হাওড়া ময়দান থেকে এ বার ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পকে সাঁতরাগাছি পর্যন্ত সম্প্রসারণ করতে চাইছে রাজ্য সরকার। এ নিয়ে ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথাও হয়েছে রেল মন্ত্রকের।
সম্প্রতি সাঁতরাগাছি পর্যন্ত প্রকল্পটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বাস্তবিকতা খতিয়ে দেখতে পরিবহণ দফতরকে ৮৬ লক্ষ টাকা মঞ্জুরও করেছে অর্থ দফতর। পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, ওই প্রকল্পের বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরির ভার দেওয়া হবে ‘রাইটস’কে। এর আগে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পকে হলদিরাম পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার।
তা নিয়ে ইতিমধ্যেই সমীক্ষার কাজ করছে ‘রাইটস’।
তবে রাজ্য প্রশাসনের একাংশের মতে, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর মূল প্রকল্পের কাজ এখনও অথৈ জলে। এই অবস্থায় প্রকল্পের দৈর্ঘ্য ক্রমেই বাড়িয়ে চলেছে রাজ্য। শেষমেশ অতি-ভাবনার ভারে প্রকল্পই মুখ থুবড়ে পড়বে না তো? যদিও নবান্নের একাংশের শীর্ষ কর্তাদের দাবি, কাজ ধাপে ধাপে হবে। ফলে কোনও অসুবিধে হবে না।
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর মূল প্রকল্প, বিধাননগরের সেক্টর ফাইভ থেকে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত। বৃহস্পতিবার মেট্রো রেল কর্পোরেশন লিমিটেড (কেএমআরসিএল)-এর কর্তাদের দাবি, সব কিছু ঠিক থাকলে ২০১৮ সালের জুন মাসে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর মূল প্রকল্প-পথ চালু হবে।
তার পরেও কেন এই সম্প্রসারণের ভাবনা? কেএমআরসিএল-এর কর্তারা জানাচ্ছেন, হাওড়া-হুগলি-মেদিনীপুর জেলার সঙ্গে কলকাতার সংযোগ স্থাপনের উদ্দেশেই এই সিদ্ধান্ত। এক কর্তার কথায়, ‘‘ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পকে ইতিমধ্যেই গড়িয়া-বিমানবন্দর মেট্রো রুটের সঙ্গে সংযুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফলে সাঁতরাগাছি অবধি মেট্রো সম্প্রসারিত হলে সাঁতরাগছি থেকে কলকাতা তো বটেই, সল্টলেক এবং বিমানবন্দর যাতায়াতেও সুবিধা হবে।’’ ওই কর্তা জানান, কোন পথে এই মেট্রোকে হাওড়া ময়দান থেকে সাঁতরাগাছি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে, তাতে খরচই বা কত হবে— সে সব এখনও ঠিক হয়নি। রাইট্স-এর কাছ থেকে বিস্তারিত রিপোর্ট পাওয়ার পরেই এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে ওই কর্তার কথায়, ‘‘জনবহুল এলাকা ছেড়ে কী ভাবে ওই মেট্রো-রুট নিয়ে যাওয়া যায়, সেটাই হবে আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য।’’
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো কর্তৃপক্ষ সূত্রের খবর, সেক্টর ফাইভ থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত কাজ প্রায় শেষের মুখে। এখন চলছে লাইন-পাতার কাজ। তার পরেই শুরু হবে সিগন্যাল বসানোর কাজ এবং পরবর্তীতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া। বাধা-বিপত্তি কেটে যাওয়ার পরে যে গতিতে কাজ এগোচ্ছে, তাতে আগামী দু’বছরের মধ্যে বাকি যাবতীয় কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে আশাবাদী কেএমআরসিএল-এর কর্তারা।
সংস্থা সূত্রে খবর, শিয়ালদহ থেকে সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত ৯.৩৬ কিলোমিটার অংশে মোট ৮টি স্টেশন থাকছে। তার মধ্যে ছ’টি মাটির অনেক উঁচুতে, আর দু’টি সুড়ঙ্গে। ইতিমধ্যে রেক তৈরিও প্রায় শেষ। প্রতিটি ট্রেনে থাকবে ছ’টি করে বাতানুকূল কামরা। যাত্রী কেমন হয় দেখে রেক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কেএমআরসিএল কর্তারা।
এ দিকে, হাওড়া ময়দান থেকে গঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ১০০ মিটার সুড়ঙ্গ কাটাও শেষ। কয়েক দিনের মধ্যেই মাটি কাটার যন্ত্র (বোরিং মেশিন) জলের তলায় ঢুকে পড়বে। কেএমআরসিএল কর্তারা জানান, হাওড়া ময়দান থেকে মহাকরণ পর্যন্ত ২.৯ কিলোমিটার রাস্তায় কাজ শেষ হতে একটু সময় লাগবে। তাই শিয়ালদহ থেকে সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত পরিষেবা প্রথমে চালু করা হবে। গোটা পথে একটানা ট্রেন চালানো ২০১৯ সালের অগস্ট মাসে শুরু করা যাবে বলে আশা করছেন মেট্রো কর্তারা।
বিধাননগর থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো চলার কথা ছিল ২০১৪ সালে। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ-সহ নানা বাধায় বারবার শ্লথ হয়েছে প্রকল্পের কাজ। পাশাপাশি, সেন্ট্রাল থেকে হাওড়া যাওয়ার মেট্রোপথ কী হবে, তা নিয়ে বিস্তর টানাপড়েন শুরু হয়। শেষমেশ নতুন যে মেট্রোপথ চূড়ান্ত হয়েছে, তাতে খরচ বেড়েছে প্রায় ৭৫০ কোটি টাকা। অতিরিক্ত এই খরচের দায়ভার কে নেবে, তা নিয়েও বিস্তর টানাপড়েন চলেছে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে। শেষমেশ কেন্দ্র ওই অর্থের দায়ভার নিতে সায় দেওয়ার পরে প্রকল্পের কাজ ফের শুরু হয়েছে। ঠিক হয়েছে, সেক্টর ফাইভ থেকে শিয়ালদহ হয়ে বৌবাজার, সেখান থেকে হিন্দ সিনেমার সামনে দিয়ে এসএন ব্যানার্জি রোড, ধর্মতলা এবং বিবাদীবাগ হয়ে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো ঢুকে যাবে গঙ্গার নীচে, শেষ হবে হাওড়া ময়দানে।
কেএমআরসিএল কর্তারা ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো চালুর দিনক্ষণ বললেও আদৌ ওই সময়সীমার মধ্যে তা চালু হবে কি না, তা নিয়েই সংশয়ে রাজ্য প্রশাসনের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, আবার কাজ শুরু হলেও বিবাদী বাগ স্টেশন-সহ বেশ কিছু বিষয়ে এখনও ধোঁয়াশা রয়েছে। এই অবস্থায় ফের প্রকল্প সম্প্রসারণ করা কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে সন্দিহান ওই কর্তারা। যদিও কেএমআরসিএল-এর কর্তারা বলছেন, মূল প্রকল্পের সঙ্গে সম্প্রসারণ প্রকল্পের কোনও বিরোধ নেই। তাই কোনও অসুবিধা নেই।