—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
‘‘ডাকু, ডাকু! পাকড়ো, পাকড়ো! মেরা সামান লে কর ভাগ রহা হ্যায়!’’
স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রেনের বাতানুকূল কামরা থেকে নেমে পরিত্রাহি চিৎকার করতে করতে দৌড়চ্ছেন বছর পঞ্চাশের এক ব্যক্তি। তাঁর চিৎকার শুনে চমকে উঠেছিলেন স্টেশনে থাকা যাত্রীরা। তাঁরা দেখেন, মোটবাহকের পোশাক পরা, বছর কুড়ির তিন যুবককে তাড়া করছেন ওই যাত্রী আর ‘ডাকু, ডাকু’ বলে চিৎকার করছেন। ওই ব্যক্তির চিৎকার শুনতে পেয়ে সতর্ক হয়ে উঠেছিলেন স্টেশনে থাকা আর পি এফ জওয়ান ও রেল পুলিশের কর্মীরা। শেষ পর্যন্ত তাঁরাই তাড়া করে ধরে ফেলেন ওই তিন দুষ্কৃতীকে।
মঙ্গলবার রাত ৯টা নাগাদ এই দুঃসাহসিক ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে পূর্ব রেলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও সুরক্ষিত বলে পরিচিত হাওড়া স্টেশনে। রেল পুলিশ জানিয়েছে, রাঁচীগামী ক্রিয়াযোগ এক্সপ্রেস হাওড়া স্টেশনের ২২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকার সময়েই ট্রেনের বাতানুকূল বি-২ কামরায় উঠে এক ব্যবসায়ীকে মারধর করে বহুমূল্য সোনার গয়না লুট করে চার দুষ্কৃতী। ব্যবসায়ীর চিৎকার শুনতে পেয়ে স্টেশনে কর্তব্যরত আর পি এফ ও রেল পুলিশের কর্মীরা তাড়া করে তিন দুষ্কৃতীকে ধরে ফেললেও আর এক দুষ্কৃতী সোনা ভর্তি ব্যাগ নিয়ে পালিয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও উদ্ধার করা যায়নি ওই সোনা। দুষ্কৃতীর খোঁজে মঙ্গলবার রাত থেকেই যৌথ ভাবে তল্লাশি চালাচ্ছে রেল পুলিশ ও আর পি এফ।
এই ঘটনার পরে প্রশ্ন উঠেছে, রাতের হাওড়া স্টেশন কি আর নিরাপদ নয়? পূর্ব রেলের অবশ্য দাবি, এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এই ঘটনার পিছনে অন্য কোনও রহস্য আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে তারা।
আর পি এফ ও রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বড়বাজার থেকে সোনার গয়না কিনে একটি ব্যাগে রেখে হাওড়া স্টেশন থেকেক্রিয়াযোগ এক্সপ্রেস ধরতে আসেন দীপক কুমার নামে রাঁচীর ওই স্বর্ণ ব্যবসায়ী। ওই ব্যবসায়ীর দাবি, তাঁর কাছে প্রায় এক কোটি টাকার গয়নাছিল। রেল পুলিশ জানায়, দীপক যখন ট্রেনের বি-২ কামরায় নিজের সংরক্ষিত আসনে গিয়ে বসেন, তখনই চার দুষ্কৃতী ট্রেনে উঠে তাঁকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধর করতে শুরু করে। এর মধ্যেই তাঁর হাত থেকে এক দুষ্কৃতী গয়নার ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে চম্পট দেয়। তার পরে বাকি তিন জনও পালাতে গেলে তাদের পিছনে দৌড়ন দীপক। তাঁর চিৎকারে সতর্ক হয়ে আর পি এফ ও রেল পুলিশ ধাওয়া করে তিন জনকে ধরে। রেল পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত তিন দুষ্কৃতীর নাম মহম্মদ দিলশাদ, মহম্মদ আনিস ও মহম্মদ আরিফ। সকলেরই বাড়ি বিহারে। রেল পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেল থেকেই ওই ব্যবসায়ীকে অনুসরণ করছিল চার জন। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পলাতক দুষ্কৃতীকে ধরার ও গয়না উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে পূর্ব রেলের হাওড়া স্টেশনের দায়িত্বে থাকা এক পদস্থ অফিসার বলেন, ‘‘এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। হাওড়া স্টেশন যথেষ্ট সুরক্ষিত। কী ভাবে এই ঘটনা ঘটেছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আক্রান্ত স্বর্ণ ব্যবসায়ী ১ কোটি টাকার সোনা খোয়া যাওয়ার অভিযোগ করলেও তাঁর মধ্যে তেমন উদ্বেগ চোখে পড়েনি বলেও রেল পুলিশের তদন্তকারীরা জানিয়েছেন। তাই সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে