ফাইল চিত্র।
রাজ্যে করোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর পরিসংখ্যান নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়ে গেল। বিজেপির তথ্যপ্রযুক্তি শাখার প্রধান অমিত মালব্য-সহ দলের একাধিক নেতা ও সাংসদের অভিযোগ, বাংলার সরকার পরিকল্পিত ভাবে করোনা সংক্রমিত রোগী ও মৃতের সংখ্যা কমিয়ে দেখাচ্ছে। তার প্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা অভিযোগ, কোনও কোনও রাজনৈতিক দলের তথ্যপ্রযুক্তি শাখা স্বাস্থ্য দফতরের ‘ভুয়ো’ মেডিক্যাল বুলেটিন নিয়ে আসরে নেমেছে। তাঁর বক্তব্য, এখন রাজনৈতিক লড়াইয়ের সময় নয়।
মালব্য ও তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে ‘ভুয়ো তথ্য’ ছড়ানোর অভিযোগ রয়েছে ভূরি ভূরি। তবে গত দু’দিনে তাঁর যে টুইট ঘিরে চাপানউতোর বেধেছে, তা রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের করোনা সংক্রান্ত বুলেটিন। যেখানে ‘মৃতের সংখ্যা’ বলে কোনও তথ্যের উল্লেখ নেই। মালব্যদের বক্তব্য, স্বাস্থ্য দফতরের তরফে সোমবার রাতেও যে বুলেটিন দেওয়া হয়েছে, সেখানে মৃতের সংখ্যা দেওয়া নেই। করোনা আক্রান্ত ‘অ্যাকটিভ’ রোগীর সংখ্যা ৬১। মালব্যের সুরেই বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এ দিন মেদিনীপুরে অভিযোগ করেছেন, ‘‘করোনায় কত জন আক্রান্ত, কত জন মারা গিয়েছেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করা হচ্ছে। তথ্য গোপন করা হচ্ছে।’’ তাঁর মতে, তথ্য আড়াল করলে মানুষের মধ্যে ভয় বাড়বে।
এই পরিস্থিতিতেই এ দিন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘রাজনীতির সময় এটা নয়। কোনও রাজনৈতিক দলের আইটি সেল স্বাস্থ্য দফতরের মেডিকেল বুলেটিন ফেক করে রাস্তায় নামছে।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্রের কাছ থেকে সাহায্য না পেলেও প্রধানমন্ত্রীর ভিডিয়ো কনফারেন্সে ছিলাম। এলাকায় ব্যস্ত থাকলেও ৮ তারিখের ভিডিয়ো কনফারেন্সে এক জনকে থাকতে বলেছি। কেন্দ্রের তথ্য বার করলে ভাল হবে! ওদেরটা চ্যালেঞ্জ করলে ভাল হবে! রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঝগড়া করতে আসিনি। ফেক নিউজের ব্যবস্থা হবে।’’
আরও পড়ুন: অবিরাম ফোন, ত্রাণ মিলছে ‘দাদা’কে বলে
বিজেপির মতো উচ্চকিত সুরে না হলেও অন্য বিরোধীরাও তথ্য গোপন ও বিভ্রান্তি বন্ধ করার দাবি তুলছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, ‘‘বিশেষজ্ঞ কমিটি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত হয় বলেই তাঁদের কাজের স্বাধীনতা সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি নির্দেশিকায় মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান পদ্ধতি নির্দিষ্ট থাকলে বিশেষজ্ঞ কমিটির পক্ষে স্বাধীন ভাবে কাজ করা অসম্ভব। করোনাতে মৃতের সংখ্যা কমিয়ে দেখানোর প্রবণতা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।’’ বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানেরও বক্তব্য, ‘‘রাজ্যের পাশে দাঁড়িয়ে আমরা কেন্দ্রীয় সাহায্যের দাবি করেছি। প্রকৃত তথ্য আড়াল করলে রোগের বিরুদ্ধে সার্বিক লড়াইয়েই অসুবিধা হবে।’’
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের মতে, কয়েক বছর আগে থেকে বাংলার সরকার ডেঙ্গি সংক্রান্ত তথ্য দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। রাজ্যের কাছে তথ্য চেয়ে বিমুখ হতে হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককেও। বিজেপি নেতারা করোনার ক্ষেত্রেও একই ঘটনার অভিযোগ তুলছেন। যদিও তৃণমূলের তরফে পাল্টা বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি (মালব্য) ‘ভুয়ো খবর’ ছড়ানোয় পিএইচডি করেছেন, তথ্যের সত্যতা নিয়ে তাঁর প্রশ্ন তোলা উচিত নয়!
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)