পূর্ব মেদিনীপুরের একটি পরীক্ষা কেন্দ্র। —নিজস্ব চিত্র
নিম্নচাপের জেরে ঝড়-বৃষ্টি ও মেঘলা আবহাওয়া চলছে গত রবিবার থেকে।এর মধ্যেই মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়ে গিয়েছে উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষা। পরীক্ষার প্রথম দিনই বৃষ্টিতে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে হয়রানিতে পড়তে হয় বহু পরীক্ষার্থীকে। এমনকী কোথাো কোথাও পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনে জল জমে থাকতেও দেখা গিয়েছে। পাশাপাশি মেঘলা আকাশের কারণে কয়েকটি স্কুলে পর্যাপ্ত আলোর অভাবে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে হয়েছে বলে অভিযোগ আসে অনেক পরীক্ষার্থীর ও তাঁদের অভিভাবকের কাছ থেকে।
হলদিয়ার জনকল্যাণ শিক্ষানিকেতনে পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল মনোহরপুর হাইস্কুল, বাসুদেবপুর হলদিয়া গভঃ স্পন্সরড, লাবণ্যপ্রভা বালিকা বিদ্যালয় ও দোরোকৃষ্ণনগর হাইস্কুলের। একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ, জনকল্যাণ স্কুলে আলোর সমস্যায় আধো অন্ধকারে দু’ঘণ্টা পরীক্ষা দিতে হয়েছে ছেলেমেয়েদের। শুধু তাই নয়, ছাদ থেকে জল পড়ে খাতা ভিজে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে বলে অভিযোগ।
আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতি ও পরীক্ষার্থীদের কথা ভেবে বৃহস্পতিবার উচ্চ-মাধ্যমিক সংসদের তরফে পরীক্ষা শুরুর আগে এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেখানে আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতির জন্য পরীক্ষার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের বদলে অতিরিক্ত ১৫ মিনিট সময় দেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু যাঁদের জন্য এই নির্দেশিকা, এ দিন সেই পরীক্ষার্থীদের অধিকাংশই তা জানতেও পারলেন না। বলা ভাল, তাঁদের জানানোর জন্যও স্কুলের তরফেও কোনও উদ্যোগ ছিল না বলে অভিযোগ। ফলে যে সব পরীক্ষার্থী আবহাওয়ার কারণে অসুবিধায় পড়েছিলেন, তাঁদের ওই বাড়তি ১৫ মিনিট সময় দিতে পারেনি সংশ্লিষ্ট স্কুল।
উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ সূত্রে খবর, এ দিন সকালে পরীক্ষা শুরুর আগে ওই নির্দেশিকা জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক দফতরের আধিকারিক ও পরীক্ষাকেন্দ্রের সেন্টার ইনচার্জ ও হাইস্কুলগুলিকে ই-মেল মারফত জানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সংসদের ওই নির্দেশিকার বিষয়ে বেশিরভাগ স্কুলই জানতে পারেনি বলে অভিযোগ। তমলুকের হ্যামিল্টন হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক গোবিন্দপ্রসাদ শাসমল বলেন, ‘‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রয়োজনে এদিন পরীক্ষায় বাড়তি সময় দেওয়ার বিষয়ে জানতে পারিনি। তবে আমাদের স্কুলে পরীক্ষার্থীদের কোনও অসুবিধা হয়নি। নির্ধারিত সময়েই পরীক্ষা শেষ হয়েছে।’’ স্কুল কর্তৃপক্ষের যুক্তি, সকাল ৯টা নাগাদ পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের ঢুকে পড়তে হয়। তার আগে শিক্ষকেরা পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজে ব্যস্ত থাকেন। ফলে কারও পক্ষে ওই বিজ্ঞপ্তি দেখার সুযোগ হয়নি। বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, পর্যদের এমন উদ্যোগে পরীক্ষার্থীদের সুবিধা হত। এই নির্দেশিকা আগের দিন পাওয়া গেলে তাঁদেরও সুবিধা হত। তা না হওয়াতেই এই ধরনের সমস্যা হয়েছে।
নন্দকুমারের বাগডোবা জালপাই হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক বরুণকুমার সামন্ত বলেন, ‘‘এদিন পরীক্ষা শুরুর কিছুক্ষণ আগে জানতে পারি প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত অসুবিধার কারণে পরীক্ষার্থীদের ১৫ মিনিট অতিরিক্ত সময় দেওয়া যেতে পারে। পরীক্ষার মাঝেই বিদ্যুৎ বিভ্রাটও ঘটেছিল। তবে আমাদের স্কুলে জেনারেটর থাকায় সঙ্গে সঙ্গে আলো দেওয়া হয়। তাই পরীক্ষায় অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয়নি।’’ তমলুকের কুলবেড়িয়া ভীমদেব আদর্শ বিদ্যাপীঠের প্রধানশিক্ষক নকুলচন্দ্র দাস বলেন, ‘‘সংসদের নির্দেশের বিষয়টি এদিন দুপুর ১ টা ২১মিনিট নাগাদ আমাদের স্কুলের মেলে এসেছে। ততক্ষণে পরীক্ষার নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ায় আমরা পরীক্ষার্থীদের অতিরিক্ত সময় দিতে পারিনি।’’
এ ব্যাপারে উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষা পরিচালন কমিটির জেলা যুগ্ম-আহ্বায়ক তরুণকুমার মাইতি বলেন, ‘‘সংসদের নির্দেশিকা প্রতিটি পরীক্ষাকেন্দ্রের সেন্টার ইনচার্জ ও সংশ্লিষ্ট স্কুলে এদিন সকালে ই-মেলে পাঠানো হয়েছিল। কোনও স্কুল কর্তৃপক্ষ যদি ই-মেল না দেখেন, তা হলে দায় তাঁদেরই।’’ তবে এই নির্দেশিকা একদিন আগে দেওয়া যেত কি না, সে প্রশ্নের কোনও উত্তর মেলেনি।