kolkata tour

বছর কুড়ি ধরে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেল, সেতু হল না

এত সমালোচনা সত্ত্বেও রেন্ডেল সাহেবের প্রস্তাবিত সেতুর ধরনটিই কেবলমাত্র মঞ্জুর করলেন ‘কোর্ট অফ ডাইরেক্টরস্‌’।তবে সেতুর স্থান সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত আপাতত মুলতুবি রেখে আদেশ দেওয়া হল, নদীর যে অন্তমৃত্তিকার উপর সেতুর থাম বসানো হবে তার প্রকৃতি সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহের জন্য বিলেতের দুজন অভিজ্ঞ বেধনকারীকে পাঠানো হবে কলকাতায়।

Advertisement

তারাপদ সাঁতরা

শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৭ ২১:১২
Share:

পুরনো চেহারায় হাওড়া ব্রিজ।—আনন্দবাজার আর্কাইভ থেকে।

অন্যদিকে দেশীয় সংবাদপত্রেও বিরূপ মন্তব্য করা হল রেন্ডেল-এর এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে। ১৮৫৫ সালে প্রকাশিত সে সময়ের সংবাদপত্র ‘হিন্দু পেট্রিয়ট’-এর বক্তব্য হল, প্রথমত নদীর বুকে সেতুর থাম নির্মিত হলে জাহাজ চলাচলে দারুণ অসুবিধে দেখা দেবে; দ্বিতীয়ত নদীগর্ভে সেতুর থাম দাঁড় করাতে গেলে লোহা-ইঁট-পাথরের যে সব মাল মশলা নদীতে জমা হবে, নদীস্রোতে তাতে বাধা পাওয়ার ফলে নদীর বুকে সহজেই চড়া পড়ে নদী মজে যাবার সম্ভাবনাই বেশি।

Advertisement

আরও এক সংবাদপত্র ‘মর্নিং ক্রনিকল’ সে সময়ে পরামর্শ দিয়ে লিখল, হাওড়া থেকে কলকাতার মধ্যে রেল যোগাযোগ যদি করতেই হয়, তা হলে রেন্ডেল-এর প্রস্তাবমতো আহিরীটোলায় এই সেতুটি নির্মাণ না করে এটি তৈরি করা হোক আরও উত্তরে ব্যারাকপুরের কাছে পলতায়। কেন না কলকাতার টাঁকশাল বা আহিরীটোলা এই দুটি এলাকা অপেক্ষা পলতায় নদীর প্রস্থ খুবই কম এবং এখানকার নদীগর্ভ ও নদীর কিনারা আগের দুটি জায়গার চেয়েও যে শক্ত অন্তমৃত্তিকা দিতে পারবে তার উপর ভর করে স্বচ্ছন্দেই দাঁড়িয়ে থাকবে সেতুর থামগুলি।

কিন্তু এত সমালোচনা সত্ত্বেও রেন্ডেল সাহেবের প্রস্তাবিত সেতুর ধরনটিই কেবলমাত্র মঞ্জুর করলেন ‘কোর্ট অফ ডাইরেক্টরস্‌’। তবে সেতুর স্থান সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত আপাতত মুলতুবি রেখে আদেশ দেওয়া হল, নদীর যে অন্তমৃত্তিকার উপর সেতুর থাম বসানো হবে তার প্রকৃতি সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহের জন্য বিলেতের দুজন অভিজ্ঞ বেধনকারীকে পাঠানো হবে কলকাতায়।

Advertisement

আরও পড়ুন: আহিরীটোলা ঘাট ও শালকিয়ার মধ্যে সেতু গড়ার বিকল্প প্রস্তাব এসেছিল

তবু ভাল, ‘কোর্ট অফ ডাইরেক্টস’-এর ঘোষণায় সাধারণ মানুষের মনে আশা হল যে, কলকাতা-হাওড়া অবশেষে সেতুবন্ধ হবে। তবে এ বিষয়ে সকলেই স্বীকার করে নিয়েছে যে, হাওড়া স্টেশনের কাছাকাছি থাম গেঁথে গঙ্গাবক্ষে সেতু করা উচিত হবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কী হবে তা কেউই জানতে পারল না। আর এমনি করেই ১৮৫৫ সাল থেকে প্রায় বছর কুড়ি ধরে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেল। হাওড়া স্টেশনে রেলগাড়িতে চড়তে হলে কলকাতাবাসীদের নদী পারাপারের এই কষ্ট আর ঘুচল না।

এদিকে যখন ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে কোম্পানি হাওড়া-কলকাতার রেলপথ যোগাযোগ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন, তখন ওদিকে ইস্টবেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি নামে আর এক প্রতিযোগী রেলপথ ব্যবসায়ী কলকাতার আভিজাত্য বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে এগিয়ে এসেছে। তার পরেই কয়েক বৎসরের মধ্যেই ভাগীরথীর পূর্বপার বরাবর রেল লাইন বসিয়ে কলকাতার শিয়ালদহে স্থাপন করেছে এই রেলপথের প্রধান স্টেশন। এই পরিস্থিতিতে স্বভাবতই হুগলী-ভাগীরথীর উপর সেতু নির্মাণ করে কলকাতা-হাওড়া রেলপথ যোগাযোগের পরিকল্পনা ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে কোম্পানির তরফ থেকে বাতিল করে দেওয়া হল।

(উপরের নিবন্ধটি তারাপদ সাঁতরা-র ‘কীর্তিবাস কলকাতা’ থেকে নেওয়া। আজ তার চতুর্থ অংশ। সৌজন্যে আনন্দ পাবলিশার্স)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন