সান ফ্রান্সিস্কোর ‘বে এরিয়া প্রবাসী’-র দুর্গাপুজো।
সাবেকি পুজো।শুনলেই একটা ভাললাগার সুর মন ছুঁয়ে যায়। সম্ভ্রমপূর্ণ অনুরণন হয় চেতনার আকাশে। বাংলার গ্রামে, শহরতলিতে ও খাস কলকাতায় এমন কিছু প্রাচীন মহিমামণ্ডিত পুজো আমরা দেখতে পাই কিন্তু ভারতের বাইরে? তা-ও আবার আমেরিকায়?
সান ফ্রান্সিস্কো বে এরিয়াতে এমনই একটি পুজো প্রায় অর্ধশতাব্দী ছুঁতে চলল। পুজোটি হল ‘বে এরিয়া প্রবাসী’-র দুর্গাপুজো। ১৯৭৪ সালের ২৫ অক্টোবরে যা শুরু হয়েছিল। বে এরিয়ার বিভিন্ন নিকট-সন্নিবিষ্ট শহরগুলির বাঙালিরা একত্রিত হয়ে যে পুজো শুরু করেছিলেন, তা বছরের পর বছর, দশকের পর দশক ধরে কলেবরে বাড়তে বাড়তে এখন গোটা আমেরিকার অন্যতম প্রাচীন এবং বৃহত্তম পুজো।
কয়েক হাজার মানুষ উপস্থিত থাকেন তিনদিন ব্যাপী এই পুজোয়। নান্দনিক সুন্দর প্রতিমা, আন্তরিক পূজাপচার এবং চিত্র প্রদর্শনী। আল্পনা দেওয়া ও শঙ্খধ্বনি প্রতিযোগিতা, ঢাক ও ধুনুচিনাচ, আদ্যন্ত বাঙালি খাওদাওয়ার ব্যবস্থা জমিয়ে দেয় বিশাল মণ্ডপ। চলে স্থানীয় কলাকুশলীদের আবৃত্তি, সঙ্গীত, নৃত্য, নাটক ইত্যাদির পরিবেশনা।সর্বোপরি থাকে ভারতবর্ষ থেকে আগত স্বনামধন্য শিল্পীদের অনুষ্ঠান। সবমিলিয়ে মহোৎসব হয় ‘বে এরিয়া প্রবাসী’-র পুজোয়। প্রকাশিত হয় বাংলা শারদীয়া পত্রিকাও।
এ বছরের পুজোর আয়োজন অক্টোবরের ৯ এবং ১০ তারিখে। হেওয়ার্ড এর শ্যাবো কলেজে। ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্য ও এলামিডা কাউন্টির নির্দিষ্ট করে-দেওয়া কোভিড সম্পর্কিত নিয়মাবলি মেনে চলা হচ্ছে পুজোয়।কবিতা কৃষ্ণমূর্তির কনসার্ট এ বছরের একটি প্রধান আকর্ষণ। সঙ্গে বোধন, সপ্তমীর পুজো, অষ্টমীর অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ইত্যাদি।
কিন্তু শুধু পুজো বা কৃষ্টিমূলক থিম নয়। ‘বে এরিয়া প্রবাসী’-র হৃদয়ে সর্বদা প্রবাহিত থাকে বাংলার মানুষের জন্য কিছু করার তাগিদ। আয়লা, আমপান ও করোনার জন্যও সভ্যগণ ঝাঁপিয়ে পড়েছেন মানুষের সেবায়। প্রায় দেড় বছর ধরে আমেরিকা ও ভারতে নিরলস কাজ করে চলেছেন। সরবরাহ করেছেন বহু পিপিই, অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর, সিলিন্ডার, মাস্ক ইত্যাদি। ব্যবস্থা করেছেন গৃহহীন মানুষদের খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের।
আসলে এটিই এই সংস্থার সত্যিকারের পুজো— আর্ত মানুষের সেবা। এবারেও মা এসেছেন। তিনি সর্বমঙ্গলময়ী করোনাসুরের দমন ও আগামী বছর জাতি, ধর্ম, দেশ নির্বিশেষে মানুষের আনন্দময় হাসি আর যেন মাস্কের আড়ালে না থাকে— এটাই মায়ের কাছে প্রার্থনা। প্রার্থনা, যেন মানুষের হাসি ফুটে ওঠে শারদীয় সকালে কাশফুলের মতো।
(লেখক সানিভেল, ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দা)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy