WBBSE Madhyamik 2025 Toppers

কোনও বাধাই বাধা নয়! বিশেষভাবে সক্ষম সেলিম চতুর্থ স্থান দখল করে নিল এ বারের মাধ্যমিকে

জীবন অনেক কিছু কেড়ে নিলেও পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারায়নি সেলিম।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০২ মে ২০২৫ ১৩:৩১
MD Selim

মহম্মদ সেলিম। সংগৃহীত ছবি।

মাকে হারিয়েছে ছোটবেলাতেই। তার উপর শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। কিন্তু কোনও বাধাই বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি মহম্মদ সেলিমের কাছে। পূর্ব বর্ধমানের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই পড়ুয়া এ বারের মাধ্যমিকের প্রথম দশের মেধাতালিকায়। ৬৬ জনের মধ্যে চতুর্থ স্থান দখল করে নিয়েছে সে।

Advertisement

গর্ভে থাকাকালীন স্নায়ুর সমস্যায় জর্জরিত ছিলেন সেলিমের মা। চিকিৎসক জানান, ওষুধেই সমাধান রয়েছে। তবে তাতেও বিপদ পুরোপুরি কাটবে না। ওষুধ মায়ের অসুস্থতা কমালেও, গর্ভে থাকার বাচ্চার ক্ষতি হবে। আর ওষুধ না খেলে গর্ভস্থ শিশুকে নিয়েই মারা যাবেন মা। চিকিৎসকের পরামর্শে তাই প্রথম রাস্তা বেছে নেন সেলিমের মা। যার ফলে শারীরিক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয় সে। ছোট থেকেই বাঁ পায়ে সমস্যা। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটাচলা। তাই সে আঁকড়ে ধরেছিল বইখাতার দুনিয়া।

স্নায়ুর সমস্যা একদিন সেলিমের জীবন থেকেই কেড়ে নিল তার মাকে। পঞ্চম শ্রেণিতে মাকে হারিয়ে আর একরোখা হয়ে উঠেছিল এই কিশোর। এর পর মামাবাড়িতেই বেড়ে ওঠা। মামা এবং দিদা- দাদুর আদর যত্নেই দিন কাটছিল। অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক বাবা এক বাড়িতে না থাকলেও অর্থ সাহায্য করতেন।

জীবন অনেক কিছু কেড়ে নিলেও পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারায়নি সেলিম। রোজ স্কুল যেত সে। নিরোল হাই স্কুলের পদার্থবিদ্যার শিক্ষক সহিষ্ণু মুখোপাধ্যায় বলেন, “পড়াশোনা নিয়ে ভীষণ খুঁতখুঁতে ছিল ও। যত ক্ষণ পর্যন্ত না একটা বিষয় যথাযথ ভাবে বুঝতে পারছে, ক্রমাগত প্রশ্ন করে যেত।” ফাঁকি দিত? তাঁর কথায়, “একদমই না। ক্লাসে যদি কোনও কারণে একজন ছাত্রও উপস্থিত থাকত, সে হল সেলিম।” তিনি জানান, ও কখনই কোনও বিষয়ের গৃহশিক্ষক নেয়নি। সম্পূর্ণ নিজের প্রচেষ্টা এবং স্কুল শিক্ষকদের সহায়তাতেই সেলিমের এই দুরন্ত ফল। পরীক্ষায় ৭০০ নম্বরের মধ্যে তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৯২।

সহিষ্ণু আরও জানান, খেলাধুলোও ভালবাসে সেলিম। পায়ের প্রতিবন্ধকতার জন্য অনেক সময় বন্ধুদের সঙ্গে মাঠে খেললেও বাড়ি ফিরে যন্ত্রণায় ছটফট করত সে। তখন দিদা ওর মায়ের ভূমিকা পালন করে শুশ্রূষা করতেন। তাই বেশিরভাগ সময় গল্পের দুনিয়ায় নানারকম চরিত্রদের নিয়েই বিভোর থাকত সেলিম।

বাড়িতে এখন খুশির আবহ। সেলিমকে ঘিরে রয়েছে এলাকাবাসী। জেলার মুখ উজ্জ্বল করায় বাড়িতেই ভিড় জমিয়েছেন অনেকে। এর মধ্যেই ফোনের ওপার থেকে সেলিমের পরিচিত আশালত হোসেন জানান, পায়ের প্রতিবন্ধকতাকে কখনই বাধা হিসাবে ভাবেনি সেলিম। বরং সেই বাধা ঠেলেই সামনের দিকে আরও এগিয়ে গিয়েছে সে। পদার্থবিদ্যা পছন্দের বিষয়। তাই ভবিষ্যতে গবেষক বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্নই দেখছে পূর্ব বর্ধমানের সেলিম।

মাধ্যমিকের প্রথম তিন।

মাধ্যমিকের প্রথম তিন।

Advertisement
আরও পড়ুন