গাছে জড়িয়ে রয়েছে বাড়ির টিন। — নিজস্ব চিত্র।
কয়েক মিনিটের ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে গেল হলদিবাড়ি শহরের একটি অংশ। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে তিনটি গ্রামও। সোমবার রাত দুটো নাগাদ ঝড় ওঠে। শহরের অসংখ্য বাড়ি, দোকান, গুদাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হলদিবাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির এলাকার তিনটি গ্রামেও প্রচুর বাড়িঘর ভেঙেছে। অসংখ্য গাছ পড়েছে। তবে ঝড়ে কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
হলদিবাড়ি পুরসভা সুত্রে জানা যায় যে, হলদিবাড়ি শহরে ঝড়ে হলদিবাড়ি শহরের ২, ৩, ৪, ৬, ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পুরসভার চেয়ারম্যান তরুণ দত্ত বলেন, “৩০০টি বাড়ি, বেশ কিছু দোকান, গুদাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শহরের মধ্যে ২০০টি গাছ পড়েছে।” ঝড়ের দাপটে হলদিবাড়ি হাইস্কুলের ভিতরে দোতলা ভবনের উপর গাছ পড়েছে। হাইস্কুল লাগোয়া পুরোন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিনের চাল উড়ে গিয়ে গাছে আটকে যায়। বিডিও অফিসের সমাজভিত্তিক বনসৃজন প্রকল্পের গাছগুলিও পড়ে গিয়েছে। পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে হেমকুমারী, জ্ঞানদাস এবং জঙ্গলবস গ্রামেও ব্যাপক ক্ষতি হয়। হলদিবাড়ি ব্লক প্রশাসন সুত্রে জানা যায় অন্তত ১০০টি বাড়ি ভেঙেছে। ২০০টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং প্রায় ন’শো গাছ পড়েছে। হলদিবাড়ির বিডিও দিব্যেন্দু মজুমদার বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের জন্য ত্রিপল পাঠানো হয়েছে।”
দোকানের উপরে ভেঙে পড়েছে গাছ। হলদিবাড়িতে ছবিটি তুলেছেন রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়।
হলদিবাড়ি শহরে ঝড়ের তান্ডবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হলদিবাড়ি বাজার এবং হাসপাতাল সংলগ্ন মেলার মাঠ এলাকা। হলদিবাড়ি বাজারে স্টেশনের পাশে রোজকার হাটে ঢোকার মুখে একটা গাছ পড়ে রাস্তা বন্ধ হয়ছে। দু’টি দোকান ভেঙেছে। বাজারে কয়েকটি গুদামের টিনের চাল উড়ে গেছে। হলদিবাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক বিশ্বজিৎ সরকার বলেন, “ক্ষতির পরিমান প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা।”
বাসিন্দারা জানান, ঝড়ের আগেই বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। রাত দুটোর সময় আচমকা ঝড় আসে। হলদিবাড়ি দমকল কেন্দ্রে রাতে ডিউটি করছিলেন কর্মী পরিমল পাল এবং প্রাণগোবিন্দ মৈত্র। তাঁরা বলেন, “আমাদের নাইট ডিউটি ছিল। হঠাৎ রাত দুটোর সময় গুরু গুরু আওয়াজ সঙ্গে বিকট শব্দ তুলে ঝড় উঠলো। আমরা ভাবলাম ভূমিকম্প। পরে বুঝলাম ঝড় উঠেছে। এক মিনিটের মধ্যেই ঝড় কমে গেল।” হাসপাতালের কর্মী আবাসনের বাসিন্দা শ্যামল দাসের ঘরের ওপর গাছ পড়েছে। তিনি রাতেই বাড়ি ছেড়ে হাসপাতালে গিয়ে আশ্রয় নেন। মেলার মাঠ এলাকার বাসিন্দা সন্দীপ ঘোষ বলেন, “রাতে প্রবল শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। উঠে দেখলাম টিনের চালের ওপর গাছ পড়েছে। বাড়িতে আরও একটি গাছ পড়ে আছে।”