Jewel Thief Movie Review

হিরে কোথায়! ‘জুয়েল থিফ’ করল শুধু সময় চুরি, জমাতে পারল না সইফ-জয়দীপের যুগলবন্দিও

বলিউডি অ্যাকশন থ্রিলার ঘরানার ছবিতে যা যা মালমশলা প্রয়োজন, সবই রয়েছে এই ছবিতে। কিন্তু তালিকা থেকে বাদ পড়ে গিয়েছে মূল উপকরণই। ঘরানার সম্মান রক্ষার্থে হাতেগোনা কয়েকটি অ্যাকশন দৃশ্য রয়েছে ছবিতে। সেই দৃশ্যগুলিও চমকহীন।

Advertisement
শ্রুতি মিশ্র
শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৫ ১৬:০৩
‘জুয়েল থিফ’ ছবির পোস্টারে সইফ আলি খান, জয়দীপ অহলাওয়াত, কুণাল কপূর এবং নিকিতা দত্ত।

‘জুয়েল থিফ’ ছবির পোস্টারে সইফ আলি খান, জয়দীপ অহলাওয়াত, কুণাল কপূর এবং নিকিতা দত্ত। ছবি: সংগৃহীত।

গিরগিটি উধাও হয় না, রং বদলায়, তাই তাদের খালি চোখে সহজে দেখা যায় না। পুলিশের কাছে ধরা দিয়ে বুক ফুলিয়ে এমন সংলাপই বলতে দেখা যায় সইফ আলি খানকে। তাঁর ছবিও একই ধরনের বার্তা দিল। ‘জুয়েল থিফ’ হিরে চুরি করার নামে সময় চুরি করে নিয়েই পালিয়ে গেল। সিনেমা শেষ হওয়ার পর ঘড়ির দিকে তাকালে দেখা যাবে ‘জুয়েল থিফ’ মাঝখান থেকে কেবল ঘণ্টা দুয়েক সময় উধাও করে দিয়েছে।

Advertisement

সম্প্রতি ওটিটির পর্দায় মুক্তি পেয়েছে ‘জুয়েল থিফ’। অভিনয়ে দুই পুলিশ ইনস্পেক্টর থুড়ি বলিউডের দু’জন শক্তিশালী অভিনেতা। ‘সেক্রেড গেম্‌স’ এবং ‘পাতাল লোক’ নামের জনপ্রিয় দু’টি ওয়েব সিরিজ়ে দুই পুলিশ ইনস্পেক্টরের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন যথাক্রমে সইফ আলি খান এবং জয়দীপ অহলাওয়াত। কুকি গুলাটি এবং রবি গ্রেওয়ালের সহ-পরিচালনায় ‘জুয়েল থিফ’ ছবিতে এই দুই অভিনেতাকে দেখা গেল সরাসরি চোরের ভূমিকায়। অ্যাকশন থ্রিলার ঘরানার ছবি বলে কথা! স্ত্রী মমতা ভাটিয়া আনন্দের সঙ্গে এই ছবির সহ-প্রযোজনার দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে ফেললেন সিদ্ধার্থ আনন্দ।

ইতিমধ্যেই ‘ফাইটার’, ‘ওয়ার’ এবং ‘পাঠান’-এর মতো অ্যাকশন ঘরানার হিট ছবি পরিচালনা করে বলিউডকে উপহার দিয়ে ফেলেছেন সিদ্ধার্থ। পরিচালক হিসাবে না হোক, প্রযোজক হিসাবে তো ‘জুয়েল থিফ’-এর সঙ্গে জুড়ে রয়েছেন সিদ্ধার্থ। তাই কমবেশি হলেও এই ছবি ঘিরে দর্শকের অনেক আশা ছিল। সইফ এবং জয়দীপের যুগলবন্দিও দু’ঘণ্টা ধরে চোর-পুলিশের খেলা জমাতে পারল না। আশাভঙ্গ করল ‘জুয়েল থিফ’।

আফ্রিকার এক রাজা ‘রেড সান’ নামে একটি দামি হিরে নিয়ে দেশ-বিদেশের নানা জায়গায় প্রদর্শনী করছে। ৫০০ কোটি টাকা বাজারমূল্যের ৩১৮ ক্যারাটের সেই হিরে চুরি নিয়েই ‘জুয়েল থিফ’-এর কাহিনি আবর্তিত হয়েছে। বলিউডি অ্যাকশন থ্রিলার ঘরানার ছবিতে যা যা মালমশলা প্রয়োজন, সবই রয়েছে এই ছবিতে। কিন্তু তালিকা থেকে বাদ পড়ে গিয়েছে মূল উপকরণই। ঘরানার সম্মানরক্ষার্থে হাতেগোনা কয়েকটি অ্যাকশন দৃশ্য রয়েছে ছবিতে। সেই দৃশ্যগুলিও চমকহীন। সিনেমা শেষ হওয়ার পর হয়তো সেই দৃশ্যগুলি দর্শকের মনেও থাকবে না।

‘জুয়েল থিফ’ ছবির দৃশ্যে জয়দীপ অহলাওয়াত।

‘জুয়েল থিফ’ ছবির দৃশ্যে জয়দীপ অহলাওয়াত। ছবি: সংগৃহীত।

বলিউডি ছবি হওয়ার কারণে যত্রতত্র হিন্দি গানের ব্যবহার আরও অতিষ্ঠ করে তুলবে। সঙ্গে রয়েছে কান ঝালাপালা করা প্রয়োজনাতিরিক্ত বিজিএম। ছবিতে এডিটিংয়ের কাজও খুবই কাঁচা এবং হাস্যকর। জোর করে বাবা-ছেলের সম্পর্ক ঢুকিয়ে অহেতুক ‘ইমোশন’-এ সুড়সুড়ি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। রোম্যান্স দেখানোর জন্য জোর করে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে নারীচরিত্রও। শাহিদ কপূর, কিয়ারা আডবানী অভিনীত ‘কবীর সিং’-এ পার্শ্বচরিত্রে কম সময়ের জন্য অভিনয় করে পরিচিতি পেয়েছিলেন নিকিতা দত্ত। তবে ‘জুয়েল থিফ’-এ পর্দায় যথেষ্ট সময় পেয়েও তেমন নজর কাড়তে পারলেন না তিনি।

সইফ এবং জয়দীপের মতো পোড়খাওয়া দুই তারকার অভিনয়ও মনে দাগ কাটতে পারল না। বহু বছর পর এই ছবির হাত ধরে অভিনয়ে ফিরলেন কুণাল কপূর। কিন্তু চিত্রনাট্য এবং চরিত্রের বুনন দুর্বল হওয়ার কারণে কোনও অভিনেতাকে দিয়েই তাঁদের সেরাটা নিংড়ে বার করে আনা গেল না।

‘জুয়েল থিফ’ ছবির দৃশ্যে সইফ আলি খান।

‘জুয়েল থিফ’ ছবির দৃশ্যে সইফ আলি খান। ছবি: সংগৃহীত।

২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে ‘জুয়েল থিফ’ দেখতে দেখতে বার বার মন পিছিয়ে যাচ্ছিল ২১ বছর আগে। ২০০৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ধুম’-এর চিত্রনাট্যও প্রায় একই প্রেক্ষাপটে নির্মিত। কিন্তু ‘জুয়েল থিফ’ দেখার সময় ২১ বছর আগে মুক্তি পাওয়া ছবির চিত্রনাট্যও বেশ বুদ্ধিদীপ্ত মনে হচ্ছিল। দুই দশক পার করে এসে ‘জুয়েল থিফ’ কোনও অভিনবত্বের সন্ধান দিতে পারল না। এমনকি, খুব একটা মন দিয়ে না দেখলেও দর্শক নিজে থেকেই কোনও দৃশ্যের পরের সংলাপ কী হতে পারে তা আন্দাজ করে নিতে পারবেন।

‘জুয়েল থিফ’ ছবিতে হিরে চুরি করে পালানোর দৃশ্যে জয়দীপ অহলাওয়াত, নিকিতা দত্ত এবং সইফ আলি খান।

‘জুয়েল থিফ’ ছবিতে হিরে চুরি করে পালানোর দৃশ্যে জয়দীপ অহলাওয়াত, নিকিতা দত্ত এবং সইফ আলি খান। ছবি: সংগৃহীত।

অবশ্য সিনেমা শেষ হলে দর্শক চমকে যেতে পারেন। আসলে সিনেমার পুরো নাম ‘জুয়েল থিফ: দ্য হেইস্ট বিগিন্‌স’। সিনেমার শেষ হওয়ার পর তা-ই খেয়াল করানো হয় দর্শককে। সেই চুরি-ডাকাতির খেলা (হেইস্ট) যে আবার পর্দায় ফিরে আসতে পারে সেই বার্তা বহন করে ছবির অন্তিম দৃশ্য। তার পাশাপাশি দর্শকের জন্য রেখে যায় সময় নষ্ট করার জন্য একরাশ হতাশাও। এই অন্তিম দৃশ্য কোনও সিক্যুয়েলের ইঙ্গিত দিচ্ছে কি না সেই প্রসঙ্গে এখনও নিশ্চিত জানা যায়নি। তবে সময় যে কতটা দামি সেই বোধটুকু জাগিয়ে তোলার জন্য অন্তত এক বার ‘জুয়েল থিফ’ দেখা বাঞ্ছনীয় বইকি।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

Advertisement
আরও পড়ুন