Jodhpur Park boys school

মেয়ে সেজে নাটক করছে ছাত্রেরা! কলকাতার এক স্কুলের কাণ্ড চোখ খুলে দিতে পারে সমাজের

প্রতি বছরই ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং (এনসিইআরটি)-এর তরফে জেলা, রাজ্য এবং জাতীয় স্তরে স্কুলে স্কুলে ‘ন্যাশনাল রোল প্লে’ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:১০
লিঙ্গ সমতার বার্তা দিচ্ছে যোধপুরপার্ক বয়েজ় স্কুলের ছাত্ররা।

লিঙ্গ সমতার বার্তা দিচ্ছে যোধপুরপার্ক বয়েজ় স্কুলের ছাত্ররা। নিজস্ব চিত্র।

‘অরুণ’ ও ‘সোনি’কে নিয়ে ওরা পাঁচ বন্ধু। সকলেই স্কুলের বন্ধু। কিন্তু সোনি স্কুলে যেতে নারাজ। ইচ্ছেই করে না যেতে ওর। বন্ধুরা কারণ জিজ্ঞাসা করায় কাঁদতে কাঁদতে সোনি বলল, ক্লাসের মধ্যে একমাত্র মেয়ে হওয়ায় অন্য ছেলেরা তাঁকে খুব দুঃখ দিয়ে কথা বলে। গায়ে হাত দেয়, বাজে কথা বলে— সোনির মোটেই ভাল লাগে না। আর এই সব কিছু ঘটে যখন ওর বন্ধুরা আশপাশে থাকে না। তাই সোনির আর স্কুলে যেতে ইচ্ছে করে না। অরুণ ও বাকি বন্ধুরা সোনির কথা শুনে বেজায় রেগে যায়। পরের দিন স্কুলে গিয়েই ওই বন্ধুদের বেজায় জব্দ করে।

Advertisement

অরুণ বা সোনি— সকলেই নাটকের চরিত্র। অভিনেতারা যোধপুর পার্ক বয়েজ় স্কুলের ছাত্র। সোনি চরিত্রে যে অভিনয় করছে, আদতে সে এক ছাত্র, নবম শ্রেণির অঙ্কিত হীরা।

যে দিনে তাকে এই চরিত্রের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, তখন সে খানিক ঘাবড়েই গিয়েছিল। এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে মহিলা চরিত্রে অভিনয়ে তাকে সাহস জুগিয়েছিল আশপাশের পরিস্থিতি। অঙ্কিতের কথায় ‘‘আরজি কর কাণ্ড থেকে হাতরাস— খবরের কাগজ খুললেই দেখি মেয়েদের উপর অত্যাচার, অসম্মানের ঘটনা। এগুলো আমায় খুব কষ্ট দেয়। তাই অভিনয় হলেও একজন মেয়ে হিসাবে কতটা সমস্যা হয় তা অনুভব করতে পেরেছি চরিত্রটির মধ্যে দিয়ে।’’

অঙ্কিতের ইচ্ছে মাধ্যমিকের পর বিজ্ঞান অথবা বাণিজ্য নিয়ে পড়বে। বাকি বন্ধুরাও কেউ আইন নিয়ে, কেউ বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার পর বড় চাকরি করতে চায়। পাশাপাশি কোথাও মহিলাদের উপর নির্যাতন হলে, যেন রুখে দাঁড়াতে পারে সে পাঠও শিখছে এখন ওরা।

শুধু অঙ্কিত, ঋতব্রতই নয়, যোধপুর পার্ক বয়েজ় স্কুলের প্রায় সকল ছাত্রকেই বিশেষ পাঠ দেওয়া হয় লিঙ্গসমতা নিয়ে। স্কুলের প্রধানশিক্ষক অমিত সেন মজুমদারের কথায়, ‘‘অনেকেরই ধারণা থাকে গোলাপি রং মেয়েদের জন্য, নীল রং ছেলেদের। আমরা মনে করি রঙের কোনও ভেদাভেদ নেই। স্কুল পড়ুয়াদেরও সেই পাঠই দিতে চাই। তাই আমরা একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণিকক্ষের দেওয়ালে গোলাপি রং করিয়েছি।’’ এ ছাড়াও লিঙ্গসমতার উদ্দেশ্য নিয়ে নানা কর্মশালা হামেশাই স্কুলে হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন প্রধানশিক্ষক।

শ্রেণিকক্ষের দেওয়ালের রং গোলাপি।

শ্রেণিকক্ষের দেওয়ালের রং গোলাপি। নিজস্ব চিত্র।

প্রতি বছরই ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ এন্ড ট্রেনিং (এনসিইআরটি)-এর তরফে জেলা, রাজ্য এবং জাতীয় স্তরে স্কুলে স্কুলে ‘ন্যাশনাল রোল প্লে’ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন স্কুল থেকে পাঁচ জন পড়ুয়ার ছোট ছোট দল যোগ দেয় এই প্রতিযোগিতায়।

এই বছর এনসিইআরটি আয়োজিত ওই প্রতিযোগিতায় যোধপুর পার্ক বয়েজ় স্কুলের ছাত্রেরা লিঙ্গসাম্যের বার্তা দিয়ে পাঁচ মিনিটের একটি নাটক উপস্থাপনা করে। আর তাতেই বাজিমাত! জেলাস্তরে সেরা হয়ে আগামী ২৬ নভেম্বর তারা নামছে রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতায়। ছাত্রদের সাহায্য করেছেন যোধপুরপার্ক বয়েজ় স্কুলের শিক্ষক বিশ্বজিৎ নন্দী। তিনি বলেন, “এখন মেয়েরা কোনও অংশেই পিছিয়ে নেই। তাই এটা যে শুধু লিঙ্গসাম্যের বিষয়, তা নয়। চারিদিকের ঘটনা এবং বাঁধাধরা চিন্তাধারার জন্য অনেক মহিলাকেই নির্যাতিত হতে হয়। স্কুলস্তর থেকেই ঠিক-ভুলের পাঠ দেওয়া হলে সমাজ সেই শিক্ষাই বহন করবে বলে আমি মনে করি।”

Advertisement
আরও পড়ুন