State News

শেষ মুহূর্তে তুমুল নাটক, বেঁকে বসলেন শোভন, আটকে গেল দেবশ্রীর যোগদান

শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক সেরে বিজেপিতে যোগ দেবেন শোভন-বৈশাখী, সাংবাদিক সম্মেলন করে তাঁদের দলে স্বাগত জানানো হবে— এই আনুষ্ঠানিকতাটাই শুধু বাকি তখন। ঠিক এই সময়েই উঠল ‘ঝড়’।

Advertisement

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৯ ১৯:২৬
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

তীরে ভিড়ে গিয়েছে তরী। অপেক্ষা শুধুমাত্র যাত্রীদের নামার। কিন্তু সেই অবশ্যম্ভাবী অবতরণও অনিশ্চিত করে তুলল আচমকা হানা দেওয়া ঝড়। বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্বের তৎপরতায় এবং বারংবার আশ্বাসে সে ঝড় থামল অবশেষে। কোনওক্রমে হল শেষরক্ষা।

Advertisement

নয়াদিল্লিতে বিজেপির সর্বভারতীয় সদর দফতরে তখন পৌঁছে গিয়েছেন শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক সেরে বিজেপিতে যোগ দেবেন শোভন-বৈশাখী, সাংবাদিক সম্মেলন করে তাঁদের দলে স্বাগত জানানো হবে— এই আনুষ্ঠানিকতাটাই শুধু বাকি তখন। ঠিক এই সময়েই উঠল ‘ঝড়’। শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় জানতে পারলেন যে, রায়দিঘির তৃণমূল বিধায়ক দেবশ্রী রায়ও হাজির হয়েছেন বিজেপি সদর দফতরে। এবং বিজেপিতে যোগ দেবেন বলেই তিনি হাজির হয়েছেন।

এ কথা শুনেই বেঁকে বসেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। দেবশ্রী রায় যদি বিজেপিতে যোগ দেন, তা হলে তাঁরা যোগদান করবেন না— পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সহকারী পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেননকে সে কথা সাফ জানিয়ে দেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র।

Advertisement

আরও পড়ুন: শোভন-বৈশাখীর বিজেপিতে যোগদান টিভিতে দেখলেন রত্না, বললেন, ওঁর গলায় নৈতিকতার কথা মানায় না

তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ সমীকরণে এক সময়ে শোভনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবেই পরিচিত ছিলেন দেবশ্রী রায়। রায়দিঘির মতো দুর্ভেদ্য বাম ঘাঁটি থেকে পর পর দু’বার অভিনেত্রী দেবশ্রীকে জিতিয়ে আনার মূল কৃতিত্বও যে শোভনেরই ছিল, সে কথা তৃণমূলের অনেকেই স্বীকার করেন। কিন্তু পরবর্তী কালে সে সম্পর্ক তলানিতে পৌঁছয়। এবং এখন তিক্ততা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা স্পষ্ট বোঝা যায় দেবশ্রীর যোগদানের সম্ভাবনার কথা শুনে শোভনের বেঁকে বসার খবরেই।

বিজেপির কেন্দ্রীয় দফতরে দেবশ্রী রায়। বুধবার নয়াদিল্লিতে। নিজস্ব চিত্র

বিকেল ৪টেয় এ দিন বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার কথা ছিল শোভন-বৈশাখীর। কিন্তু বিজেপি দফতরে দেবশ্রী রায়ের পদার্পণের খবরে যে ঝড় ওঠে, তাতে শোভনদের যোগদান ক্রমশ বিলম্বিত হতে থাকে। অরবিন্দ মেননরা অবশেষে বার বার শোভনকে আশ্বাস দিতে থাকেন যে, দেবশ্রী রায়কে বিজেপি-তে যোগদান করানো হবে না। বিজেপি সদর দফতর সূত্রের খবর অন্তত সে রকমই। মেননদের কাছ থেকে আশ্বাস পাওয়ার পরে শোভন দলে যোগদানে সম্মত হন এবং বিকেল ৫টার একটু পরে সাংবাদিক সম্মেলন করে তাঁদের আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বাগত জানানো হয়।

সাংবাদিক সম্মেলন শুরু হওয়ার আগে জল্পনা তৈরি হয়েছিল যে, দেবশ্রী রায়ও এ দিন বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। শুধুমাত্র শোভন ও বৈশাখীকেই এ দিন দলে স্বাগত জানান বিজেপি নেতৃত্ব। দেবশ্রী রায়কে সাংবাদিক সম্মেলনে ডাকা হয়নি। তাঁকে দলে নেওয়া হতে পারে, এমন কোনও আভাসও বিজেপির তরফে এ দিন দেওয়া হয়নি।

আরও পড়ুন: পুজো কমিটির আন্দোলন পথে আনলেন মমতা

শোভন কিন্তু শুধু মেননের কাছে নিজের আপত্তির কথা জানিয়ে থেমে থাকেননি। দেবশ্রী রায়ের বিষয়ে নিজের আপত্তির কথা তিনি এ দিন বিজেপির কার্যকরী সভাপতি জেপি নাড্ডাকেও জানিয়েছেন। আনুষ্ঠানিক যোগদানের পরে বিজেপি দফতরেই নাড্ডার সঙ্গে বৈঠকে বসেন শোভন-বৈশাখী। বিজেপি সূত্রের খবর, সেই বৈঠকেই নাড্ডাকে শোভন জানিয়ে দেন, দেবশ্রী রায়কে যে দিন দলে নেবে বিজেপি, সে দিনই বৈশাখী এবং তিনি দল থেকে ইস্তফা দিয়ে দেবেন। শোভনের এই বক্তব্য নাড্ডা নোট করে নেন বলে জানা গিয়েছে।

কিন্তু দেবশ্রী রায় এ দিন আচমকা বিজেপি দফতরে হাজির হলেন কেন? তাঁর কি বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল? যদি সে রকম কোনও কথা থেকে থাকে, তা হলে যোগদান করানো হল না কেন? শুধুমাত্র শোভনের আপত্তির কারণেই কি দেবশ্রীর যোগদান আটকে গেল? এমন গুচ্ছ প্রশ্ন উঠে গিয়েছে আচমকা তৈরি হওয়া নাটকের জেরে।

দেবশ্রী রায় যে বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন বা তিনি যে বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছেন, এমন কোনও গুঞ্জন কিন্তু সম্প্রতি ছিল না। হঠাৎ শোভনের যোগদানের দিনেই দেবশ্রী কেন এবং কার মাধ্যমে বিজেপি সদর দফতরে পৌঁছলেন, তা নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে।

রাজ্যের রাজনৈতিক শিবিরের একটি অংশের দাবি, মুকুল রায়ের মাধ্যমেই বিজেপির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন দেবশ্রী। কেউ কেউ আবার দাবি করেছেন, রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারকে ধরে এ দিন বিজেপিতে যোগ দিতে চেয়েছিলেন রায়দিঘির তৃণমূল বিধায়ক। কিন্তু মুকুল এবং জয়প্রকাশ সে কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন।

মুকুল রায় বলেন, ‘‘গত পাঁচ বছরে দেবশ্রী রায়ের সঙ্গে আমার কোনও কথা হয়নি। আমার মাধ্যমে তিনি এখানে এসেছিলেন, এ রকম ভাবার কোনও কারণ নেই। তিনি যে বিজেপিতে যোগ দিতে চান, তিনি যে বিজেপির কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন, এমন কোনও তথ্যও আমার কাছে ছিল না।’’

জয়প্রকাশ আরও এক ধাপ এগিয়ে বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে দেবশ্রী রায়ের কোনও আলাপই নেই। তিনি একজন অভিনেত্রী, তিনি একজন বিধায়ক। তাই তাঁকে চিনি। কিন্তু কোনও দিন তাঁর সঙ্গে আমার কথাবার্তা হয়নি।’’

বিজেপি সদর দফতরে দেবশ্রী রায়ের হাজির হওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই এ দিন প্রশ্ন তুলে দেন জয়প্রকাশ। তিনি বলেন, ‘‘দেবশ্রী রায় কেন এসেছিলেন? কে পাঠিয়েছিলেন তাঁকে? এটা কি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও খেলা? তিনিই দেবশ্রী রায়কে কোনও উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে পাঠাননি তো?’’ দেবশ্রী রায় আদৌ বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্য দলের সদর দফতরে এ দিন গিয়েছিলেন কি না, তা নিয়েও রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতির সংশয় রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘যদি যোগদানের জন্য এসে থাকেন, তা হলে যোগদান করানো হল না কেন? দেবশ্রী রায়কেই জিজ্ঞাসা করুন।’’

তবে এ বিষয়ে দেবশ্রী রায়ের কোনও মন্তব্য এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন