গোবিন্দের অস্বাস্থ্যকর যাপনের কথা শুনে চমকে গিয়েছেন অনুরাগীরা! ছবি: সংগৃহীত।
অভিনয় পেশার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে থাকে স্বাস্থ্যসচেতনতা। ওজন কমিয়ে ক্যামেরার সামনে আসতে চান সিংহভাগ শিল্পী। কিন্তু সেখানেই ব্যতিক্রমী বলিউড তারকা গোবিন্দ। খাওয়াদাওয়ায় রাশ টানার কোনও শখই তাঁর জন্মায়নি কখনও। গোবিন্দের স্ত্রী সুনীতা আহুজা সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ‘হিরো নং ১’ কখনওই ডায়েট করে উঠতে পারেন না। খাদ্যরসিক গোবিন্দ নাকি তাঁর স্ত্রীর হাতে তৈরি রসুন ফোড়ন দেওয়া অড়হর ডাল, পালংশাকের ডাল, পালং পনির, ঢেঁড়শ খেতে ভালবাসেন। সুনীতার কথায়, ‘‘গোবিন্দ এক সময়ে মাখনের গোটা বার খেয়ে নিত। তার পরও কিন্তু নাচানাচি করতে অসুবিধা হত না ওর। মাখন খেতে খুব ভালবাসে এখনও। আজও প্রচুর মাখন খায়। আমি বারণ করি, কারণ ফ্যাট ওর মুখে স্পষ্ট হয়ে যায়। গোবিন্দ বলে, বুঝে খাওয়াদাওয়া করবে, কিন্তু ভুলভাল করে বসে। দিনের বেলা কম খায়, রাতের বেলা খুব খিদে পেয়ে যায় ওর। তখন বাইরে থেকে খাবার অর্ডার করে ফেলে।’’
৬১ বছরের গোবিন্দের অস্বাস্থ্যকর যাপনের কথা শুনে চমকে গিয়েছেন অনুরাগীরা। সকলের মনেই প্রশ্ন, কী ভাবে এত মাখন খেয়েও তিনি অসুস্থ হননি বা ক্যামেরায় এত সুন্দর নাচ করতেন কী ভাবে? মাখন কি তা হলে ততটাও ক্ষতিকর নয়?
মাখন নিয়ে আসলে এই দ্বিধা বহু দিনের। কেউ বলেন ক্ষতিকর, কেউ বলেন অল্প হলে ক্ষতি নেই। আসলে মাখন স্বাস্থ্যকর না ক্ষতিকর— তা নির্ভর করে পরিমাণ, ব্যবহার আর শরীরের অবস্থার উপর।
মাখন কি স্বাস্থ্যকর না কি ক্ষতিকর? ছবি: সংগৃহীত।
মাখন তৈরি হয় দুধে থাকা চর্বি থেকে। এতে আছে স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ভিটামিন এ, ডি, ই এবং কে। এই ভিটামিনগুলি চোখ, হাড়, ত্বক আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বৃদ্ধির জন্য দরকারি। বিশেষ করে, ঘরে তৈরি খাঁটি মাখনে কিছু উপকারী ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যও ভাল রাখে। নিউইয়র্কের পুষ্টিবিদ অনিতা মীরচন্দানি ইনস্টাগ্রামের একটি পোস্টে বলছেন, ‘‘খাঁটি মাখন খাওয়া অস্বাস্থ্যকর নয়। স্বাস্থ্যকর ফ্যাট শরীরে গিয়ে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে, হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে, পেট ভরিয়ে রাখে অনেক ক্ষণ। ফ্যাটে দ্রবীভূত ভিটামিনগুলিকে (এ, ডি, ই এবং কে) শরীরে শোষিত হতে সাহায্য করে। দেহের কার্যক্ষমতা, জোর বাড়ানোর জন্য ফ্যাটের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কিন্তু অবশ্যই খাঁটি এবং উচ্চমানের মাখন হতে হবে। তা ছাড়া অতিরিক্ত মাখন আবার শরীরের জন্য ভাল নয়।’’
অর্থাৎ সমস্যা শুরু হয় অতিরিক্ত সেবনে। মাখনে স্যাচুরেটেড ফ্যাট বেশি থাকে। নিয়মিত অতিরিক্ত মাখন খেলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়তে পারে। তার ফল হৃদ্যন্ত্রের সমস্যা, ওজন বৃদ্ধি এবং ধমনীতে চর্বি জমার ঝুঁকি তৈরি হয়। যাঁদের আগে থেকেই কোলেস্টেরল বেশি, ডায়াবিটিস বা হৃদ্রোগের সমস্যা আছে, তাঁদের জন্য বেশি মাখন অবশ্যই ক্ষতিকর। তার উপর বাজারের প্যাকেটজাত মাখনে অনেক সময় অতিরিক্ত নুন, প্রিজ়ারভেটিভ বা ট্রান্স ফ্যাট থাকতে পারে, যা শরীরের পক্ষে মোটেও ভাল নয়।
হার্ট বা কোলেস্টেরল, ডায়াবিটিস, ইত্যাদি রোগ না থাকলে অল্প পরিমাণে মাখন খাওয়া যেতে পারে। তা সাধারণত ক্ষতিকর নয়। রান্নায় বা পাউরুটিতে অল্প মাখন স্বাদ বাড়ায়, শরীরে পুষ্টির জোগান দেয়। তাই ভারসাম্য রাখাই আসল চাবিকাঠি। কিন্তু গোবিন্দ যে পরিমাণে মাখন খেতেন, তা স্বাস্থ্যের পক্ষে আদপে ক্ষতিকর। তবে গোবিন্দ তারই সঙ্গে ঘরে বানানো খাবার খেয়ে, শরীরচর্চা করে, শুটে পরিশ্রম করে সুস্থ থাকার চেষ্টা করেছেন।