CAMPUSTOCAREER

নতুন কেরিয়ার, নতুন ভাবনা উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে

পড়ুয়াদের চাকরিক্ষেত্রের উপযোগী করে তোলার পথ খুঁজতে আলোচনায় শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষাবিদেরা।

Advertisement

মৌ চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০২০ ১২:৩৮
Share:

বেঙ্গল এডুকেশন লিডার্স সামিটঃ (প্রথম সারিতে) শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুরঞ্জন দাস, ফাদার ফেলিক্স রাজ এবং সৈকত মৈত্র। (দ্বিতীয় সারিতে) অনুপম বসু, তরনজিৎ সিংহ, শমিত রায় এবং সত্যম রায়চৌধুরী।

আগামী দিনের কেরিয়ারের মানানসই উচ্চশিক্ষা দানে কতটা প্রস্তুত বাংলা? বুধবার, ১২ অগস্ট বেঙ্গল এডুকেশন লিডার্স সামিট এ আলোচনার কেন্দ্রে ছিল এ বিষয়টাই। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই শুরু হল এবিপি এডুকেশন আয়োজিত ‘ক্যাম্পাসটুকেরিয়ার ২০২০’- আগামীর কেরিয়ার ও নতুন কোর্সের দিশা নিয়ে এক ওয়েবিনার সিরিজ।

Advertisement

এই ভার্চুয়াল আলোচনাচক্রের প্রধান বক্তা ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। প্যানেলের অন্য বক্তাদের মধ্যে ছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস, সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফাদার ফেলিক্স রাজ, ম্যাকাউট ওয়েস্ট বেঙ্গলের উপাচার্য সৈকত মৈত্র, এনআইটি দুর্গাপুরের ডিরেক্টর অনুপম বসু, জেআইএস বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা জেআইএস গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর তরনজিৎ সিংহ, অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা রাইস এডুকেশনের চেয়ারম্যান শমিত রায়, এবং সিস্টার নিবেদিতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সত্যম রায়চৌধুরী।

অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন আনন্দবাজার পত্রিকা ডিজিটালের সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামীর কেরিয়ারের জন্য প্রাসঙ্গিক দু’ধরনের পারদর্শিতা- টেকনিক্যাল দক্ষতা এবং মানবিক গুণাগুণের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ দিনের আলোচনার সুর বেঁধে দেন তিনি।

Advertisement

পার্থ চট্টোপাধ্যায়, শিক্ষামন্ত্রী

উন্নত মানের শিক্ষা থেকে পড়ুয়াদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা- মন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে এসেছে এমনই নানা প্রসঙ্গ।

সিএসসি- অতিমারী পরিস্থিতির কারণে কলেজ সার্ভিস কমিশনের ইন্টারভিউ নেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই যোগ্য প্রার্থীদের প্যানেলের সময়সীমা বাড়িয়ে দেওয়া হবে।

কর্মসংস্থান- জ্ঞান আহরণ এবং সেই জ্ঞানকে বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগ- দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা ও শিল্পক্ষেত্রের সংযোগ অবশ্যই প্রয়োজন, তবে তার আগে শেখাটা বেশি জরুরি। শিল্পক্ষেত্র যদি শিক্ষাগত প্রয়োজন নির্দিষ্ট করতে আমাদের সাহায্য করে, আমরা নিশ্চয়ই চাকরিক্ষেত্রের জন্য পড়ুয়াদের প্রস্তুত করে দিতে পারব। তবে তা সফল ভাবে করতে হলে শিল্পক্ষেত্র, শিক্ষাক্ষেত্র, বাণিজ্যিক ক্ষেত্র এবং বিশ্ববিদ্যালয়- সকলকেই হাতে হাত মিলিয়ে এগোতে হবে।

শিক্ষার মান বজায় রাখা- বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভাল শিক্ষক এবং পাঠ্যবস্তু, ল্যাবরেটরি, লাইব্রেরি ইত্যাদির নিরিখে যথাযথ পরিকাঠামো থাকা বাধ্যতামূলক। শিক্ষক নিয়োগ এবং পরিষেবা নীতি নির্দিষ্ট করার স্বাধীনতা তাদের অবশ্যই রয়েছে। তবে শিক্ষাদানের মান হতে হবে সরকারি বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলির সমতূল।

সুরঞ্জন দাস, উপাচার্য, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়

শিল্প ও শিক্ষাক্ষেত্রের মেলবন্ধনটাকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে। বাণিজ্যিক সংগঠনগুলির সাহায্য ছাড়া শিল্পক্ষেত্রের উপযোগী পাঠ্যক্রম নিশ্চিত করা শিক্ষাক্ষেত্র বা সরকার কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। প্রয়োজনীয় গবেষণার ক্ষেত্রেও শিল্পক্ষেত্রের আর্থিক সহায়তা আমাদের প্রয়োজন। আমদের আবিষ্কারগুলোকে উদ্ভাবনের জায়গায় পৌঁছে দিতেও তাদের সহায়তা জরুরি। এ ছাড়া, কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সায়েন্স বা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাকেই এগিয়ে রাখা হয়। তবে এটাও ভুললে চলবে না যে হিউম্যানিটিস বা সোশ্যাল সায়েন্সও কিন্তু যথেষ্ট সম্ভাবনাময়। তাই এই শাখার পড়ুয়াদের জন্যও সুযোগ ত্তৈরি করতে হবে আমাদের।

ফাদার ফেলিক্স রাজ, উপাচার্য, সেন্ট জেভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলায় বেশ কিছু শীর্ষ মানের বিশ্ববিদ্যালয় থাকা সত্ত্বেও এ রাজ্যের ছেলেমেয়েরা চাকরি খোঁজে বাংলার বাইরে। এ বিষয়টাতে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমার পরামর্শ- স্টার্টআপগুলোকে উৎসাহ দেওয়া যায়।

এ রাজ্যে এখনও শিল্প ও শিক্ষাক্ষেত্রের যোগাযোগ তেমন শক্তিশালী নয়। তাতে জোর দিতে হবে। অনেক ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা শেষ করেও চাকরির উপযুক্ত হয়ে ওঠে না। এ বিষয়টাতে নজর দিয়ে সমস্যা সমাধান করতে এবং পড়ুয়াদের উপযোগী পাঠ্যক্রম তৈরি করে দিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।

সৈকত মৈত্র, উপাচার্য, ম্যাকাউট বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গ

আমাদের পেশা-নির্ভর কোর্সের সংখ্যা চারগুণ বেড়েছে। চাকরির বাজারের চাহিদার মানানসই প্রায় ২০০ কোর্স রয়েছে আমাদের। শিল্পক্ষেত্রের চেহারা বদলাচ্ছে। গুরুত্ব থাকবে অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পে। ভবিষ্যতে অর্থনীতিও হতে চলেছে জ্ঞান-নির্ভর। এ ক্ষেত্রে বাংলা এগিয়ে আছে। নতুন যুগের কেরিয়ারের জন্য পড়ুয়াদের ভাবনাকে সাজিয়ে তুলতে হবে। আর তার জন্য চাই পেশা-নির্ভর কোর্স। তার জন্য মানুষের ব্যবহার, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে তা নিয়ে ধারণা গড়ে তুলতে পারলেই হবে। বিভিন্ন শাখার বিষয় একত্রে পড়ার সুযোগ এবং বুদ্ধিমত্তার যৌথ প্রয়োগ এর জন্য জরুরি।

অনুপম বসু, ডিরেক্টর, এনআইটি দুর্গাপুর

পেশা-নির্ভর শিক্ষার দুটো ভাগ রয়েছে- জ্ঞান এবং দক্ষতা। জ্ঞান বলতে স্রেফ পড়া নয়, বরং বিষয়টাকে বোঝা এবং বিস্লেষণ করতে পারা। আর দক্ষতা হল সেই জ্ঞানের বাস্তব প্রয়োগের নিরিখে। আমাদের এখন খোলামনে মৌলিক জ্ঞান এবং নতুন যুগের প্রযুক্তিকে সমান গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশিই মনে রাখতে হবে- শুধু ডেটা অ্যানালেটিকস বা আর্টিফিশিয়াল ইন্ট্যালিজেন্স নয়, জিও ইনফর্মেটিক্স বা বায়ো ইনফর্মেটিক্সের প্রয়োগের ক্ষেত্রেও যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে এ রাজ্যে।

তরনজিৎ সিংহ, আচার্য, জেআইএস বিশ্ববিদ্যালয় এবং গ্রুপ এমডি

বেসরকারি ক্ষেত্রে নতুন যুগের কোর্স মানেই ব্যয়সাপেক্ষ, এমন ভাবা ঠিক নয়। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা মেনেই আমাদের কোর্স ফি পরিকাঠামো তৈরি হয়েছে। ম্যাকাউট এবং এআইসিটিই-র অনুমতিসাপেক্ষেই আমাদের পেশা-নির্ভর কোর্সগুলো চালু করা হয়। আর বাছাই প্রক্রিয়াও চলে কঠোরভাবে নির্দেশিকা মেনেই। এআইসিটিই-র যাবতীয় নিয়ম মেনে চলার পাশাপাশি আমরা তিরিশটি মাপকাঠি অনুযায়ী আমাদের প্রত্যেক কর্মীর বার্ষিক মূল্যায়ন করি।

শমিত রায়, আচার্য, অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয় এবং চেয়ারম্যান, রাইস এডুকেশন

কোর্স সাজানো বা চালু করার কাজটা আমরা স্বাধীন ভাবেই করি। তবে সমস্যা হল, পেশাদার ডিগ্রি থাকা এখন আর এটা নিশ্চিত করতে পারে না যে ১০ বছর পরেও তার গুরুত্ব সমান থাকবে। তাই বরং পড়ুয়াদের একটা বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গী গড়ে দেওয়া ভাল। তা হলে ভবিষতের সব রকম চ্যালেঞ্জের জন্যই তারা তৈরি থাকবে।

তা ছাড়া শুধু নিজের পাঠ্যবিষয়টুকু জানাই যথেষ্ট নয়। সব শাখার সম্পর্কেই ওয়াকিবহাল থাকা জরুরি। কোর্সগুলোকে এ মন ভাবে সাজাতে হবে, যাতে হিউম্যানিটিস এবং প্রাথমিক বিজ্ঞান শেখারও সুযোগ থাকে।

সত্যম রায়চৌধুরী, আচার্য, সিস্টার নিবেদিতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও এমডি

কোভিড-১৯ পরিস্থিতি আমাদের এক লাফে ১০ বছর এগিয়ে দিয়েছে। এতকাল যে ডিজিটাল রূপান্তর আমাদের কল্পনার স্তরে ছিল, আখন তা আমরা বাস্তবে দেখছি। পুরোদস্তুর অনলাইন ক্লাস, ডিজিটাল ল্যাব, ডিজিটাল লাইব্রেরি এবং অনলাইন পাঠ্যক্রমের সুযোগ হচ্ছে এখন। শিল্প ও শিক্ষাক্ষেত্রের সংযোগ গড়ে তুলতে এখন একটা প্ল্যাটফর্ম চাই আমাদের। সেখানে শিক্ষা, শিল্প ও শিল্প সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা থাকবেন। আমরা ইতিমধ্যেই এমন একটা মঞ্চ গড়ার কাজ শুরু করে দিয়েছি।

এবিপি এডুকেশন আয়োজিত ক্যাম্পাসটুকেরিয়ার ২০২০ ওয়েবিনার সিরিজে নিখরচায় রেজিস্টার করুন এখানে

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন