পুলিশ-প্রশাসন নিষ্ক্রিয়
Child Security

নজরই নেই, প্রশ্নের মুখে শিশু সুরক্ষা

শুক্রবার রাতে করণদিঘির ভুলকি এলাকায় লোহার কাঠামো ঝালাইয়ের দোকানে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায় বছর ষোলোর রঞ্জন সিংহ।

মেহেদি হেদায়েতুল্লা

শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৮
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

উত্তর দিনাজপুরের করণদিঘিতে নাবালক শ্রমিকের মৃত্যুতে জেলা জুড়ে শিশু সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শ্রম দফতর থেকে শিশু সুরক্ষা কমিশন— নানা স্তরে কমিটি ও নজরদারি সত্ত্বেও নাবালকদের কী করে এ কাজে লাগানো হচ্ছে, সেই প্রশ্নের পাশাপাশি প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা ও পুলিশি ভূমিকার সমালোচনা শুরু হয়েছে।

শুক্রবার রাতে করণদিঘির ভুলকি এলাকায় লোহার কাঠামো ঝালাইয়ের দোকানে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায় বছর ষোলোর রঞ্জন সিংহ। বাড়ি খুরকা গ্রামে। রসাখোয়া হাই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র রঞ্জন প্রতিদিন মামা দয়াল সিংহের সঙ্গে ভুলকির ওই ঝালাই দোকানে কাজ করত, এমন অভিযোগ উঠেছে পরিবার ও স্থানীয়দের কাছ থেকে। সে দিন রাতে লোহার কাঠামো ঝালাই করার সময় হঠাৎ বৈদ্যুতিক শর্ট-সার্কিট হলে রঞ্জন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। দ্রুত তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হলেও মৃত ঘোষণা করা হয়। পরে পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায়। অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। দোকানের মালিক আহমেদ হোসেনকে পুলিশ আটক করলেও লিখিত অভিযোগ না থাকায় পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রশ্ন উঠছে, নাবালককে দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করানো একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। সেখানে অভিযোগ না হলেও কেন পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থা নেয়নি? স্থানীয়দের বক্তব্য, মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের ই ‘নিষ্ক্রিয়তা’ নজরদারির অভাবকে প্রকট করেছে।

এ দিকে, জেলা শিশু সুরক্ষা কমিটি ঘটনাটির তদন্ত শুরু করেছে। কমিটির জেলা আধিকারিক অসিতরঞ্জন দাস বলেন, “নাবালককে দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করানো বেআইনি। বিষয়টি পুলিশকে জানিয়ে রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে।” রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের তরফে চেয়ারপার্সন তুলিকা দাস বলেন, “নাবালক এবং শিশু শ্রমিক ব্যবহার না করার বিষয়ে আমরা সচেতন করছি। তবে সব ঘটনা প্রশাসনের নজরে আসে না। কেউ এমন কিছু দেখলে দ্রুত স্থানীয় প্রশাসনকে জানান।” জেলায় শ্রম দফতর, শিশু সুরক্ষা ইউনিট, ব্লক ও গ্রাম স্তরের কমিটি, সব মিলিয়ে অন্তত পাঁচটি সরকারি স্তর রয়েছে শিশু শ্রম রুখতে। তবু রঞ্জনের মতো কিশোরেরা দোকান, গ্যারেজ, যন্ত্রাংশ তৈরির ইউনিটে ঝুঁকির কাজ করছে। স্থানীয়দের দাবি, কোনও দফতর থেকেই কেউ নিয়মিত পরিদর্শন করেন না। ফলে শিশু শ্রম রোধে কোনও বাস্তব প্রয়াস দেখা যায় না।

রঞ্জনের পরিবারে আর্থিক অবস্থা খারাপ। চার বছর আগে বাবার মৃত্যু হয়েছে। মা অসুস্থ। দুই ভাই, এক বোনের সংসারে পড়াশোনার পাশাপাশি পরিবারের হাল ফেরাতে রঞ্জন কাজ করত বলে জানান তাঁর মামা দয়াল সিংহ। তিনি বলেন, “দোকান মালিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।” কিন্তু ক্ষতিপূরণ নয়, প্রশ্ন এখন প্রশাসনিক দায় নিয়ে। নাবালক শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে গেল কী করে? কেন নিয়মিত তদারকি নেই? পুলিশের ভূমিকাও কেন এত প্রশ্নের মুখে? নজরদারি ও আইন প্রয়োগে ফাঁক রয়ে গেলে এমন দুর্ঘটনা থামবে না, বলছেন স্থানীয়েরা। তাঁদের দাবি, ঘটনায় দায় নির্ধারণ করে কঠোর পদক্ষেপ করুক প্রশাসন। নইলে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা বাড়বে। আর এইভাবে প্রাণ সংশয় নিয়ে কাজ করতে হবে। রঞ্জনের মৃত্যু ফের মনে করিয়ে দিল, জেলায় শিশু শ্রমের বাস্তবতা এখনও ভয়ঙ্কর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন