University of Calcutta

স্যানিটাইজার, মাস্ক বানিয়ে করোনাযুদ্ধে সৈনিক কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়

১৬৩ বছরের ইতিহাস কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের। তার মধ্যে বিশ্বব্যাপী মহামারি আগেও হানা দিয়েছে। কখনও হানা দিয়েছে দুর্ভিক্ষ। কিন্তু এ বারের সঙ্কটে যে ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাহায্যের হাত বাড়ালেন, তার নজির আগে সে ভাবে মেলেনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২০ ১৬:৪২
Share:

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে তৈরি হচ্ছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার। —নিজস্ব চিত্র।

কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সাহায্যের হাত বাড়াল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। রাজ্য সরকারকে অর্থসাহায্য দেওয়া তো ছিলই, এ বার স্যানিটাইজার এবং মাস্ক তৈরি করে দেওয়ার কাজও স্বেচ্ছায় হাতে নিলেন কর্তৃপক্ষ। শুধু সেটুকুই নয়, লকডাউনের জেরে যদি মানসিক অবসাদ দেখা দেয়, তা হলেও পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগও।

Advertisement

১৬৩ বছরের ইতিহাস কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের। তার মধ্যে বিশ্বব্যাপী মহামারি আগেও হানা দিয়েছে। কখনও হানা দিয়েছে দুর্ভিক্ষ। কিন্তু এ বারের সঙ্কটে যে ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাহায্যের হাত বাড়ালেন, তার নজির আগে সে ভাবে মেলেনি।

মূলত তিনটি উদ্যোগ নিয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। রসায়ন বিভাগের ল্যাবরেটরিতে তৈরি করা হচ্ছে স্যানিটাইজার। জুট অ্যান্ড ফাইবার টেকনোলজি বিভাগ হাতে নিয়েছে মাস্ক তৈরির কাজ। আর মনস্তত্ত্ব ও ফলিত মনস্তত্ত্ব বিভাগ প্রস্তুত সেই পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াতে, যাঁরা লকডাউনে ঘরবন্দি অবস্থায় মানসিক ভাবে অসহায় বোধ করছেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: লকডাউনের সময়সীমা বাড়বে, সর্বদলীয় বৈঠকে ইঙ্গিত মোদীর

উপাচার্য সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘আমি বেশ কিছু দিন ধরেই ভাবছিলাম, এ রকম কিছু করা যায় কি না। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তো একটা উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান। গোটা পৃথিবীতে যখন চরম দুর্যোগ চলছে, তখন এই উচ্চশিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোটা একটা সামাজিক দায়বদ্ধতা বলে আমার মনে হচ্ছিল। তা নিয়ে আমার সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছিলাম। তাঁরাও সম্মতি দিলেন। তার পরেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি বিভাগ করোনা এবং তার জেরে তৈরি হওয়া পরিস্থিতির মোকাবিলায় কাজ শুরু করেছে।’’

স্যানিটাইজার তৈরির জন্য হু যে গাইডলাইন দিয়েছে, হুবহু তা অনুসরণ করেই স্যানিটাইজার তৈরি করা হচ্ছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

গোটা দেশে লকডাউন চলছে। তার আগে থেকেই অবশ্য বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় একে একে ক্যাম্পাস বন্ধ করা শুরু করেছিল। কিন্তু ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলেও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠনপাঠন পুরোপুরি থেমে নেই। উপাচার্য বললেন, ‘‘লকডাউন চলছে বলে আমরা সবাই ই-অফিস করছি। সারা দিন মেলে বা ভিডিয়ো কলে কাজ চলছে। আমাদের শিক্ষক-অধ্যাপকরা জুমের মাধ্যমে ক্লাস নিচ্ছেন।’’ তবে পরিস্থিতি এখন যে রকম, তাতে ওইটুকুতেই থেমে থাকছে চাইছে না কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। উপাচার্যের কথায়, ‘‘শিক্ষা তো শুধু পুঁথিগত নয়। শিক্ষা মানুষের কাজে লাগার জন্যই। এই দুঃসময়ে নিজেদের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে মানুষের কাজে লাগাটা সামাজিক দায়বদ্ধতা বলে আমাদের সবারই মনে হল। সেখান থেকেই এই কাজগুলো হাতে নেওয়ার প্রেরণা পেলাম।’’

আরও পড়ুন: ‘বাইরে গেলে খাব কী? করোনায় মরব’, ছাড়া পেয়েও জেলেই থাকতে চান বন্দি

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, রসায়ন বিভাগের ল্যাবরেটরিতে ভাল মানের অ্যালকোহল রয়েছে। সেই অ্যালকোহলকে কাজে লাগিয়েই স্যানিটাইজার তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। কোভিড-১৯-এর সঙ্গে লড়তে স্যানিটাইজার বা সাবান দিয়ে বার বার হাত সাফ করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। সেই পরামর্শ মানা হচ্ছে বলে, বাজারে স্যানিটাইজারের অভাবও দেখা দিয়েছে। স্থানীয় উদ্যোগে অনেক সংস্থা তাই স্যানিটাইজার তৈরির কাজ শুরু করেছিল। কিন্তু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ল্যাবে যে স্যানিটাইজার তৈরি হচ্ছে, তার মান অনেক ভাল বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার তথা রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক দেবাশিস দাসের কথায়, ‘‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) যে গাইডলাইন দিয়েছে, একদম সেই গাইডলাইন মেনেই আমরা স্যানিটাইজার তৈরি করছি। নিজেরাই সেগুলো বটলিং করছি। প্রথমে আমরা এক হাজার বোতল স্যানিটাইজার রাজ্য সরকারের হাতে তুলে দেব। তার পরে যদি প্রয়োজন হয়, তা হলে আবার বানাব।’’

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানানো হয়েছে যে জুট অ্যান্ড ফাইবার টেকনোলজি বিভাগও প্রথমে এক হাজার মাস্কই তৈরি করছে। তার উপকরণও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই জোগাচ্ছেন।

মনস্তত্ত্ব ও ফলিত মনস্তত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপকরা আবার মানসিক ভাবে পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। টানা লকডাউনে অন্য সকলের মতো পড়ুয়ারাও ঘরবন্দি। লকডাউন আরও কত দিন চলবে, কেই নিশ্চিত ভাবে জানেন না। এই পরিস্থিতির জেরে পড়ুয়ারা যদি মানসিক সমস্যার মধ্যে পড়েন, তা হলে মনস্তত্ত্ব বিভাগ তাঁদের পাশে দাঁড়াবে। ওই পড়ুয়াদের কাউন্সেলিং-এর ব্যবস্থা হবে। কবে কোন অধ্যাপক কাউন্সেলিং-এর জন্য থাকবেন, কোন সময়ে তাঁকে পাওয়া যাবে, সে সব তথ্য পড়ুয়াদের জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফ থেকে। যাঁরা কাউন্সেলিং করবেন, তাঁদের ফোন নম্বরও দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবে প্রথম পর্যায়ে শুধু পড়ুয়াদের জন্য হলেও, পরবর্তী পর্যায়ে পড়ুয়াদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর কথাও ভাবা হচ্ছে বলে উপাচার্য জানিয়েছেন। অর্থাৎ পড়ুয়াদের পরিবারের কেউ যদি মানসিক সমস্যায় পড়েন এই সময়ে, তাঁরাও কাউন্সেলিং করানোর সুযোগ পাবেন।

আরও পড়ুন: দেশে প্রথম: ১৫ জেলায় হটস্পটগুলি সিল করছে যোগী সরকার

আর্থিক ভাবে আগেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিল। রাজ্য সরকারের আপৎকালীন তহবিলে ইতিমধ্যেই অর্থসাহায্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, শিক্ষক, আধিকারিক, কর্মী, পড়ুয়ারা আরও টাকা দিচ্ছেন রাজ্য সরকারের তহবিলে দেওয়ার জন্য। তার পাশাপাশিই করোনাযুদ্ধে এ বার স্যানিটাইজার, মাস্ক এবং মানসিক সহায়তা দেওয়া শুরু করল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন