দূরত্ব বজায় রেখেই পাশাপাশি

‘প্রশাসনিক সৌজন্য’ দেখিয়ে সরকারি মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জিটিও চিফ বিমল গুরুঙ্গ একসঙ্গে চলার বার্তা বুধবার দার্জিলিঙের ডালিতে তিন জেলার পুলিশের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে এমনই দৃশ্য দেখা গিয়েছে। কিন্তু, অনুষ্ঠান ও তার পরের কর্মকাণ্ড স্পষ্ট করে দিল, রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার অবস্থান থেকে উভয় তরফ পরস্পরের উপরে চাপ বজায় রেখেই চলবেন।

Advertisement

অনির্বাণ রায় ও রেজা প্রধান

শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:০৯
Share:

বুধবার দার্জিলিঙে সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা গেল জিটিএ প্রধান তথা গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রধান বিমল গুরুঙ্গকে। প্রশাসনিক সৌজন্য দেখিয়ে একসঙ্গে চলার বার্তাও দিলেন দু’জনে। কিন্তু তারপরেই বোঝা গেল, রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতায় উভয় তরফ পরস্পরের উপরে চাপ বজায় রেখেই চলবেন। ছবি: রবিন রাই।

‘প্রশাসনিক সৌজন্য’ দেখিয়ে সরকারি মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জিটিও চিফ বিমল গুরুঙ্গ একসঙ্গে চলার বার্তা বুধবার দার্জিলিঙের ডালিতে তিন জেলার পুলিশের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে এমনই দৃশ্য দেখা গিয়েছে। কিন্তু, অনুষ্ঠান ও তার পরের কর্মকাণ্ড স্পষ্ট করে দিল, রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার অবস্থান থেকে উভয় তরফ পরস্পরের উপরে চাপ বজায় রেখেই চলবেন।

Advertisement

যেমন, গত লোকসভা ভোটে দার্জিলিঙের পরাজিত তৃণমূল প্রার্থী তথা ভারতীয় ফুটবল দলের প্রাক্তন অধিনায়ক ভাইচুং ভুটিয়াকে ‘বাংলার গৌরব’ সম্মান তুলে দেওয়া হল ওই মঞ্চে। যা তুলে দেওয়ার সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সামিল হলেন জিটিএ চিফ গুরুঙ্গও। আবার অনুষ্ঠানের পরে মুখ্যমন্ত্রী যখন টাইগার হিলে পর্যটন প্রসারের জন্য কী করা যায় দেখতে গেলেন, সেই সময়ে গুরুঙ্গ জামুনিতে গিয়ে কৃষিমেলায় নানা পুরস্কার বিলি করে জানালেন, পাহাড়ের যাবতীয় উন্নয়ন জিটিএ-ই করছে ও করবে।

শুধু তা-ই নয়, মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি জানিয়ে দেন, আজ বৃহস্পতিবার জিটিএ-র প্রতিনিধিদের নিয়ে তাঁরা রিচমন্ড হিলে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন। মোর্চার অন্দরের খবর, জিটিএ-র বেশ কয়েকটি দফতর হস্তান্তরে জটিলতার নিষ্পত্তি কেন হয়নি তা নিয়ে ক্ষোভ জানানো হবে। তবে জিটিএ চিফ ওই প্রতিনিধি দলে থাকবেন না। রোশন বলেন, “বৃহস্পতিবার জিটিএ চিফ পাহাড়ের বাইরে যাচ্ছেন। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করব।”

Advertisement

মোর্চা সূত্রের খবর, বৈঠকে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী, রাজ্য সরকার জিটিএকে দফতর হস্তান্তর-সহ খাদ্য দফতরের কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে নালিশ জানানো হবে। বিকেলেই, মোর্চা সূত্রে জানানো হয়েছে, আজ, বৃহস্পতিবার দলনেতা তথা জিটিএ চিফ গুরুঙ্গ পাহাড় ছাড়ছেন। শুক্রবার ম্যালে নেতাজি জয়ন্তী পালনের মঞ্চে গুরুঙ্গ থাকছেন না। মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা অনিত থাপার দাবি, “বিমল গুরুঙ্গের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল নেপালে যাচ্ছেন।” দলের আরকেটি সূত্র অবশ্য বলছে, “দিল্লিতে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানেও দলীয় প্রধান যেতে পারেন।”

পাল্টা চাপ বজায় রাখছে রাজ্যও। আজ, বৃহস্পতিবার তামাঙ্গ বোর্ডের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। বছর দুয়েক আগে লেপচা এবং পরে তামাঙ্গ বোর্ড গঠনও করেন ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আলাদা রাজ্যের দাবির মধ্যেই গড়া বোর্ডগুলি নিয়ে মোর্চা প্রশ্নও তোলে। তাঁদের অভিযোগ ছিল, “বিভাজনের রাজনীতি করছে রাজ্য।” পাহাড় সফরে এসে সেই তামাঙ্গ বোর্ডের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিত থাকাটা পাল্টা চাপ বলেই মনে করছে পাহাড়ের রাজনৈতিক নেতারা।

সেই সঙ্গে গুরুঙ্গের সামনেই ভাইচুংকে পুরস্কৃত করে, দার্জিলিং থেকে খেলোযাড় বাছাইয়ের দায়িত্ব দিয়ে ‘অন্য’ বার্তাও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাহাড়ের তৃণমূলের অন্যতম মুখ ভাইচুংকে সামনে রেখে গুরুঙ্গকে রাজনৈতিক বার্তাও দেওয়া হয়েছে বলে তৃণমূলের অন্দরেই আলোচনা শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য ভাষণে রাজনৈতিক কোনও কথা বলেননি। মাত্র নয় মিনিটের বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, “দার্জিলিংকে আমি ভালবাসি। এখানে উন্নয়নে সাহায্য প্রয়োজন। রাজ্য সরকার উন্নয়নের কাজ করছেন। জিটিএ-এ কাজ করছে। সকলে মিলে একসঙ্গে কাজ করে উন্নযন করতে হবে।” কাঞ্জনজঙ্ঘা এবং পাহাড় হাসছে বলে এদিনও দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসনিক সৌজনে পিছিয়ে যাননি গুরুঙ্গও। নিজের বক্তব্যে রাজ্য পুলিশের প্রশংসা করেছেন। ভাইচুঙের দাবি করা পাহাড়ে খেলার মাঠ তৈরিতেও জিটিএ সাহায্য করবে বলেও জানিয়েছেন।

অনুষ্ঠানের শেষে মুখ্যমন্ত্রী টাইগার হিল দেখতে বেরিয়ে যান। পরে দার্জিলিং শহরের ম্যাল এলাকায হেঁটে ঘুরে জনসংযোগ করেন। পুলিশ এবং প্রশাসনের আধিকারিকদের নিযে বৈঠকও করেন। রোশন গিরিকে নিয়ে গুরুঙ্গ চলে যান জামুনিতে। সেখানে কৃষিমেলায় পাহাড়ের কৃতী পড়ুযাদের জিটিএ-এর তরফে অনুদান দেন। বাসিন্দাদের ঘর তৈরির টাকাও বিলিও করা হয়। সরকারি মঞ্চে সৌজন্য পাল্টা সৌজন্য চললেও, দিনের শেষে সরকারি অনুদান বিলি-সহ জনপ্রিয় কর্মসূচিতেও দুপক্ষই বুঝিয়েছেন, পাহাড়ের এক ইঞ্চি জমি তাঁরা ছাড়তে রাজি নয।

টাইগার হিলে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার লক্ষ্যের কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রীর। পুলিশ আউটপোস্ট ছাড়াও গ্যালারি তৈরি করে পর্যটকেরা বসে সূর্যোদয় দেখার ব্যবস্থাও কথাও জানান। পুলিশের মঞ্চ থেকে পুলিশ ম্যারাথনের পুরস্কার, বাইক, স্কুটি এবং সরকারি অনুদান বিলি করা হয়েছে। পরে সপার্ষদ কেভেন্টার্সয়ে গিয়ে চা খান মুখ্যমন্ত্রী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement