NEET UG 2025 Topper

আর্থিক অনটনের মধ্যে পড়াশোনা, ডাক্তার হওয়ার পরীক্ষায় রাজ্যে তৃতীয় হওয়া অনীকের জীবন কেমন?

মেডিক্যালে স্নাতকস্তরে লেখাপড়ার জন্য প্রবেশিকা পরীক্ষায় সর্বভারতীয় স্তরে প্রথম ৬৭ এবং রাজ্যের মধ্যে তৃতীয় হয়েছেন অনীক ঘোষ। তাঁর সঙ্গে কথা বলল আনন্দবাজার ডট কম।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০২৫ ১৭:৪৭
NEET UG Anik Ghosh will go to Delhi Aiims for further study.

নিট ইউজির কৃতী অনীকের লক্ষ্য দিল্লি এমস। নিজস্ব চিত্র।

পরিবারের সম্বল বলতে তিন বিঘা জমি। তাতেই ধান চাষ করতেন তুষারকান্তি ঘোষ। সে ধানই তাঁর সংসারের একমাত্র রোজগারের উপায়। যখন যেমন আয় হয়েছে, তার মধ্যেই চলেছে সবটা। অভাবের সেই সংসারে কৃতী পুত্রের জন্ম হয়েছে। তাই সে জমির কিছুটা আবার বিক্রি করতে হয় সন্তানের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য। রবিবার পরীক্ষার ফল প্রকাশ হতে দেখা গেল, নতুন ফসলের ভরসা জুগিয়েছে বিক্রি হয়ে যাওয়া সেই জমিই।

Advertisement

তুষারকান্তির পুত্রের নাম অনীক ঘোষ। মেডিক্যালে স্নাতক স্তরে পড়াশোনার জন্য প্রবেশিকা পরীক্ষায় রাজ্যের মধ্যে তৃতীয় স্থান পেয়েছেন। সর্বভারতীয় র‌্যাঙ্ক ৬৭। ছেলের পরীক্ষার ফল শুনে গোটা গ্রামে সাড়া পড়ে গিয়েছে।

অনীকদের বাড়ি মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘি থানা এলাকার বয়ার গ্রামে। নিকটতম শহর বহরমপুর। বাড়ি থেকে সেই শহরে পৌঁছতে ৩৫ কিলোমিটার বাসযাত্রা করতে হয়। গ্রামে আধুনিক মানের ব্যবস্থা বিশেষ নেই। যতটুকু আছে, তার সাহায্য পাওয়ার মতো আর্থিক পরিস্থিতি কখনওই ছিল না অনীকদের। তাই অভাবের সংসারে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কোনও গৃহশিক্ষকের সাহায্য ছাড়াই লেখাপড়া করেছেন এই ছাত্র।

Anik Ghosh with his parents.

মা বাবার সঙ্গে অনীক। নিজস্ব চিত্র।

সংসারের খরচ চালাতে গিয়ে বাবা-মায়ের কষ্ট, আর্থিক অভাবের ছবিটা ছোট থেকেই দেখছেন অনীক। সেই অনটনের মধ্যেই মন দিয়ে পড়াশোনা করে দশম শ্রেণিতে ৯৮.২ শতাংশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় ৯৫ শতাংশ নম্বর পেয়ে স্কুল পাশ করেছেন। নিট ইউজি-তে মোট ৭২০-র মধ্যে তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৬৫২, সর্বভারতীয় স্তরে র‌্যাঙ্ক ৬৭ নম্বরে। রাজ্যের মধ্যে তৃতীয় স্থানের অধিকারী তিনি।

গোটা সময়টা তাঁর লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য তাঁর বাবাকে দেড় বিঘা জমি বিক্রি করতে হয়েছে। বাকি জমিতে চাষাবাদ করেই এখন তিন সদস্যের সংসার চলে। এককালে বিনা চিকিৎসায় প্রাণ হারাতে হয়েছে অনীকের ঠাকুরদাকে। আনন্দবাজার ডট কমের তরফে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ডাক্তারি পাশ করে গ্রামে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য কাজ করবেন তিনি।

তবে আপাতত রাজ্য ছাড়বেন লেখাপড়ার জন্য। এমবিবিএস করতে এমস দিল্লিতে যেতে চান। কারণ তাঁর মনে হয়েছে, রাজ্যে মেডিক্যাল কলেজ থাকলেও তার পরিকাঠামো পর্যাপ্ত নয়।

অনীকের পরবর্তী লক্ষ্য নিউরোসার্জারি নিয়ে পড়াশোনা। এমবিবিএস পড়তে গিয়ে আরও বৃহত্তর বিষয় বেছে নেওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না এখন। মানবদেহের কার্যকলাপ কোন পদ্ধতিতে চলে, সেই নিয়ে জানার আগ্রহ ছিল বরাবরই। তবে সর্বক্ষণ মোটেই বইয়ে মুখ গুঁজে থাকতেন না অনীক। বরং সময় মেপে পড়াশোনার পাশাপাশি গোটা দুনিয়ায় এখন কী হচ্ছে, তাতেও নজর রাখতেন। অবসরে ওয়েব সিরিজও দেখতেন মন ভরে। এমনই জানিয়েছেন অনীক।

এত ভাল নম্বর, র‌্যাঙ্ক পেয়েও বাড়ির কাছে বা রাজ্যের সেরা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হতে কেন অনীহা? আরজিকর কাণ্ডের প্রভাবে লক্ষ্য দিল্লি? প্রশ্নের জবাবে কৃতীর উত্তর, ‘‘ঘটনাটি দুঃখজনক। কিন্তু এর সঙ্গে রাজ্যের বাইরে যাওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই।’’ শুরু থেকেই আমার লক্ষ্য এমস দিল্লিতে লেখাপড়া করা। ওই ছাত্রের কথায়, “রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে পরিকাঠামোগত সমস্যা ছাড়াও বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্যের অভাব রয়েছে। তা ছাড়াও যখন সেরা প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ রয়েছে, সেটা হাতছাড়া করতে চাই না।”

Advertisement
আরও পড়ুন