Terrorism

ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান, চ্যাট গ্রুপে জেহাদি বার্তালাপ

গ্রুপের নাম ‘গাজ়ওয়াতুল-হিন্দ’। উর্দুতে লেখা গ্রুপ আইকনের নিহিত অর্থ ‘ভারতের বিরুদ্ধে জেহাদ’।

Advertisement

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস

জলঙ্গি শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:১৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান থেকে শুরু করে স্থানীয় থানার পুলিশকর্মীর কোমরে কী ধরনের পিস্তল গোঁজা থাকে— তা নজরে আসছে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপটায় এক ঝলক চোখ বোলালে। গ্রুপের নাম ‘গাজ়ওয়াতুল-হিন্দ’। উর্দুতে লেখা গ্রুপ আইকনের নিহিত অর্থ ‘ভারতের বিরুদ্ধে জেহাদ’।

Advertisement

কেরলের এর্নাকুলামে আল কায়দা জঙ্গি সন্দেহে ধৃত মোশারফ হোসেন সে গ্রুপের অন্যতম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর। এনআইএ-র অন্দরের দাবি, জানা গিয়েছে, ওই গ্রুপে স্থানীয় মানুষজনকে যুক্ত করে জেহাদি পাঠ দেওয়ার দায়ভার পালন করছিল মোশারফের কলেজ পড়ুয়া ভাই আতিউর। মেধাবী যুবক, সুবক্তা, আবৃত্তিও মন্দ করে না। মধুবোনা গ্রাম থেকে শুক্রবার রাতে আতিউরকে গ্রেফতারের সময়ে তার ঘর থেকে গোয়েন্দারা উদ্ধার করেছিলেন স্বঘোষিত ধর্মগুরু জাকির নায়েকের একটি জেহাদি পুস্তক। মঙ্গলবার তার পরিবারের লোকজন বেশ গর্ব করে জানান, এ দেশে নিষিদ্ধ ওই জেহাদি ধর্মযাজকের বইটি আতিউর পুরস্কার হিসেবে পেয়েছিল আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হয়ে। এনআইএ-র এক কর্তার কথায়, ‘‘মুর্শিদাবাদের এক গ্রামাঞ্চলে আবৃত্তি-প্রতিযোগিতায় কেন এমন বই পুরস্কার দেওয়া হয়, তা নিশ্চয় স্পষ্ট!’’ গোয়েন্দাদের অনুমান, সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় জেহাদি কার্যকলাপ ছড়ানোর চেষ্টা এ ভাবেই হয়েছে।

হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপটি যে এ কাজেই ব্যবহার করা হত তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে তার জেহাদি কথা চালাচালিতে। তবে আতিউর সে গ্রুপে অনেক স্থানীয় যুবককে অ্যাড বা যুক্ত করে নিলেও তাঁদের অনেকেই যে ওই ধরনের কথোপকথন পছন্দ করছিলেন না তারও খোঁজ মিলেছে। মোশারফের বহরমপুরবাসী এক আত্মীয় যেমন বলছেন, ‘‘মোশারফকে বার বার বলেছি, এ সব আমার পছন্দ নয়। তোরা এ কাজ ভাল করছিস না। দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, বারুদ-বন্দুক নিয়ে এ সব কথা বলে নিজের বিপদ ডেকে আনিস না। আতিউরকেও ধমকেছিলাম। কথা শুনল কোথায়!’’ তাই মাস খানেক আগে নিজেই ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন তিনি। সেই তালিকায় আরও কয়েক জন রয়েছেন, যাঁরা গ্রুপের কথাবার্তা এবং ধর্মীয় গোঁড়ামি বরদাস্ত করতে না পেরে বেরিয়ে এসেছেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: জেএমবি-র ছাতা বদল, রাজ্যে এল আল কায়দা

মধুবোনা গ্রামের এক যুবকের কথায়, ‘‘আতিউর আমাকে না জানিয়েই ওই গ্রুপে যুক্ত করেছিল। দিন কয়েক দেখে কেমন বেঠিক লাগল। তাই কিছু না বলে বেরিয়ে এসেছি।’’ কালীনগরের এক মাঝবয়সীর কথায়, ‘‘আমাকে তো প্রায় জোর করেই আবু সুফিয়ান (যাকে গ্রেফতার করেছে এনআইএ) ওই গ্রুপে নিয়েছিল। দেখলাম ওরা দেশের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলছে। ওখানে থাকা যায় নাকি!’’

তবে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, মধুবোনা, কালীনগর, গঙ্গাদাসপাড়া, বসন্তপুরের এখনও অন্তত ২২ জন যুবক রয়ে গিয়েছে সে গ্রুপে। তারা কারা? এনআইএ তাদের উপরে নজর রাখছে বলেই খবর।

জেলার এক ইমাম বলছেন, ‘‘এ সবই অশিক্ষিত মানুষকে ধর্মের নামে বিপথে ঠেলে তাদের মগজ চিবিয়ে খাওয়ার চেষ্টা। জঙ্গি সংগঠনগুলি অসচেতন মানুষের মাথা মুড়িয়ে আদতে যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে বিপদে ফেলছে, এ কথাটা অনেকেই বুঝতে পারছেন না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন