ছবি: পিটিআই।
সেতু ভাঙলেই শাস্তি! দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার-ইঞ্জিনিয়ারদের কোনওভাবেই না ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ২৮ জুলাই জলপাইগুড়ির একটি সেতু ভেঙে পড়াকে কেন্দ্র করে নয়া ফরমান মুখ্যমন্ত্রীর। সেই সূত্রেই পোস্তা বিবেকানন্দ ফ্লাইওভার এবং মাঝেরহাট সেতুভঙ্গের পর দায়িত্বপ্রাপ্তদের শাস্তির প্রসঙ্গ ফের উঠে এসেছে। মুখ্যসচিব রাজীব সিংহের কাছে নিজেই নোট দিয়ে সে প্রসঙ্গে রিপোর্ট চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
নবান্নের খবর,গত ২৮ জুলাই জলপাইগুড়ির বাগড়াকোটের কাছে জুরান্তি সেতু ভেঙে পড়ে। এমনই পরিস্থিতি হয় যে একটি লরি সেতুর ভাঙা অংশে ঢুকে পড়ে। দু’জনের প্রাণহানি হয়। সেই প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রী মুখ্যসচিবের উদ্দেশে একটি নোটে লিখেছেন,‘আমি জানলাম ২০১২ এর সেপ্টেম্বর মাসেও সেতুটি এক বার ভেঙেছিল। জানতে চাই, কোন সংস্থা সেতুটি তৈরি করেছিল, কারা এর রক্ষণাবেক্ষণ করে। কোন অফিসারের এই সেতুর উপর তদারকির ভার রয়েছে? কেন একই সেতু বার বার ভেঙে পড়ছে?’ এর পর মুখ্যমন্ত্রী সেতু ভাঙার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়ে তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট চেয়েছেন। কেন সেতু ভাঙল এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারদের ভূমিকা কি ছিল তা-ও জানাতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি সূত্রের জানা গিয়েছে, পূর্ত সতিব নবীন প্রকাশকে ঘটনার তদন্ত দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ। তবে মুখ্যমন্ত্রী তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট পেশ করতে বললেও তদন্ত এখনও চলছে বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে।
পূর্ত দফতর জানাচ্ছে, জুরান্তিতেই শেষ নয়, মুখ্যমন্ত্রী মাঝেরহাট এবং পোস্তা বিবেকানন্দ সেতুর ভেঙে পড়ার ক্ষেত্রেও দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়েছেন। মাঝেরহাট সেতু পূর্ত দফতরের তৈরি হলেও, বিবেকানন্দ সেতুটি কেএমডিএ’র তত্ত্বাবধানে তৈরি হচ্ছিল। মুখ্যসচিব দু’টির ক্ষেত্রেই পূর্ত সচিবকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ধাপে ধাপে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা গোটা দেশে
২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের মাঝেই পোস্তা বিবেকানন্দ সেতু ভেঙে পড়েছিল। সে সময় দুই সরকারি ইঞ্জিনিয়ারের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হলেও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও চার্জশিট জমা পড়েনি। হায়দরাবাদের একটি সংস্থার ১০ কর্মী-কর্তার বিরুদ্ধে মামলা করে চার্জশিট দেওয়া হলেও তাঁরা সবাই জামিন পেয়ে গিয়েছেন। ২০১৮-এর মাঝেরহাট সেতুভঙ্গের পরেও রাজ্য সরকার জানিয়েছিল, মেট্রো রেলের কাজের জন্যই সেতু দুর্বল হয়ে গিয়েছিল। সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ারদের সাময়িক শাস্তি হয় বলে সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে।
মাঝেরহাট সেতু ভাঙার পরই পূর্ত দফতরের অধীনে থাকা প্রায় ১৬০০ ছোট-বড় সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পৃথক ডিরেক্টরেট তৈরির ভাবনা হয়েছিল। প্রতি তিনমাস অন্তর সমস্ত সেতু পরিদর্শন করে ‘সমীক্ষা’ নামে পোর্টালে তা জমা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পূর্ত দফতর। কিন্তু সেই কাজেও ঢিলেমি দেখা গিয়েছে বলে খবর।