Narendra Modi

মঞ্চে সৌরভ-পত্নী, হোমওয়ার্ক সঙ্গী করে অযোধ্যার পোশাকে পুজো-সূচনায় মোদী

প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে বার বার ধরা পড়েছে বাঙালি মানসকে স্পর্শ করার চেষ্টা। তিনি ভাষণ শুরু করেন বাংলায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২০ ১৬:০৫
Share:

ভার্চুয়ালে দুর্গাপুজোর উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রীর। ছবি ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।

রাজনীতির যোগ দুর্গোৎসবের সঙ্গে নতুন নয় এ বঙ্গে। কিন্তু সে যোগসূত্রে বৃহস্পতিবার নতুন মাত্রা যোগ করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দেবীর বোধনের দিন দেশের প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও দুর্গাপুজোর উদ্বোধন করছেন এবং আপামর বাঙালির উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছেন— এমন ঘটনা এই প্রথম। সেই বিরল ঘটনায় মোদী যে ভাবে রামমন্দিরের ভূমিপূজনের বেশে হাজির হলেন, তাতেও বিশেষ তাৎপর্য দেখছেন রাজ্য রাজনীতির কারবারিরা।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ নির্ধারিত ছিল বেলা ১২টায়। কিন্তু সল্টলেকে পূর্বাঞ্চলীয় সংস্কৃতি কেন্দ্রে (ইজেডসিসি) বিজেপি আয়োজিত দুর্গোৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যায় সকাল ১০টা থেকেই। রাজ্য বিজেপি-র প্রায় গোটা নেতৃত্ব সকাল থেকে হাজির ছিলেন ইজেডসিসি-তে। ছিলেন শিবপ্রকাশ, কৈলাস বিজয়বর্গীয়, অরবিন্দ মেননদের মতো কেন্দ্রীয় নেতারাও।

আধ্যাত্মিক চর্চা, ঢাকের বোলে বিশেষ নাচ, বাংলা গানের আসর-সহ নানা অনুষ্ঠানে মঞ্চ ঠাসা ছিল ১০টা থেকেই। তবে বিশেষ নজর কেড়েছে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের পত্নী ডোনা ও তাঁর দলের পরিবেশনায় ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। সৌরভের সঙ্গে বিজেপি শীর্ষনেতৃত্বের ‘সুসম্পর্ক’ নিয়ে রাজ্যের রাজনৈতিক শিবিরে বহুদিন ধরেই চর্চা চলছে। সৌরভকে সক্রিয় রাজনীতির ময়দানে অদূর ভবিষ্যতে দেখা যেতে পারে কি না, সে বিষয়েও আগ্রহ প্রবল। রাজনীতিতে গেলেও সৌরভ শীর্ষেই পৌঁছবেন— এই মন্তব্য করে ডোনা একবার সেই ঔৎসুক্য বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। বিজেপি-র দুর্গোৎসবের মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের আগে সেই ডোনার অনুষ্ঠানকে তাই অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: কবিতা-দুর্গাস্তবে পুজো উদ্বোধন, বাঙালিকে ছুঁতে চাইলেন মোদী​

দুর্গোৎসব উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রীর যোগদান ছিল ভার্চুয়াল। তবে মঞ্চে লাগানো বিশাল স্ক্রিনে তাঁর মুখ ভেসে উঠতেই ঢাক, শঙ্খধ্বনি এবং উলুধ্বনিতে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানো হয়। মোদীর ভাষণ শুরুর আগে রবীন্দ্রসঙ্গীতের অনুরোধ পৌঁছয় তাঁর সরকারের মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র কাছে। মঞ্চে বাবুলের গান চলাকালীন দিল্লিতে বসে মোদীকে তাল দিতে দেখা গিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে বার বার ধরা পড়েছে বাঙালি মানসকে স্পর্শ করার চেষ্টা। তিনি ভাষণ শুরু করেন বাংলায়। বাঙালির দুর্গাপুজোর পর্বে গোটা দেশ ‘বাংলাময়’ হয়ে ওঠে বলে মন্তব্য করেছেন। মোদীর কথায়, ‘‘দুর্গাপূজার উৎসব ভারতের একতা ও পূর্ণতার উৎসব। বাংলার দুর্গাপূজা ভারতের ভারতের পূর্ণতাকে এক নতুন ঔজ্জ্বল্য দেয়।’’

পরে হিন্দিতে চলে যান মোদী। তবে নানা ক্ষেত্রের বাঙালি কৃতীদের নাম স্মরণ করেন। বাংলা বরাবর ভারতকে পথ দেখিয়েছে বলে মন্তব্য করেন। আর মাঝেমধ্যেই উচ্চারণ করেছেন বাংলা কবিতার পংক্তি। কখনও ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে’, কখনও ‘মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নে রে ভাই’, আবার কখনও ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’ শোনা গিয়েছে তাঁর মুখে থেকে। দুর্গামন্ত্র উচ্চারণ করে তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন।

আরও পড়ুন: পুজোয় ভরসা ছাতা-বর্ষাতি, ভাসতে পারে সপ্তমী, সতর্ক করল আবহাওয়া দফতর

প্রধানমন্ত্রীর পোশাক নির্বাচনও ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ ছিল। গত ৫ অগস্ট অযোধ্যায় রামমন্দিরের নতুন কাঠামোর শিলান্যাস তথা ভূমিপূজনে মোদী হাজির হয়েছিলেন যে সোনালি পাঞ্জাবি আর সাদা ধুতিতে, এ দিন বাংলার দুর্গোৎসব উদ্বোধনের ভার্চুয়াল আসরেও সেই রঙের পোশাকেই দেখা গিয়েছে মোদীকে। শুধু উত্তরীয় নেওয়ার কায়দাটা ছিল আলাদা। গলার দু’পাশ দিয়ে নেমে আসা সোনালি উত্তরীয়ের একটি প্রান্তকে যে ভাবে উল্টোদিকের কাঁধে আলতো করে ফেলে রাখতে পছন্দ করেন অনেক বাঙালি, মোদীকে এ দিন সে ভাবেই উত্তরীয় নিতে দেখা গিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ সাংস্কৃতিক এবং আধ্যাত্মিক বিষয়ের গণ্ডি ছাড়িয়ে বাংলা তথা পূর্ব ভারতের জন্য তাঁর সরকার কী কী করেছে এবং আরও কী কী করতে চায়, সে প্রসঙ্গেও পৌঁছেছে। তাঁর সরকার এখন ‘পূর্বোদয়’-এর নীতি (পূর্ব ভারতের উন্নতিতে বিশেষ জোর দেওয়া) নিয়ে চলছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। সেই লক্ষ্য পূরণে বাংলাকে বড় ভূমিকা নিতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

ভাষণের শেষ অংশে ফের বাংলা ভাষায় ফেরেন প্রধানমন্ত্রী। গোটা বাংলাকে দুর্গোৎসব, কালীপুজো এবং দীপাবলির শুভেচ্ছা জানান। সেই ভাষণের জন্য তাঁর ‘হোমওয়ার্ক’ কতটা নিখুঁত, তা স্পষ্ট করে দিয়ে একেবারে শেষে বলেন, ‘‘বাংলা ভাষার মিষ্টতা এতটাই যে, আমি জানি উচ্চারণে কিছু না কিছু ঘাটতি থেকেই যায়। কিন্তু তবু বাংলা বলার মোহ অগ্রাহ্য করতে পারলাম না। ত্রুটি থাকলে ক্ষমা করে দেবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন