Amit Shah

অক্টোবরে বঙ্গ বিজেপি-র সঙ্গে বিশেষ বৈঠকে অমিত শাহ

পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসতে চলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এই বৈঠকের তাৎপর্য নিয়েই শুরু হয়েছে জল্পনা।

Advertisement

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২১:১১
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি নিয়ে কি কেন্দ্রীয় সরকার কোনও বিশেষ অবস্থান নিতে পারে?

Advertisement

একটি আসন্ন বৈঠকের খবর উস্কে দিয়েছে এই প্রশ্ন। দিল্লিতে টানা তিন দিন ধরে বঙ্গ বিজেপি-র নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। সভাপতি জগৎপ্রকাশ নড্ডাও করেছেন বৈঠক করেছেন রাজ্য দলের শীর্ষনেতাদের সঙ্গে। কিন্তু সে সবের মাঝেই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছে আরও একটি বৈঠক। পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসতে চলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এই বৈঠকের তাৎপর্য নিয়েই শুরু হয়েছে জল্পনা।

অমিত এখন আর বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি নন। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার কিছুদিন পর তাঁর জায়গায় এসেছেন নড্ডা। ফলে সাংগঠনিক কাজকর্ম দেখভাল করা আর অমিতের কাজ নয়। সভাপতি পদে থাকাকালীন বাংলার দিকে বিশেষ নজর ছিল অমিতের। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে বাংলা থেকে অন্তত ২২ আসন জেতার লক্ষ্যমাত্রা তিনি ধার্য করে দিয়েছিলেন রাজ্যনেতাদের সামনে। ২২ না হলেও ১৮টি আসনে জিতেছিল বিজেপি।

Advertisement

লোকসভা ভোটের ফলাফল বাংলার বিষয়ে অমিতের উৎসাহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। এক সময় যেখানে বিজেপি-র পদচিহ্ন প্রায় ছিলই না, সেই উত্তর-পূর্ব ভারতের চার-চারটি রাজ্যে বিজেপি-র মুখ্যমন্ত্রী বসানো গেলে পূর্ব ভারতের বাংলা বা সুদূর দক্ষিণের কেরলেও সেটা সম্ভব— অমিত এমনটাই মনে করেন। লোকসভা ভোটে কেরল সে ভাবে সাড়া না দিলেও বাংলা নিরাশ করেনি বিজেপি-কে। তাই সভাপতি পদ থেকে সরে দাঁড়ালেও পশ্চিমবঙ্গের সাংগঠনিক কার্যকলাপ তিনি অনেকটাই দেখভাল করতে চান বলে দলকে জানিয়ে রেখেছিলেন অমিত। তাঁর সভাপতিত্বের সময় দলের জন্য যে জমি বাংলায় তৈরি হয়েছে, সেই জমি বিন্দুমাত্র হাতছাড়া হতে দিতে চান না তিনি। সেই তাগিদ থেকেই বাংলার বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে অমিত বৈঠক করতে চলেছেন বলে কলকাতার মুরলীধর সেন লেনের কর্তাদের ব্যাখ্যা।

‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতি অক্ষরে অক্ষরেই মেনে চলে বিজেপি। তাই যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে রয়েছেন, তাঁদের আর সাংগঠনিক কার্যকলাপে নাক গলাতে দেওয়া হয় না। ফলে সভাপতি পদ ছেড়ে যাওয়ার ৮-৯ মাস পরেও পশ্চিমবঙ্গে দলের সাংগঠনিক কার্যকলাপ নিয়ে যে উৎসাহ দেখাচ্ছেন মোদীর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তা বিজেপি-র নিজস্ব কাঠামোয় কিছুটা ব্যতিক্রমী বলে অনেকেই মনে করছেন। এই ‘ব্যতিক্রমী’ ছবির ব্যাখ্যাও অবশ্য বিজেপি-র অন্দরই মিলছে। হরিয়ানা এবং উত্তরপ্রদেশে প্রথম বার নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতার সরকার গঠন করা, উত্তর-পূর্ব ভারতে মিজোরাম ছাড়া বাকি সব রাজ্যে হয় বিজেপি বা বিজেপি জোটের সরকার গঠন করা— এই সব চোখধাঁধানো সাফল্য অমিতের সভাপতিত্বের মেয়াদেই দলের ঝুলিতে ঢুকেছে। এ সব রাজ্যের ভোটকে অমিত ব্যক্তিগত চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছিলেন বলেই বিজেপি নেতাদের দাবি। তাঁর চ্যালেঞ্জের তালিকায় বাংলার নাম ছিল বলেও বিজেপি সূত্রের খবর। কিন্তু ২০২১-এর বিধানসভা ভোট না মেটা পর্যন্ত সে চ্যালেঞ্জ পরিণতি পাচ্ছে না। অতএব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ সামলানোর পাশাপাশি বিজেপি নেতা হিসেবে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখিও অমিত দাঁড়াতে চান বলে ব্যাখ্যা বিজেপি-র একাংশের।

আরও পড়ুন: রাজ্যপাল ধনখড়ের বিরুদ্ধে থানায় গেল শিবসেনা

বঙ্গ বিজেপির নেতৃত্বের সঙ্গে আসন্ন বৈঠকে নিশ্চয়ই সাংগঠনিক বিষয় নিয়েই কথা বলবেন অমিত? রাজ্য বিজেপি-র অন্যতম সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুর কথায়, ‘‘সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে তো কথা হবেই। বিধানসভা নির্বাচন বেশি দূরে নয়। তার প্রস্তুতি এবং নানা কর্মসূচি নিয়ে কথা হবে।’’ দীপাবলির পর থেকে বাংলায় অমিত যে সব সভা শুরু করবেন, সেগুলির দিনক্ষণ নিয়েও ওই বৈঠকে আলোচনা হবে বলে সায়ন্তন জানিয়েছেন। সায়ন্তন জানিয়েছেন, শুধু রাজনৈতিক কর্মসূচি সংক্রান্ত আলোচনা নয়। প্রশাসনিক বিষয়েও কথা হতে পারে অমিতের বৈঠকে। পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকেই নানা অভিযোগ তুলে আসছে বিজেপি। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের পর থেকে গেরুয়া দলের সেই অভিযোগের স্বর তীব্রতর হয়েছে। বিধানসভা নির্বাচনের কাছাকাছি পৌঁছে সেই ইস্যুতে আরও কৌশলী বিজেপি। কয়েক দিন আগেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন বিজেপি-র রাজ্য নেতৃত্ব। সেখানে অভিযোগ করা হয়েছে, ‘পশ্চিমবঙ্গে তীব্র রাজনৈতিক হিংসা চলছে। রাজ্যে নির্বাচনের পরিস্থিতি নেই’। সায়ন্তনের কথায়, ‘‘আমরা তো অমিতজিকে আগেই জানিয়েছিলাম, পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত হিংসাত্মক এবং এখানে এখন নির্বাচনের পরিস্থিতি নেই। অমিতজি বৈঠক করলে সে বিষয়েও কথা হতে পারে।’’

আরও পড়ুন: ২৮ অক্টোবর থেকে তিন দফায় ভোট বিহারে, ফলাফল ১০ নভেম্বর

বিজেপি সূত্রের খবর, অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে বৈঠকটি হতে পারে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে বঙ্গ বিজেপি-র দায়িত্বপ্রাপ্ত তিন নেতা শিবপ্রকাশ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, অরবিন্দ মেনন এবং বঙ্গ বিজেপি-র চার শীর্ষনেতা দিলীপ ঘোষ, সুব্রত চট্টোপাধ্যায়, মুকুল রায় ও রাহুল সিংহও বৈঠকে ডাক পাবেন। এ ছাড়া রাজ্য বিজেপি-র কয়েকজন সহ-সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকও বৈঠকে থাকতে পারেন।

এই বৈঠকে কী আলোচনা হতে পারে, তা নিয়ে জল্পনা বাড়ছে। বিজেপি নেতা হিসেবে দলকে কী বার্তা দিতে পারেন অমিত শাহ? দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবেই বা কী অবস্থান তিনি নিতে পারেন ওই আলোচনার পরে, ঔৎসুক্য বাড়ছে তা নিয়েই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন