বিষণ্ণতা কাটেনি গোঁসাইপুরে

টিনের ছাউনি দেওয়া বেড়ার ঘরটিতে ইতস্তত পড়ে রয়েছে বই ও খাতা। সাইকেলটিও উঠোনের একপাশে হেলানো। যে সাইকেলে নিয়ে ৪৮ ঘন্টা আগে গত শনিবার সাত সকালে হিলির গোঁসাইপুর থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে লস্করপুরে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে গিয়েছিল ওই টিনের বাড়ির বাসিন্দা কিশোরী, সপ্তম শ্রেণীর পড়ুয়া ছাত্রী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৬ ০৩:০০
Share:

এসপি’র দফতরে জেলা কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা। নিজস্ব চিত্র।

টিনের ছাউনি দেওয়া বেড়ার ঘরটিতে ইতস্তত পড়ে রয়েছে বই ও খাতা। সাইকেলটিও উঠোনের একপাশে হেলানো। যে সাইকেলে নিয়ে ৪৮ ঘন্টা আগে গত শনিবার সাত সকালে হিলির গোঁসাইপুর থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে লস্করপুরে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে গিয়েছিল ওই টিনের বাড়ির বাসিন্দা কিশোরী, সপ্তম শ্রেণীর পড়ুয়া ছাত্রী।

Advertisement

বাড়ি ফেরার পথে জমির আল রাস্তায় তাকে আটকে তল্লাশির নামে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এক কর্তব্যরত জওয়ানের বিরুদ্ধে। তারপরে বাড়ি ফিরে আত্মহত্যা করে ওই ছাত্রী। বালুরঘাট হাসাপাতালে ময়নাতদন্তের পরে রাতে তার মরদেহ ফিরতেই এলাকা জুড়ে শুরু হয় কান্নার রোল। সোমবারেও ওই পরিবারের বাড়ি থেকে কান্নার শব্দ এসেছে। ভেঙে পড়েছেন প্রতিবেশীরাও। গ্রামের পরিবেশ সোমবারও থমথমে ছিল।

গরমের জন্য স্কুল ছুটি। তবে ঘটনার খবর পেয়ে শিক্ষক থেকে কয়েকজন সহপাঠী ওই ছাত্রীর বাড়ি গিয়ে শোকার্ত বাবা ও মার সঙ্গে দেখা করে সমবেদনা জানান। তাঁদের কথায়, লাজুক ও শান্ত স্বভাবের ছিল মেয়েটি। সে কারণে হয়তো অপমান সহ্য করতে না পেরে চরম গ্লানিতে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এতে ওই দিনমজুর পরিবারটি ক্ষতি কী ভাবে পূরণ হবে, তা নিয়েও তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন। রবিবার ছাত্রীর আত্মহত্যার খবরের পর এলাকায় বিএসএফ আধিকারিকদেরও ভিড় ছিল। এ দিন যেন ওই এলাকায় বিএসএফ জওয়ানদের পাহারা ও আনাগোনা বেশি করে চোখে পড়ায়, বাসিন্দাদের সিঁটিয়ে থাকতেও দেখা যায়। ঘটনার প্রায় ২৪ ঘন্টা বাদে এ দিন দুপুরে হিলি থানার পুলিশ গ্রামে গিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।

Advertisement

তবে সীমান্ত লাগোয়া ওই গোঁসাইপুরে এ দিনও মৃত ছাত্রীর পরিবারের পাশে গিয়ে কোনও নেতা কিংবা জনপ্রতিনিধিকে সমবেদনা জানাতে দেখা যায়নি। এলাকাটি বালুরঘাট বিধানসভা কেন্দ্রের অধীন। এই কেন্দ্রের বিদায়ী বিধায়ক-মন্ত্রী তথা এ বারের তৃণমূল প্রার্থী শঙ্কর চক্রবর্তী কিংবা জোটের আরএসপি প্রার্থী বিশ্বনাথ চৌধুরী এলাকায় থাকলেও ঘটনাস্থলে যাননি। বিশ্বনাথবাবু ব্যস্ততার কারণ দেখিয়েছেন। শঙ্করবাবুর সঙ্গে যোগাযোগই করা যায়নি। তিনি ফোনও ধরেননি। তবে জেলা কংগ্রেস হতদরিদ্র ছাত্রীর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে দোষী জওয়ানের গ্রেফতারের দাবিতে সরব হয়েছে।

এ দিন জেলা কংগ্রেস সভাপতি নীলাঞ্জন রায় মৃতার বাবাকে নিয়ে বালুরঘাটে জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করে অভিযুক্ত বিএসএফ জওয়ানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে গ্রেফতারের দাবি জানান। পাশাপাশি জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারকে চিঠি দিয়ে পরিবারটিকে আর্থিক ভাবে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আর্জিও জানানো হয়েছে। এদিন বালুরঘাটের সাংসদ অর্পিতা ঘোষ জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করে মৃত ছাত্রীর তরফে জওয়ানের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগের কপি চেয়েছেন। অর্পিতা বলেন, ‘‘অভিযোগের প্রতিলিপি সহ গোটা ঘটনাটি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে জানিয়ে ব্যবস্থা নিতে আবেদন জানাব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement