টোদিক থেকে কোনও সাহায্য পাননি। সেই হতাশা এখনও রয়েছে, “বিশ্বকাপ হাতে তোলার স্বপ্ন সবারই থাকে। আমাদেরও ছিল। ফাইনালে সবাই চেষ্টা করেছিলাম। তবে প্রতিদিন তো কেউ সফল হতে পারে না। যে দিন যার ব্যাটে-বলে হয়, তাকেই বাড়তি দায়িত্ব নিতে হয়। আমিও ভেবেছিলাম দলকে ভদ্রস্থ জায়গায় পৌঁছে দেব! (একটু থেমে) বিশ্বকাপ জিততে পারলে দারুণ হত। তবে এটাই তো ক্রিকেট। ভাল-মন্দ দুটোকেই মেনে নিতে হবে।”

পরের মাসেই আইপিএল। প্রায় আড়াই কোটি টাকায় তাঁকে নিলামে নিয়েছে রাজস্থান। এখন থেকেই রোমাঞ্চিত। বললেন, “এটাই প্রথম আইপিএল। নিজের সেরাটা দেব। আমার কাছে এটা দারুণ সুযোগ। বিশ্বের সেরা ক্রিকেটারদের সঙ্গে এক ড্রেসিংরুমে সময় কাটাব, ভাবতেই পারছি না। রীতিমতো রোমাঞ্চিত যে, স্টিভ স্মিথ, বেন স্টোকসদের থেকে অনেক কিছু শিখতে পারব। ওরা কী ভাবে প্রস্তুত হয়, কোন মানসিকতা নিয়ে নামে, জানতে পারব। তবে এখন সিকে নাইডু ট্রফিতেই মন দিচ্ছি। এর পর আইপিএলের জন্য আালাদা ভাবে পরিশ্রম করব।”

অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের আগেও কোচ জ্বালা সিংহের তত্ত্বাবধানে আলাদা করে ঘাম ঝরিয়েছিলেন। কিছু নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে তাঁকে অনুশীলন করিয়েছিলেন কোচ। কী ভাবে বাউন্সের উইকেটে ব্যাট করতে হবে, বাড়তি বাউন্স সামলাতে হবে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলত নেট। অ্যাস্ট্রোটার্ফেও ব্যাট করেছেন তিনি। লক্ষ্য ছিল একটাই, নানা ধরনের পিচকেও যেন অজানা-অচেনা না ঠেকে। আর তা লাগেওনি। আইপিএলের আগেও থাকবে তেমনই বিশেষ ধরনের নেট। যাতে প্রতিকূল পরিবেশেও সহজাত ব্যাটিং বেরিয়ে আসে।

যশস্বী অবশ্য নিজের জীবনেই দেখে ফেলেছেন অনেক প্রতিকূলতা। ১৮ বছর বয়সেই এগিয়েছেন ওঠা-পড়ার মধ্যে দিয়ে। মুখোমুখি হয়েছেন রুক্ষ বাস্তবের। উত্তরপ্রদেশ থেকে বাবার হাত ধরে মুম্বই এসেছিলেন ছোটবেলায়। একসময় বিক্রি করতে হয়েছে পানিপুরি। থাকতে হয়েছে তাঁবুতে। লড়াইয়ের বীজ তখনই ঢুকে পড়ে রক্তে।

সংগ্রামী সেই মেজাজই বাইশ গজে রাখে একমনা। যেন বলতে থাকে, কিছুতেই আউট হওয়া চলবে না। উইকেট দেওয়া চলবে না। হারলে চলবে না। জিততেই হবে। পুরনো সেই দিনে ফিরে গিয়ে বললেন, “জীবনে কোনও কিছুই সহজে আসেনি। সব কিছুর জন্যই কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে আমাকে। এই স্ট্রাগলই আমাকে মানসিক ভাবে শক্তপোক্ত করে তুলেছে। যে কোনও চ্যালেঞ্জের জন্য মনে মনে তৈরি থাকি সব সময়। পরিস্থিতি যাই থাক না কেন, নিজেকে বলি যে আমি ঠিক তা সামলে দেব, নিশ্চয়ই উতরে যাব। নিজের উপর ভরসা রাখি সব সময়। তা, যত চাপই থাকুক।”

এখন কমেছে চাপ। কোচের নজরে পড়ে জীবনে এসেছে স্বস্তি। বিশ্বকাপ সাফল্য তো পৌঁছে গিয়েছে আলোর বৃত্তে। যেখানেই যাচ্ছেন, লোকজন চিনছেন। বলাবলি হচ্ছে, যুব বিশ্বকাপের সেরা ক্রিকেটার। ডাক আসছে নানা অনুষ্ঠানেও। যেখানে গিয়ে দু’-চার কথা বলতেও হচ্ছে। লক্ষ্য থেকে সরে যেও না, তিনি অবশ্য এই একটাই বুলি আওড়াচ্ছেন।

কিন্তু, এত প্রচার, এই আলোড়ন, কোটিপতি হয়ে যাওয়া, কোথাও গিয়ে তাঁর ফোকাসও নড়িয়ে দিচ্ছে না তো? আশঙ্কা থাকেই। যুব পর্যায়ের চোখধাঁধানো সাফল্যের পর হারিয়ে যাওয়ার নজির এ দেশের ক্রিকেট সার্কিটেই কম নেই তো! যশস্বী অবশ্য ভরসা দিলেন। বললেন, “এগুলো সব সাময়িক। আমি কখনও এ সবে মন দিই না। আমাকে শুধু ক্রিকেট খেলতে হবে। অনেক দূর যেতে হবে। আরও প্র্যাকটিসে ডুবে যেতে হবে।”

বোঝা গেল, যশের পিছনে দৌড়চ্ছেন না যশস্বী। তাঁর পাখির চোখ উৎকর্ষে!

আরও পড়ুন: সৌরভ-মনোজকে ধন্যবাদ জানিয়ে ক্রিকেট থেকে অবসর নিলেন প্রজ্ঞান ওঝা​

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন