অচলাবস্থা অব্যাহত খড়্গপুর ২ ব্লকের কালিয়াড়া পঞ্চায়েতে। বৃহস্পতিবার দলীয় বৈঠকে জট কাটার ইঙ্গিত মিললেও বাস্তবে শুক্রবারও প্রধান-সহ ন’জন সদস্য পঞ্চায়েত অফিসে এলেন না। তৃণমূল পরিচালিত কালিয়ারা পঞ্চায়েতে প্রধান-সহ ন’জন তৃণমূল সদস্য শুক্রবারও অফিসে না যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে পঞ্চায়েতের কাজ। গুরুত্বপূর্ণ কাজে পঞ্চায়েত অফিসে এসে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মঙ্গলবার বিকেলে এলাকার কয়েকজন যুবক পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে প্রধান ও উপ-প্রধানকে ঘিরে হেনস্থা করেন বলে অভিযোগ। তারপরই বুধবার সকাল থেকে কালিয়ারা পঞ্চায়েতের প্রধান-সহ ন’জন কাজ বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেন। অভিযোগ, হামলাকারী যুবকদের অধিকাংশই এলাকায় তৃণমূলের সমর্থক বলেই পরিচিত। মঙ্গলবার ‘অধিকার প্রকল্প’-এর সুবিধা বন্টনের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে কয়েকজন গ্রামবাসীকে নিয়ে তাঁরা পঞায়েত অফিসে চড়াও হন।
স্থানীয় সূত্রে খবর, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে এর আগেও এরকম ঘটনা ঘটেছে। গীতাঞ্জলি ও অধিকার প্রকল্প নিয়ে বিডিও’র কাছে বেশকিছু অভিযোগও জমা পড়েছে। ফের একই ধরনের ঘটনা ঘটায় পঞ্চায়েত অফিসে যাওয়া বন্ধ করেন ওই ন’জন সদস্য। তাঁরা প্রথমে দলের জেলা নেতৃত্বকে বিষয়টি জানান। তারপরেও হামলাকারীদের শাস্তি না হওয়ায় ওই ন’জন বিডিও’র দ্বারস্থ হন। বিডিও’র থেকে রিপোর্ট নিয়ে মহকুমাশাসক সঞ্জয় ভট্টাচার্য বৃহস্পতিবার বৈঠক ডাকেন। তবে দলের সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নেওয়ার জন্য এ দিন বিকেলে ব্লক তৃণমূল নেতৃত্বের পক্ষ থেকেও বৈঠক ডাকা হয়। বৈঠক শেষে তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক অজিত মাইতি জানান, দলের অভ্যন্তরেই সমস্যার সমাধান হয়ে গিয়েছে। ফলে এ দিন মহকুমাশাসকের ডাকা বৈঠক আর হয়নি। তবে বাস্তবে যে সমস্যা মেটেনি তার প্রমাণ মিলল শুক্রবার।
প্রশ্ন হল, দলীয় নেতার সমস্যা মিটে যাওয়ার দাবি সত্ত্বেও তাঁরা পঞ্চায়েতে গেলেন না কেন?
তৃণমূলের উপ প্রধান কমল দে বলেন, “দলের ব্লক সভাপতির মাধ্যমে আমরা কোনও নির্দেশ পাইনি। আর দুষ্কৃতীদের কোনও শাস্তিও দেওয়া হয়নি। যতক্ষণ না পর্যন্ত দোষীদের শাস্তি দিয়ে কাজের পরিবেশ ফেরানো হবে, ততক্ষণ আমরা যাব না।” তাহলে বৃহস্পতিবার প্রশাসনিক বৈঠক বাতিল করার কারণ কী? উপপ্রধানের দাবি, দলের ব্লক কমিটির বৈঠকে সমস্যা সমাধান হওয়ার আশ্বাস পেয়েছিলাম। তাই যাইনি। একইভাবে পঞ্চায়েত প্রধান সোহাগী বাস্কেও বলেন, “দলের লোক হোক বা বিরোধী, যাঁরা হামলা করেছে তাঁদের গ্রেফতার করতে হবে।” মহকুমাশাসক সঞ্জয় ভট্টাচার্য বলেন, “ওঁরা বলেছিলেন সমস্যা মিটে গিয়েছে। কিন্তু শুক্রবারও কেন অফিস খোলা হয়নি তা আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে দেখব।”
এই জটিলতায় পড়ে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পঞ্চায়েত অফিসে ঘুরেও ‘রেসিডেন্সিয়াল সাটির্ফিকেট’, ‘ইনকাম সার্টিফিকেট’ পাচ্ছেন না তাঁরা। ব্যাহত হচ্ছে একশো দিনের কাজ, ইন্দিরা আবাস যোজনার মতো বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ। সুলতানপুরের বাসিন্দা হাইস্কুলের কর্মী কল্লোল মণ্ডল বলেন, “গত তিন দিন ধরে মানুষ কোনও পরিষেবা পাচ্ছেন না। ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য একটা শংসাপত্র নিতে এসেও ফিরে যেতে হচ্ছে।” তাঁর দাবি, অবিলম্বে সমস্যা মিটিয়ে পঞ্চায়েতে কাজের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। যদিও শুক্রবার অজিত মাইতি ফের দাবি করেন, সমস্যা মিটে গিয়েছে। শনিবার সকাল ৯টায় ওই পঞ্চায়েত সদস্যদের নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে। দলের কেউ যদি এই হামলায় জড়িত থাকেন, তাকে শাস্তি দেওয়া হবে।