ময়দানের ‘বদনাম’ ঘোচাতে চাইছে কলকাতা পুলিশ।
কয়েক মাসের ব্যবধানে ময়দানের দুই প্রান্ত থেকে উদ্ধার হয়েছে দু’টি মৃতদেহ। খুনের কিনারা দূরে থাক, উদ্ধার হওয়া মৃতদেহগুলি শনাক্তই করতে পারেনি পুলিশ। অভিযোগ, অন্যত্র খুন করার পরে ময়দানের নির্জনতা এবং অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে দুই প্রান্তে ফেলে রেখে যাওয়া হয়েছিল এক যুবক এবং এক মহিলার দেহ। এ ছাড়াও, লক্ষ্মীপুজোর পরের দিন রেসকোর্সের কাছে একটি গাছে এক যুবকের রক্তাক্ত ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। এই ছবিটাই এ বার বদলাতে উদ্যোগী হয়েছেন পুলিশকর্তারা।
লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়দানে অপরাধীদের দৌরাত্ম্য নতুন নয়। ছিনতাই-সহ যাবতীয় অপরাধের আঁতুরঘর ‘গড়ের মাঠ’। তাতে রাশ টানতেই বদলে ফেলা হচ্ছে ময়দান এলাকার চিরাচরিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়দান থানা এলাকার মধ্যেই পড়ে ময়দান বা গড়ের মাঠ। প্রায় আড়াই বর্গকিলোমিটার এলাকার ময়দান থানাকে তিনটি জোনে ভাগ করা হয়েছে।
লালবাজার জানিয়েছে, ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড-সহ ফোর্ট উইলিয়াম থাকবে এ জোনে। ডাফরিন রোড, প্রেস ক্লাব, সিটিজেন্স পার্ক নিয়ে গড়া হয়েছে জোন বি। আর গঙ্গাসাগর এবং মোহনবাগান মাঠ ও বাবুঘাটের মতো এলাকা থাকছে জোন সি-তে। প্রতিটি জোনে থানার বিশেষ দলের দু’জন করে কনস্টেবল মোটরবাইক নিয়ে নিদিষ্ট এলাকায় টহল দেবেন। বিকেল পাঁচটা থেকে ভোর ছ’টা চলবে সেই পাহারা। টহলদারি দলের যাতে কোনও ধরনের শিথিলতা না আসে, তার জন্য এই ১৩ ঘণ্টা সময়কে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রতি ভাগে পৃথক পুলিশকর্মীরা ডিউটিতে থাকবেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়দান এলাকায় ওই টহলদারির জন্য থানার বিশেষ দলের কনস্টেবলদের বাছাই করা হয়েছে। ‘ড্রাগন লাইট’ (এক ধরনের টর্চ লাইট, যা দিয়ে অন্ধকারেও ৫০০ মিটার দূরের জিনিস দেখা যায়) নিয়ে এলাকায় ঘুরবেন। সঙ্গে থাকবে ওয়াকিটকিও। সন্দেহজনক কিছু নজরে এলে ওয়াকিটকিতে জানাবেন ওই পুলিশকর্মীরা। দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবে এলাকায় থাকা টহলদারি ভ্যান।
কেন এই ব্যবস্থা?
লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়দানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২০০৩ সালে হেস্টিংস থানা ভেঙে পৃথক ময়দান থানা গড়া হয়। মূলত গড়ের মাঠ এবং ক্লাবগুলিকেই রাখা হয় তার অধীনে। এর সঙ্গে ফোর্ট উইলিয়ামের মতো সেনা বাহিনীর দফতরকেও রাখা হয় ওই থানা এলাকায়। কলকাতা পুলিশের বেশ কয়েকটি থানায় ওসি হিসেবে কাজ করা প্রাক্তন এক পুলিশ অফিসারের কথায়, মূল শহরের অন্য থানার তুলনায় ময়দানের এলাকা অনেকটাই বেশি। সূর্য ডুবলেই বাবুঘাট বা ক্লাবগুলি ছাড়া গড়ের মাঠের বাকি অংশ ডুবে যায় অন্ধকারে। আর তার সুযোগেই অপরাধের বাড়বাড়ন্ত। ফলে ময়দানে অন্য থানার থেকে টহলদারি পুলিশের বেশি সজাগ থাকা প্রয়োজন। টহলদারির ফাঁক থাকাতেইখুন করে দুষ্কৃতীরা ময়দানে মৃতদেহ ফেলে রেখে চলে যাচ্ছে বলে তাঁর দাবি। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ময়দান এলাকা থেকে পরপর দু’টি মৃতদেহ উদ্ধার এবং একটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় থানার ভূমিকা খতিয়ে দেখার পরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে বলা হয়েছিল থানাকে।’’
গোয়েন্দাদের দাবি, উপরের তিনটি ঘটনায় নিহতদের শনাক্ত করা যায়নি। তবে সপ্তাহ দুয়েক আগে আউট্রাম রোডের ধার থেকে উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাতপরিচয় মহিলার মৃতদেহের ব্যাপারে বেশ কিছু সূত্র মিললে বাকিদের ব্যাপারে তাঁরা এখনও অন্ধকারে।