পঞ্চকবির গানে

শরৎ বাসভবন-এ পরিবেশিত হল ‘স্বদেশ গান’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। শুরুতেই রবীন্দ্রনাথ, দ্বিজেন্দ্রলাল, রজনীকান্ত, অতুলপ্রসাদ ও নজরুল-এর রচিত যে সব গানে সুরের ও ভাবের সাদৃশ্য রয়েছে, তা সঙ্গীত সহযোগে বিশ্লেষণ করলেন তরঙ্গের শিল্পিবৃন্দ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৬ ০০:০০
Share:

শরৎ বাসভবন-এ নীলা মজুমদার

শরৎ বাসভবন-এ পরিবেশিত হল ‘স্বদেশ গান’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। শুরুতেই রবীন্দ্রনাথ, দ্বিজেন্দ্রলাল, রজনীকান্ত, অতুলপ্রসাদ ও নজরুল-এর রচিত যে সব গানে সুরের ও ভাবের সাদৃশ্য রয়েছে, তা সঙ্গীত সহযোগে বিশ্লেষণ করলেন তরঙ্গের শিল্পিবৃন্দ। পরিবেশন মন্দ নয়। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয়ার্ধে একক গান শোনালেন নীলা মজুমদার। শ্রোতারা তাঁর গান শোনার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। তাঁর প্রথম নিবেদন ছিল ‘এই কথাটি মনে রেখো’।

Advertisement

পরে বেশ কয়েকটি রজনীকান্তের গান নির্বাচন করে গাইলেন শিল্পী। কখনও ইমনকল্যাণে ‘ঐ বধির যবনিকা’ কখনও বা বেহাগের মূর্ছনায় ‘আমি অকৃতী অধম’। অতুলপ্রসাদের গানগুলির পটভূমিকা বিশ্লেষণ করে শিল্পী গাইলেন ‘একা মোর গানের তরী’, ‘জল বলে চল’।

পরে নীলা শোনালেন দ্বিজেন্দ্রলালের কয়েকটি গান। দ্বিজেন্দ্রলালের গানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ভারতীয় রাগরাগিণীর সঙ্গে পাশ্চাত্য সঙ্গীতধারার একটি আশ্চর্য মিশ্রণ।

Advertisement

উদাহরণ দিয়ে শিল্পী শোনালেন ‘ভীষ্ম’ নাটকের গান ‘আমরা মলয় বাতাসে ভেসে যাব’ এবং সাজাহান নাটকের ‘আজি এসেছি আজি এসেছি’। এর পরেই ‘পরপারে’ নাটকের গান ‘তোমারেই ভালবেসেছি’। ‘দরবারী কানাড়া’ আশ্রিত সম্পূর্ণ ভারতীয় সঙ্গীতরীতির অনুবর্তনে সৃষ্টি। শিল্পী শেষ করলেন ‘পুরানো সেই দিনের কথা’ গানটি দিয়ে। অপূর্ব পরিবেশনা।

চার গল্পে অচেনা দিক

‘দু ছক্কা পাঁচ’ নাটকটি দেখে এসে লিখছেন পিয়ালী দাস

জীবনে টুকরো চাওয়া পাওয়া, সংকীর্ণতা-এগুলোর বাইরেও একটা বৃহৎ জগৎ আছে। যার অবস্থান মনের গভীরে, চেতনায়, অনুভবে। সৃষ্টিতে যার প্রকাশ ঘটে। সে লেখনিতে হোক, কবিতায় কিংবা চলচ্চিত্রে। এ রকমই কিছু ভাবনাকে অনুসরণ করে চন্দ্রিল ভট্টাচার্য লিখেছিলেন ‘দু ছক্কা পাঁচ’ গল্প সংকলন। এর মধ্যে থেকে চারটি গল্প বেছে নিয়ে তার নাট্যরূপ দিলেন তরুণ নির্দেশক অর্পণ ঘড়াই। যাদবপুর মন্থন এর প্রযোজনায়, অর্পণ-এর নির্দেশনায় সম্প্রতি মঞ্চস্থ হল ‘দু ছক্কা পাঁচ’ নাটকটি। ‘বাথরুমের ইন্টারভিউ’, ‘সমুদ্রের ইন্টারভিউ’, ‘ভূতের ইন্টারভিউ’ এবং ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না রিডাক্স’— পর পর উঠে এলে চারটি ভিন্ন স্বাদের গল্পের অভিনব মঞ্চায়ন। তবে বিষয় যেমনই হোক না কেন, অভিনয়গুনে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে ঘটনাগুলো। তাছাড়া সূত্রধরের (অর্ক চক্রবর্তী) ব্যবহারে গল্পের সেতু-বন্ধনের কাজটাও কিছুটা সহজ হল।

প্রথম গল্পেই উঠে আসে বাথরুমের আত্মকথা। যে কত বিচিত্র ঘটনার সাক্ষী। রোজকার প্রাতঃকর্ম থেকে যৌনতা কিংবা গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলে পড়া— নীরবে সহ্য করা সে সব যন্ত্রণার কথাই বলে চলে সে। এ করম একটা প্রথাভাঙা চরিত্রে (বাথরুম) অভিনয় করে তাক লাগিয়ে দিলেন শান্তনু নাথ।

বেশ মজাদার ভূতের ইন্টারভিউ গল্পের মঞ্চায়নও। প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে ভূতেদের রাজনীতি, জীবন –যাপন, পুনর্জন্মের অনেক গল্পই উঠে আসে। অবিশ্বাস্য হলেও কনটেন্টের বাঁধুনি কৌতুক রস বোধের সঞ্চার করে। জানা যায় সিডিউলের গন্ডগোলে রবীন্দ্রনাথকে এক সময় এই ভূতেদের সাম্রাজ্যে দিন তিনেক থাকতে হয়েছিল। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল পুনর্জন্ম চান কি না? উত্তরে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন— ‘এক ইনিংসে ও রকম ফাটিয়ে দেওয়ার পর আর কেউ খেলতে নামে না কি? পাগলা!’ এই কনটেন্টের ভাঙা গড়ার খেলার মঞ্চায়নে ঝরে পড়ে কৌতুক, শ্লেষ, ধিক্কার, জীবনের তুচ্ছতার বড়াই এর কথাও। আঘাত হানা হয় মধ্যবিত্ত মানসিকতায়ও। সাক্ষাৎকারে সমুদ্রও এক রাশ বিরক্তি উগড়ে দেয় সাংবাদিককে। খেদের সুরে নিজেকে বলে ওঠে ‘মোস্ট এক্সপ্লয়টেড সর্বহারা’ বলে। এক মুহূর্তও বিরাম নেই। চব্বিশ ঘন্টা ঢেউ জেনারেট করো, গর্জাও। তার শরীরে মানুষের শরীর ডুবিয়ে দেওয়ার বেয়ারাপনা সহ্য করা। এই সমুদ্রের চরিত্রে ভাল লাগে শ্যামাশিস্ পাহাড়ীর উজাড় করে দেওয়া অভিনয়।

তবে বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না গল্পের দৃশ্যায়ন কিছুটা অতি নাটকীয়। জ্যোৎস্না মোনালিসা চট্টোপাধ্যায় কিংবা বেদের দৈহিক অভিব্যক্তি বেশ লাউড। এ গল্পে অঙ্গভিত্তিক প্রথাগত যৌনতার বিপরীতে (মানসিক) অন্য করম ভাবে যৌনতাকে দেখার কথাও বলা হয়। কোনও রকম ছুৎমার্গ না রেখে বাবা-মেয়ের কথোপকথন চলতে থাকে সম্পর্ক নিয়েও। তবে বিষয়গত দিকটি তেমন স্পষ্টতা পায়নি। এই অংশের নির্মাণে পরিচালকের আরেকটু যত্নবান হওয়া প্রয়োজন ছিল।

নাটকে প্রপস (কৃষ্ণেন্দু মাইতি) এর ব্যবহার ঘটনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আলোও (সৌমেন চক্রবর্তী) খেলা করে মঞ্চ জুড়ে। বাথরুমের সংকীর্ণ পরিসর বোঝাতে যেমন দুটো ব্লকের ব্যবহার, সমুদ্রের বিশালতার চিত্র ফোটাতে স্পেসকে কাজে লাগানোর মুন্সিয়ানা প্রশংসনীয়। সঙ্গীত করেছেন দেবরাজ ভট্টাচার্য, কোরিওগ্রাফিতে অর্ণব বন্দ্যোপাধ্যায়।

ইচ্ছাপূরণের ভেলকি

‘নিষাদ’ নাটকটি দেখলেন মনসিজ মজুমদার

মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের নাটক ‘নিষাদ’-এ (প্রযোজনা: একুশ শতক, পরি: দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায়) ঘটনা ও চরিত্র প্রতীকী হলেও সংলাপ ও পরিস্থিতিতে টানটান নাটকীয়তা আছে। মঞ্চেও অনেক নাটকীয় মুহূর্ত ঘনিয়ে ওঠে। পার্কের বেঞ্চে শয়ান যুবক দিবাকর কি মৃত না নিদ্রিত? সাংবাদিকরা কেন নিদ্রিতকে মৃত বলে সন্দেহ করে, ঘোষণা করে দিবাকর আবারও দুবার মরেও বেঁচে উঠবে কিন্তু শেষবার সচেষ্ট হলে তবে বাঁচবে। এমন আরও সংলাপ, পরিস্থিতি আর জাদুকরের ইচ্ছাপূরণের ভেলকি, সবকিছু হেঁয়ালির মতো লাগলেও নাটকের গতি নিরঙ্কুশ। নাটকের শেষে দিবাকর ও লতা, যাদের পরিচয় ও প্রেম সেই পার্কেই এবং পরে পরিণয়, বারো বছরের সন্তান নিয়ে ভোগসুখে প্রতিষ্ঠিত সংসারী। কিন্তু দিবাকরকে মৃত্যুভয় ছাড়ে না। প্রতীক্ষিত মৃত্যু-মুহূর্তে উদ্যত পিস্তল হাতে নিজের ছেলেকে ঢুকতে দেখে।

কিন্তু আতঙ্ক কাটে না যতক্ষণ না ছেলে প্রত্যাখ্যান করে জাদুকরের প্রলোভন। নাটকের রূপকার্থ সহজ। এই পুঁজিবাদী ও পণ্যভোগী সমাজে দিবাকর লোভের শিকার। তার মৃত্যু নৈতিক মৃত্যু। সে আতঙ্কিত তার ছেলেরও নৈতিক মৃত্যুর আশঙ্কায়। কিন্তু রূপক নাটকে বিশেষের আশ্রয়ে সাধারণ সত্যই উচ্চারিত হয়। দিবাকর সাধারণ মধ্যবিত্তের প্রতিনিধি, তার ছেলেও নতুন প্রজন্মের মুখ। কিন্তু রূপকায়ণে নেই লতা। নাটকে সে-ই একমাত্র বাস্তব ও ব্যক্তিচরিত্র। তার কোনও নৈতিকতার সংকট নেই, সে স্বামীর ‘মৃত্যুভয়’ বোঝে না বরং তাকে ‘মৃত্যুপথে’ এগিয়ে দেয়। বিয়ের আগে নির্ভার, নিরাসক্ত দিবাকর পার্কের বেঞ্চিতে ঘুমিয়ে পড়ে, লতার সঙ্গে সংসার করাই যেন তার কাল হল। বিয়ের পরেই জাদুকরের আবির্ভাব। নারী ও সংসারই তবে নৈতিক পতন ডেকে আনে? বৈরাগ্য সাধনেই মুক্তি— এমনই মধ্যযুগীয় বার্তা যেন নাটকের সাবটেক্সট। লতা ছাড়া সব চরিত্রই দ্বিমাত্রিক কিন্তু সপ্রাণ অভিনয়ের গুণে একেবারে কার্ড বোর্ডের কাট-আউট হয়নি শুভঙ্কর রায়ের দিবাকর আর লোকনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জাদুকর। লতার ভূমিকায় চরিত্রানুগ অভিনয় করেছেন মিশকা হালিম, বিশেষ করে পিস্তল হাতে খেপা ছেলেকে মাতৃস্নেহে শান্ত করার সময়। উল্লেখযোগ্য মদন হালদারের প্রতীকী মঞ্চ।

চিরন্তন ট্র্যাজেডি

‘ইলা-গূঢ়ৈষা’ দেখলেন আশিস পাঠক

ইতিহাসকে আশ্রয় করে যে নাটক গড়ে ওঠে তার সুবিধে ও সমস্যা দুইই থাকে। সুবিধের দিকটা এই যে খুব জমাট একটা আখ্যান প্রায় তৈরি হয়েই থাকে ইতিহাসের গল্পে। তা ছাড়া, চরিত্র যেহেতু ইতিহাসের, তাই মঞ্চে তার প্রাথমিক প্রতিষ্ঠা বিবরণের মধ্য দিয়েই করা চলে। আর সমস্যা, ওই আখ্যানের লোভেই পুরোপুরি মজে গেলে, সাম্প্রতিক থেকে অতীতে গা-ঢাকা দিতে হয়। তখন, নাট্যকার কেবল আখ্যানের নাট্যরূপকার মাত্র হয়ে ওঠেন। সমসময়ের সঙ্গে তাঁর কোনও যোগ থাকে না। ব্রাত্য বসুর নাটক অবলম্বনে দেবাশিসের নির্দেশনায় থিয়েটার প্ল্যাটফর্মের ‘ইলা-গূঢ়ৈষা’ কোচবিহারের রাজা বীরনারায়ণের আখ্যানের মঞ্চ-অভিনয় মাত্র নয়। এ নাট্য একটি খণ্ড সময়ের ইতিহাসের মঞ্চ থেকে, সমকালকে ছুঁয়ে, মানবজীবনের চিরন্তন ট্র্যাজেডির বড় পটে উড়াল দিতে চায়, সেটাই এ নাট্যের স্মরণীয়তা।

অত্যাচারী, কামুক রাজা বীরনারায়ণের পতনের কারণ হয়ে এসেছিল তারই কন্যা ইলার প্রতি অজ্ঞান লিপ্সা। গ্রিক ট্র্যাজেডির রাজা অয়দিপাউসের সাযুজ্যে বীরনারায়ণের সেই বিপুল ট্র্যাজেডির স্মরণযোগ্যতাকে মঞ্চে সফল করতে পেরেছে দেবাশিসের দাপুটে নির্দেশনা। থিয়েটারের মঞ্চকে প্রায় নিরাভরণতার দিকে যেতে শিখিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। প্রকৃতির পটে বাংলার লোকযাত্রার আঙ্গিক ছিল সেই যাত্রার লক্ষ্য। দেবাশিস এ নাটকের মঞ্চ তৈরি করতে গিয়ে স্মৃতিতে রেখেছেন সেই প্রকৃতিকেই। কোচবিহার রাজবাড়ির পিছনের নদীর চারপাশে ঝিকমিক করে জ্বলে ওঠা হাজার জোনাকির আলোর সমানুপাতে এ নাট্যের মঞ্চেও আলোকস্ফুলিঙ্গের একটা বড় ভূমিকা আছে। মহাশূন্য আর অনন্ত কালের প্রেক্ষিতে ইতিহাসের জীবনগুলির ট্র্যাজেডি ওই ক্ষণস্থায়ী স্ফুলিঙ্গের মতোই অকিঞ্চিৎকর মঞ্চ নির্দেশনা সেই শূন্যতার অনুভবটা বারবার জাগিয়ে তুলতে পেরেছে।

বীরনারায়ণের চরিত্রে গৌতম হালদার নিজের নির্দিষ্ট অভিনয়রীতিতেও স্বতন্ত্র। শেষ দৃশ্যে যোনিপীঠে স্থাপিত শিবলিঙ্গটি তুলে নিয়ে তাঁর ক্লান্ত, ধ্বস্ত আত্মহননের যাত্রা, একটি বলিউডি সিনেমার কথা মনে পড়ালেও, ধ্রুপদী অভিনয়কে ছুঁতে পেরেছে। নাটকে সেঁজুতি মুখোপাধ্যায়ের অভিনয় মনে দাগ কাটে। অন্যান্য চরিত্রেও অভিনয় যথাযথ। তবে, প্রায় মার্শাল আর্টের ধরনে শারীরিক কসরত কি কারও কারও অভিনয়ের খামতি সবটা ঢাকতে পেরেছে? নাচ, বেশির ভাগ দৃশ্যেই, এখনও আড়ষ্টতা কাটাতে পারেনি। শুভদীপ গুহের সঙ্গীতে ‘ভরা বাদর’ গানটির ব্যবহার মনে রাখার মতো।

মন্ত্রমুগ্ধ করে চিত্রাঙ্গদা

আদ্যকলা তীর্থম ও প্রয়াসের যৌথ উদ্যোগে সম্প্রতি উত্তম মঞ্চে পরিবেশিত হল একটি সুন্দর নৃত্যসন্ধ্যা। শুরুতেই সংস্থার শিশু-শিল্পীরা পরিবেশন করে ওড়িশি নৃত্যের ধারাবাহিক কিছু নৃত্যপদ ও রবীন্দ্রনৃত্য সহযোগে একটি নৃত্যালেখ্য ‘নৃত্যাঞ্জলি’।

মূল পর্বের অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথের চণ্ডালিকা, শাপমোচন, চিত্রাঙ্গদা ও শ্যামার অংশ বিশেষ নিয়ে রচিত ‘টেগোরস শেডস অব লাভ’ ছিল অভিরূপ সেনগুপ্তের বেশ অভিনব প্রযোজনা। রবীন্দ্রনাথ চিরপ্রেমের কবি। এই প্রেম শুধু পার্থিব নয়, অপার্থিবও। এই অদম্য, মহান প্রেমানুভূতির প্রকাশ ঘটে তাঁর রচিত নৃত্যনাট্যগুলিতে।

একাধারে চণ্ডাল-কন্যার প্রেমের ক্রমবিকাশ ও স্তরে স্তরে আরোহণ, অন্য দিকে আদর্শ নারীর প্রতিমূর্তি চিত্রাঙ্গদার প্রেমের মাধ্যমে অর্জুন উপলব্ধি করে-যা শাশ্বত সুন্দর তাই শাশ্বত সত্য। আবার বজ্রসেনের অনুতাপানলে দগ্ধ দ্বিধাগ্রস্ত মন প্রত্যাখ্যান করে ক্ষমাপ্রার্থী শ্যামাকে। অরুণেশ্বর কমলিকার মিলন যেন চিরন্তন প্রেমের প্রতীক। প্রেমের এই সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলিকে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে নাট্যকাব্যের আকারে উপস্থাপিত করে অভিরূপ। চিত্রাঙ্গদা ও শ্যামার ভূমিকায় রেশমি বাগচি তার লাস্যময়ী নৃত্যবিভঙ্গ ও মুখজ অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকমণ্ডলিকে মুগ্ধ করে। কমলিকার ভূমিকায় দেবলীনা কুমার বিশেষ প্রশংসনীয়। অর্জুন, অরুণেশ্বর ও বজ্রসেনের ভূমিকায় ছিলেন অভিরূপ। রায়া ভট্টাচার্য ও কোরক বসুর ভাষ্যপাঠ অনুষ্ঠানটিকে আরও নান্দনিক করে তোলে।

চৈতি ঘোষ

ছবি: কৌশিক সরকার

প্রেম-বসন্তে

সম্প্রতি গ্যালারি গোল্ডে অন্বেষা আয়োজন করেছিল ‘প্রেম বসন্তে’। সুপ্রকাশ মুখোপাধ্যায় বাচিক শিল্পী হলেও তিনি এ দিন গাইলেন সুবীর সেনের জনপ্রিয় গান ‘পাগল হাওয়া, কি আমার মতো তুমিও হারিয়ে গেলে’। পরে তিনি সিমলির সঙ্গে একটি শ্রুতিনাটক ‘সময়-অসময়’ অভিনয় করলেন।

তবে মন ভরে যায় দীপঙ্কর পালের গাওয়া ‘মরি হায় চলে যায়’ গানটি শুনে। তাঁর গানে দরদ আছে। তানিয়া দাশও সুন্দর গাইলেন ‘ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায়’। এ দিন অনুষ্ঠানে অন্যান্য শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন দীপান্বিতা ভৌমিক, অরুন্ধতী চট্টোপাধ্যায়, কাকলি দেব, বেলা সাধুখাঁ, অমিতেশ চন্দ প্রমুখ।

রবীন্দ্রগানে

সম্প্রতি মোহিত মৈত্র মঞ্চে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার শুরুতেই মালবিকা সুর শোনালেন বেশ কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত। তার মধ্যে অবশ্যই উল্লেখযোগ্য ‘হে ক্ষমা করো নাথ’, ‘হে বিদেশি এসো এসো’। পরের পর্যায় গান শোনালেন বৈশাখী মুখোপাধ্যায়।

রকমারি গানে

সুকান্ত সদনে রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতি ও আধুনিক গান শোনালেন মালবিকা ভট্টাচার্য। গানগুলির মধ্যে ছিল ‘মন মোর মেঘের সঙ্গী’, ‘আমি বনফুল গো’ প্রভৃতি। শেষে ছিল আধুনিক গান ‘কাঁচের চুড়ির ছটা’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন