Fad Diet

এক মাসে ওজন কমানোই লক্ষ্য, খাওয়াদাওয়াও করতে হয় তেমন, ফ্যাড ডায়েট কি আদৌ স্বাস্থ্যকর?

কমবয়সিদের মধ্যে এখন বেশ জনপ্রিয় ফ্যাড ডায়েট। তারকাদের দেখাদেখি এক মাসের মধ্যে ঝরঝর করে ওজন ঝরিয়ে ফেলার লক্ষ্য নিয়ে অনেকেই এগোচ্ছেন। তাতে সাফল্যও আসছে। কিন্তু শরীরের ভাল হচ্ছে কি?

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ১২:৩১
How healthy is Fad Diet, what are the health risks

ফ্যাড ডায়েটে কী ভাবে ৩০ দিনে ওজন কমে, এটি ভাল না খারাপ? ছবি: ফ্রিপিক।

এক মাসের মধ্যে রোগা হতেই হবে। ১০ থেকে ২০ কেজি কমিয়ে ফেলতে পারলেই হল। তার জন্য খাওয়াদাওয়া কমিয়ে ফেলতে বা উপোস করে থাকতেও রাজি এখনকার প্রজন্ম। ফ্যাড ডায়েটের মূলমন্ত্রই হল এক মাসের মধ্যে বিস্তর ওজন কমানো। দ্রুত ওজন কমানোর জন্য গত ৫-৬ বছর ধরে জনপ্রিয় হয়েছে ডায়েটের এই ধরন। তবে তা আদৌ বিজ্ঞানসম্মত নয় বলেই দাবি করেছেন চিকিৎসকেরা। আইসিএমআর (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ) এই ধরনের ডায়েটকে মান্যতা দেয় না। ফ্যাড ডায়েটে যা যা খেতে হয়, তা একটানা মেনে চলাও যায় না। ফলে ডায়েট বন্ধ করে দিলে আবারও ওজন বাড়তে শুরু করে।

Advertisement

ফ্যাট ডায়েটে খাওয়াদাওয়া

কম সময়ে রোগা হওয়ার এই ডায়েট অনেক রকমের হয়। কেউ নানা ধরনের সাপ্লিমেন্ট খেয়ে ওজন কমানোর চেষ্টা করেন, আবার কেউ কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন বা ফ্যাটের মধ্যে কোনও একটি ভাগকে সম্পূর্ণ বাদই দিয়ে দেন। সুষম আহারের মধ্যে মূলত পাঁচটি খাদ্যের ভাগ রয়েছে— ফল, আনাজ, শস্য, প্রোটিন ও দুগ্ধজাত খাবার। ফ্যাড ডায়েটে এই পাঁচটি ভাগের মধ্যে একটি বা দু’টি ভাগকে সম্পূর্ণ বাতিল করে দেওয়া হয়। যেমন, অ্যাটকিন্স ডায়েট। এটিও এক ধরনের ফ্যাড ডায়েট। এতে কার্বোহাইড্রেট, যেমন ভাত, রুটি বাদ দিতে হয়। যত ইচ্ছে প্রোটিন ও ফ্যাট খাওয়া যায়।

আবার কিটো ডায়েট। খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে কার্বোহাইড্রেট। বেশি করে খেতে হবে ফ্যাট জাতীয় খাবার। সঙ্গে সামান্য প্রোটিন। দীর্ঘ দিন ধরে এই ডায়েট মেনে চললে ক্রমে দেখা দিতে পারে অগ্ন্যাশয়ের রোগ ও কোষ্ঠকাঠিন্য। অতিরিক্ত প্রোটিন খাওয়ার ফলে কিডনির নানা সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংও এক ধরনের ফ্যাড ডায়েট। এতে একটি বেলা উপোস করেই থাকতে হয়। ধরুন, সকাল সাতটায় ভারী ব্রেকফাস্ট করলেন। তার পর বিকেল তিনটেয় ভারী কিছু খেলেন। মাঝের সময়টা উপোস। এ ভাবে উপোসের সময় বাড়িয়ে ১২ থেকে ১৪, ১৬ ঘণ্টায় নিয়ে যেতে হবে। মুশকিল হল, এটা ঠিক ভাবে পালন করা অত্যন্ত কঠিন।

জ়োন ডায়েটও এই তালিকায় পড়ে। সাধারণত স্থানীয় খাবার থাকে খাদ্যতালিকায়। খাবারের ভাগ এমন থাকে, যাতে ৪০ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট, ৩০ শতাংশ প্রোটি‌ন ও ৩০ শতাংশ ফ্যাট থাকে। এই ডায়েটে দুগ্ধজাত খাবার বাদ দিতে হয় বলে শরীরে ক্যালশিয়ামের ঘাটতি দেখা দেয়।

ফ্যাড ডায়েটের ক্ষতিকর দিক

ওজন কমানোর যে কোনও রকম চটজলদি পদ্ধতি অস্বাস্থ্যকর। ফ্যাড ডায়েট মেনে চললে প্রাথমিক ভাবে যে ওজন কমে, কিন্তু শরীরে পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি হয়। ফলে কেউ ভোগেন অপুষ্টিতে, আবার কারও রক্তচাপের হেরফের শুরু হয়, ফলে ক্ষতি হয় হার্টের।

খুব বেশি হলে পাঁচ-সাত দিন এ ধরনের ডায়েট মেনে চলা যেতে পারে, কিন্তু তার বেশি হলেই শরীরের ক্ষতি হতে থাকে। হজমশক্তি কমে যায়, হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে থাকে। শরীরে জলের ঘাটতি হতে থাকে, ফলে জলশূন্যতা দেখা দিতে থাকে।

পেশির কার্যক্ষমতা কমতে থাকে এই ধরনের ডায়েটে। সুষম খাবারের অভাবে শক্তি উৎপাদনের প্রক্রিয়া বিগড়ে যায়। ফলে ক্লান্তি, ঝিমুনি বাড়ে। শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।

ফাইবারের অভাব, বেশি করে মাছ বা মাংস খাওয়ার কারণে কিডনির রোগ দেখা দেয়। গ্যাস্ট্রিক আলসার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

ওজন কমাতে মাঝেসাঝে ফ্যাড ডায়েট মানা যেতে পারে, কিন্তু কখনওই তা একটানা করা যাবে না। যে কোনও ডায়েট শুরুর আগেই চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিতে হবে।

Advertisement
আরও পড়ুন