চোষক দিয়ে হাঙর বা অন্য কোনও সামুদ্রিক প্রাণীর শরীর থেকে রক্ত খায় এরা। উল্টে আবার তাদের নিজের শরীরের রক্তেই তাদের রান্না করে সুস্বাদু পদ উপভোগ করেন মানুষ!
জুলিয়াস সিজারের ব্যাঙ্কোয়েটের অন্যতম লোভনীয় পদ নাকি ছিল এটিই। রক্তে স্নাত ল্যাম্প্রে। এক সময় সেটিই নাকি ছিল ইউরোপের একটা অংশের মানুষের প্রিয় খাবার হযে উঠেছিল।
মধ্যযুগে উৎসব মানেই এই পদ রান্না হত বাড়িতে বাড়িতে। সেই রক্তে ভাত মাখিয়ে এক সময় নাকি উপভোগ করে খেতেন পর্তুগালের মানুষ।
আজও প্রতি বছর জানুয়ারি থেকে এপ্রিল ল্যাম্প্রে উৎসব পালন করে পর্তুগাল। এই সময় পর্তুগালের প্রতিটি রেস্তোরাঁয় এই পদ পাওয়া যায়।
ল্যাম্প্রে অন্য প্রাণীর রক্ত শুষে খায় বলেই নাকি শাস্তি হিসাবে তার রক্তেই তাকে রান্না করা হয়। ল্যাম্প্রে নিয়ে এ রকম নানা কথা শোনা যায়। কিন্তু এই ল্যাম্প্রে আসলে কী?
ল্যাম্প্রে হল এক রকম মাছ। লম্বা এবং গোলাকার আকারের বহু প্রাচীন এই মাছ। ল্যাম্প্রের বিশেষত্ব হল এদের চোয়াল নেই।
অথচ মুখের মধ্যে অসংখ্য ক্ষুদ্র দাঁত রয়েছে। এর ফলে এদের দেখতে ঠিক মাছের মতো নয়, সামুদ্রিক দানবের মতো।
এদের চোয়াল থাকে না বলে খাবার ধরে খেতে পারে না। জলজ প্রাণীদের গায়ে নিজেদের গোলাকার মুখ লাগিয়ে তাদের রক্ত শুষে খায়। সে কারণে এরা সম্পূর্ণ পরজীবী প্রাণী।
অন্য প্রাণীদের গায়ে অসংখ্য দাঁতযুক্ত মুখ দিয়ে আটকে থাকে এবং এই ভাবেই ওই সমস্ত প্রাণীদের সঙ্গে এক জায়গা থেকে অন্যত্র যাতায়াতও করে।
চোয়ালবিহীন মাছেদের মধ্যে ল্যাম্প্রে ছাড়াও আরও একটি মাছ রয়েছে। সেটি হল হ্যাগফিশ।
ইউরোপের একটা অংশের মানুষের কাছে ল্যাম্প্রে উপভোগ্য হলেও উত্তর আমেরিকার মানুষ আবার এদের ভয় পান।
উত্তর আমেরিকার গ্রেট লেক-এ বৃহদাকার ল্যাম্প্রের দেখা মেলে। কিন্তু সেখানকার মানুষের কাছে সেগুলো জলজ দানব।
বড় বড় মাছ বা অন্যান্য জলজ প্রাণীর শরীর থেকে চোষক দিয়ে রক্ত শুষে নিয়ে তাদের মেরে ফেলে ল্যাম্প্রে। তাই মানুষ ওই হ্রদে নামতে ভয়ও পান। যদিও মানুষের শরীর থেকে রক্ত শুষে নেওয়ার কোনও তথ্য এখনও নেই।