‘আমরা হেরে যাইনি’ (১১-৪) প্রবন্ধে জহর সরকার আর জি করের আন্দোলন থেকে সাম্প্রতিক চাকরিহারাদের আন্দোলন এবং তার প্রভাব বিষয়ে নির্ভীক ও যুক্তিযুক্ত বিশ্লেষণ করেছেন। আর জি কর-কাণ্ড, রেশন বণ্টন, একশো দিনের কাজ, গৃহ নির্মাণ প্রকল্পে যে ভাবে দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে, তা দেখে সাধারণ নাগরিক সমাজ বিস্মিত। শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা সাফাই দিতে গিয়ে যা-ই বলুন না কেন, তাঁদের সীমাহীন দুর্নীতির কারণেই যোগ্য ও মেধাবী ছেলেমেয়েরা চাকরি হারিয়েছেন, তা অস্বীকার করা যায় না। সুপ্রিম কোর্ট এসএসসি ও রাজ্য সরকারকে বার বার ওএমআর বা তার মিরর কপি জমা দিতে বলেছিল। এসএসসি বা রাজ্য সরকার তা যদি যথাসময়ে দিয়ে দিত, তা হলে যোগ্য ও মেধাবী ব্যক্তিরা চাকরি হারিয়ে আজ এমন দুরবস্থায় পড়তেন না।
দুর্নীতির কবলে পড়ে যখন রাজ্যবাসী দিশাহারা, তখন রাজ্যের মানুষদের নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বৃহত্তর ও টানা আন্দোলনের প্রয়োজন ছিল। সেই আন্দোলন হচ্ছে কোথায়? সেই আন্দোলনের তেজ তো ঝিমিয়ে পড়েছে, এখন এই বাংলায় প্রকট শুধু ধর্মীয় ভেদাভেদ নিয়ে রাজনীতি। সেই আবহে মানুষের দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনের স্বর চাপা পড়তে শুরু করেছে। হাজার হাজার ছেলেমেয়ে চাকরি হারিয়েছেন। চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে তাঁদের জীবনে। একই সঙ্গে বিপর্যয় নেমে এসেছে রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থায়।
এই ঘটনার সামাজিক অভিঘাত আমার আপনার সকলের ঘরেই ধাক্কা দিতে বাধ্য। সুতরাং বিরোধের স্বর হারালে চলবে না।
প্রদীপ কুমার সেনগুপ্ত, ব্যান্ডেল, হুগলি
কালিমালিপ্ত
জহর সরকার তাঁর ‘আমরা হেরে যাইনি’ প্রবন্ধে পশ্চিমবঙ্গের দুর্নীতিগ্রস্ত শাসকদের ছবিটি যথাযথ ভাবে তুলে ধরেছেন। সুপ্রিম কোর্ট তার রায়ে ২০১৬ সালের প্যানেলের প্রায় ২৬০০০ শিক্ষকের চাকরি বাতিল করেছে। মাত্রাহীন দুর্নীতি, কোটি কোটি টাকায় চাকরি বিক্রির তথ্য সিবিআই প্রকাশ্যে আনে। তার পরিপ্রেক্ষিতে এই রায়।
প্রশাসন হয়তো ভেবেছিল, এই দুর্নীতি চাপা দিতে সক্ষম হবে। কিছু দিন পর পার্টির ক্রমবর্ধমান দুর্নীতি লেখককেও সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করে। যোগ্য শিক্ষকদের আন্দোলনের ফলে সরকারের এখন নাজেহাল অবস্থা। শিক্ষামন্ত্রী যোগ্য শিক্ষকদের মুখ্যমন্ত্রীর উপর আস্থা রেখে আন্দোলন থেকে বিরত থাকতে উপদেশ দিয়ে চলেছেন। কিন্তু তাতে তাঁরা রাজি নন।
গত বছর অগস্ট মাস থেকে অভয়া কাণ্ডের জেরে প্রশাসন বিদ্ধ। তার উপর নবোদ্ভূত এই পরিস্থিতি সরকারের ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করেছে। ২০২৬-এ ফের বিধানসভা নির্বাচন। সরকারকে টিকিয়ে রাখতে নানা চেষ্টা চলছে। তা কতটা সার্থক হবে সময় বলবে।
জহর সাহা, কলকাতা-৫৫
প্রয়োজন ছিল
জহর সরকারের ‘আমরা হেরে যাইনি’ প্রবন্ধ প্রসঙ্গে কিছু কথা। লেখক হয়তো তাঁর দীর্ঘ প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা বা আইনসভার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আইনি পথে যোগ্য শিক্ষকদের পুনর্বহালের রাস্তা খুঁজতে পারতেন। কিন্তু সে ভাবে সেই আলোচনা করেননি। সেই আলোর দিকের অবশ্য সন্ধান পাওয়া গিয়েছে তূর্য বাইনের ‘প্রতিশ্রুতি পূরণ কোন পথে’ (১০-৪) শীর্ষক প্রবন্ধটিতে।
তবে রায়ের অভিঘাতে বিহ্বল হয়ে সাধারণ মানুষও সমাজমাধ্যমে নানা সমাধান-সূত্র পেশ করেছেন। জহরবাবুর পর্যবেক্ষণ, এখন আন্দোলন ছাড়া আর কোনও উপায় দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু আন্দোলন করে তো আদালতের রায় বদল করা যায় না। তবে সরকার নিশ্চয়ই বদল করা যায়। সেই ইঙ্গিতও প্রবন্ধে রয়েছে। তবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আজ সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধেই সকলে মিলে আরও জোরদার লড়াই প্রয়োজন হয়ে পড়েছে, আর প্রবন্ধকার এক সময় এই উগ্রতার বিরুদ্ধে স্বর তুলতেই তো রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন। তাই খেদ হয়, এই দুঃসময়ে তাঁকে পুরোভাগে পেলে ভাল হত। কিন্তু নিয়োগ-দুর্নীতির কারণে তিনি লড়াইয়ের সেই কার্যকর মঞ্চটা থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছেন।
আমার বক্তব্য, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী মঞ্চটাকে ব্যবহার করেই কিন্তু তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইটাও জারি রাখতে পারতেন। গুণীর কদর সর্বত্রই আছে। তা ছাড়া, রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসে তো গুণী মানুষের খুব প্রয়োজন।
আশিস সামন্ত, কলকাতা-১০২
সুবিচার আসবে
‘আমরা হেরে যাইনি’ প্রবন্ধ প্রসঙ্গে কয়েকটি কথা। লেখাটি অত্যন্ত সময়োপযোগী। শুধু শিক্ষিত সমাজ নয়, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সকল মানুষ রাজ্যের সাম্প্রতিক ঘটনাচক্রে প্রবল ক্ষুব্ধ। তবে আশার কথা, অধিকাংশ মানুষ এখন প্রতিবাদে সরব হতে শুরু করেছেন, পথে নামছেন। সরকারে আসীন দলগুলোর চুরি, দুর্নীতি, এবং প্রশাসনিক ক্ষমতাকে অপব্যবহার করে প্রতিবাদীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়ার ঘৃণ্য পরিকল্পনাকে আর কেউ বরদাস্ত করতে রাজি নন। সাধারণ মানুষের ঘুম ভাঙিয়েছে ক্ষমতাসীনদের নির্লজ্জ, ক্ষেত্রবিশেষে অমানবিক আচরণ।
সিবিআই, কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার কেউই সত্য উন্মোচিত করে অপরাধীদের শাস্তি দিল না, ভাবখানা এমন যেন কেউ দিতে চায়ও না। তাই আর জি কর কাণ্ড, প্রায় ২৬০০০ শিক্ষকের চাকরি বাতিল হওয়ার ঘটনা এবং প্রতি দিন ঘটে চলা এ রকম বহু অন্যায় মানুষকে প্রতিবাদী করে তুলেছে, রাস্তায় নামিয়ে এনেছে। কিন্তু, চিন্তা হয়, প্রতিবাদের এই ধারা ভোটের বাক্সে ঢুকে যেন স্তব্ধ না হয়ে যায়। সুবিচারের পথ প্রস্তুত করবে সঙ্ঘবদ্ধ প্রতিবাদী আন্দোলন। পথে নামা প্রতিবাদী মানুষরা যদি আবার ঘরে ঢুকে না যান, তবে সুবিচার এক দিন ঠিক আসবেই।
অনুরূপা দাস, পাঁশকুড়া,পূর্ব মেদিনীপুর
বিকল্প পথ
‘গরমে কি ফের টানা ছুটি পড়বে, ভয়ে কাঁটা শিক্ষকেরা’ (৩১-৩) শীর্ষক প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে এই চিঠি। এ কথা সত্যি যে, গত কয়েক বছর এই এলাকায় একটু গরম বাড়লেই আমাদের রাজ্যের সরকারি বিদ্যালয়গুলিতে ছুটি ঘোষণা করে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু গরম পড়লে ছোটদের ছুটি দিয়ে দেওয়াই কি এই সমস্যার সমাধানের পথ, না কি অন্য কোনও রাস্তায় গরমকে মোকাবিলা করেই ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া যেতে পারে? প্রশ্ন উঠতে পারে, এ ভাবে যদি প্রতি বছর স্কুল ছুটি ঘোষণা করে দেওয়াই সমাধান হয়, তা হলে অন্য গ্রীষ্মপ্রধান দেশগুলোতে পড়াশোনা চলছে কী ভাবে?
দীর্ঘ সময় ছুটির কারণে পড়াশোনার ক্ষতি তো হচ্ছেই। তার সঙ্গে মিড-ডে মিলের মতো প্রকল্প হোঁচট খাচ্ছে, সাধারণ পরিবারের বহু ছাত্র-ছাত্রী খালি পেটে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। তাই রাজ্য প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীদের কয়েকটি দিক নিয়ে ভাবার অনুরোধ জানাই। বিশ্বে উষ্ণায়ন ঘটছে ও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে আবহাওয়া পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেই চলেছে। ফলে এই পরিবর্তিত আবহাওয়ার সঙ্গে যুঝেই বিদ্যালয়ের শিক্ষা চালিয়ে যাওয়ার মতো উপযুক্ত পরিকাঠামো নির্মাণে সময়োপযোগী পদক্ষেপ করা হোক। পরিকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির বিদ্যুতের বিল সম্পূর্ণ মকুব করা যায় কি না তাও ভেবে দেখার দরকার।
এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষ ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিলে শিক্ষার স্থিতাবস্থা কিছুটা ফিরবে।
শম্ভু মান্না, বহিচাড়, পূর্ব মেদিনীপুর