প্রতীকী ছবি।
গোলাপি নোট-টোট নয়। ঝনঝন করে স্রেফ কিছু খুচরো ফেলে দিলেই মিলে যাবে সব!
ফেনিল সমুদ্র। সোনালি বালুতট। কোণার্কের চাকা। এবং অবশ্যই... জয় জগন্নাথ!
রাস্তার উপরে আড়াআড়ি ঢাউস ফ্লেক্স ঝুলছে। লালের উপরে সাদা হরফে বড় করে লেখা— ‘খুচরো কয়েন দিয়ে পুরী চলুন।’ তার একটু নীচে— খরচ: ২৬৫০ টাকা (আহার, বাসস্থান ও যাতায়াত-সহ)।
লক্ষ্মীর ভাঁড় ভাঙুন, ভিক্ষার ঝুলি উপুড় করুন, টিনের তোরঙ্গের খাঁজ-খোঁজ হাতড়ে ফেলুন। খুচরো দিতে পারলেই হল! টিকিট পাকা!
কিন্তু যে শহরে এ হেন বিজ্ঞাপন পড়েছে, সেই নবদ্বীপে এত হ্যাপাও করতে হবে না ক’টা খুচরোর জন্য। বরং ভোর থেকে রাত হাটে-বাজারে খুচরোর ঝনঝনানি শুনে মাথা ঝনঝন করছে অনেকেরই। বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের। পোঁটলায় বাঁধা বিশ-তিরিশ হাজারের রেজগি ঘরে নেই, এমন কারবারি খুঁজে বের করা শক্ত! ব্যাঙ্ক বা খদ্দের এত খুচরো নিতে রাজি নয়। নবদ্বীপ জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির বাক্সে খুচরোর অঙ্ক আঠেরো লাখ ছাড়িয়েছে!
আর এ নিয়ে মাথা ঘামাতে গিয়েই খুচরো খসিয়ে পুরী ভ্রমণের আইডিয়া খেলে গিয়েছে প্রাচীন মায়াপুরের দুই বন্ধুর মাথায়। গৌতম পোদ্দার আর দিলীপকুমার সাহা— প্রথম জন নুনের কারবারি, দ্বিতীয় জন মিষ্টির। আগে এক বার বাসে পুরী ভ্রমণ করানোর অভিজ্ঞতাও আছে তাঁদের।
এক দিন তাঁদের আড্ডায় সদ্য পুরী ঘুরে আসা এক বন্ধু বলে ওঠেন, ‘‘আরে, আমি তো ষোলো হাজার টাকা খুচরো নিয়ে গিয়েছিলাম। পুরীতে অসুবিধাই হয়নি। বস্তা ভরে নিয়ে গেলেও সমস্যা হত না!’’
ব্যস! দুই বন্ধু ঠিক করে ফেলেন, কোজাগরী পার করে ৯ অক্টোবর নবদ্বীপ থেকে বাস ছাড়বে বিকেল ৪টেয়। ১৪ অক্টোবর ফেরা। ফ্লেক্স টাঙাতেই হইহই। গৌতম বলেন, “প্রথমে ভয়ে-ভয়ে একটা বাস ভাড়া করেছিলাম। পরে লোকের উৎসাহের চোটে আরও একটা বাস নিতে হয়েছে।”
মহাপ্রভুর ভিটে থেকে নীলাচলে চলল খুচরোর পাহাড়!