Dementia Risk

বয়সকালেও স্মৃতিনাশ হবে না! ভুলে যাওয়ার রোগের ঝুঁকি কমবে একটি চেনা প্রতিষেধকেই, দাবি বিজ্ঞানীদের

স্মৃতিনাশ, অ্যালঝাইমার্সের মতো ভুলে যাওয়ার ব্যাধি ঠেকাতে পারবে এক বিশেষ প্রতিষেধক। টিকাটি যেমন ভাইরাস ঘটিত রোগের আশঙ্কা কমাবে, তেমনই স্নায়বিক রোগেরও। এমনই দাবি স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকদের।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ১১:৪২
New Study says, common Shingles vaccine may benefit individuals diagnosed with dementia

চেনা টিকাই বয়সকালে স্মৃতিনাশের ঝুঁকি কমাবে বলে দাবি। ছবি: সংগৃহীত।

ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিনাশ মানে কি শুধুই ভুলে যাওয়া? শুরুটা কিন্তু সকলের এক রকম হয় না। মনোবিদেরা বলেন, ডিমেনশিয়া হল বিশাল একটা ছাতার মতো। এর নীচে আশ্রয় নেয় মনের আরও অনেক অসুখ। কোনওটা ভুলে যাওয়ার রোগ, কোনও ক্ষেত্রে ব্যবহারে হঠাৎ বদল, কারও আবার প্রচণ্ড আগ্রাসী মনোভাব। স্মৃতিনাশের মতো ভয়ঙ্কর মানসিক ব্যাধি একা আসে না, আরও নানা অসুখকে সঙ্গী করে আসে। একে কী ভাবে জব্দ করা যায়, সে নিয়ে গবেষণা চলছে বিশ্ব জুড়েই। তবে এত দিনে হয়তো আশার আলো দেখেছেন গবেষকেরা। ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিনাশ এমন এক রোগ, যার তেমন কোনও চিকিৎসা নেই। রোগটির তীব্রতা কমিয়ে রাখা যায় মাত্র। তবে গবেষকেরা দেখেছেন, একটি চেনা প্রতিষেধকেই রোগটির ঝুঁকি কমতে পারে। কী সেই প্রতিষেধক?

Advertisement

পরীক্ষা করতে গিয়ে অবাকই হয়েছেন আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা। তাঁরা দেখেছেন, হারপিসের টিকায় ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমতে পারে। প্রায় তিন লক্ষ মানুষের উপর টিকাটির প্রয়োগ করা হয়েছে ইতিমধ্যেই। তাঁদের মধ্যে অধিকাংশেরই বয়স ৬০ থেকে ৭০ বছর বা তার বেশি। টিকার ডোজ় যাঁরা ঠিকমতো নিয়েছেন, তাঁদের হারপিস হওয়ার ভয় যেমন কমেছে, তেমনই স্মৃতিনাশের ঝুঁকিও প্রায় ২০ শতাংশ কমে গিয়েছে।

স্ট্যানফোর্ডের গবেষক পাস্কাল গেল্ডসেটজ়ার জানিয়েছেন, ভ্যারিসেলা জ়স্টার নামে এক ভাইরাস হারপিস রোগের জন্য দায়ী। যদি কারও কোনও সময় জলবসন্ত হয়ে থাকে, তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর এই রোগ দেখা দেওয়ার আশঙ্কাও প্রবল হয়। মূলত ২০ থেকে ৫০ বছর বয়সিদের মধ্যে হারপিস জ়স্টার দেখা দেয়। আবার বয়স ষাট পেরিয়েছে যাঁদের, তাঁদের মধ্যেও এই রোগের ঝুঁকি বেশি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বা যাঁরা ক্যানসার, এইচআইভির মতো রোগে ভুগছেন, তাঁদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বেশি। আবার ডায়াবিটিস থাকলে বা মানসিক চাপ কমানোর ওষুধ যাঁরা খান, তাঁদের মধ্যেও রোগটির প্রকোপ বেশি দেখা যায়।

হারপিস বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গেলে যন্ত্রণাদায়ক র‌্যাশ, ফুস্কুড়ির পাশাপাশি স্নায়বিক সমস্যাও দেখা দেয়। তাই রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিষেধক নিতে বলা হয়। গবেষক পাস্কাল জানিয়েছেন, বছর দুয়েক আগে হারপিসের টিকা নিয়েই নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে গিয়ে দেখা যায়, টিকাটি যাঁদের দেওয়া হচ্ছে, তাঁরা হারপিস বা জলবসন্তের মতো রোগ থেকে যেমন সুরক্ষিত থাকছেন, তেমনই স্নায়বিক রোগ থেকেও। টিকা নেওয়ার পর থেকে আগামী সাত বছর সেই সব ব্যক্তির স্নায়বিক রোগ হওয়ার ঝুঁকিও কমছে।

হারপিস ভাইরাস মস্তিষ্কে প্রদাহ তৈরি করে। এই ভাইরাসের কারণে স্নায়ুর রোগের ঝুঁকিও বাড়ে। তাই হারপিসের টিকা এমন ভাবে তৈরি করা হয়, যাতে মস্তিষ্কে প্রদাহ কমতে পারে। ডিমেনশিয়া বা অ্যালঝাইমার্সের মতো রোগে মস্তিষ্কে জিনের বিন্যাসে বদল আসে। বিটা-অ্যামাইলয়েড নামক এক প্রকার প্রোটিন মস্তিষ্কে অধিক মাত্রায় জমতে জমতে ‘প্লাক’ তৈরি করে। এই অ্যামাইলয়েড প্লাকের কারণে স্নায়ুতে জট পাকিয়ে যায়। ফলে স্নায়ু থেকে সঙ্কেত আদানপ্রদানে বাধা আসে। এতে মস্তিষ্কের কোষগুলিরও ক্ষয় হতে থাকে। গবেষকেরা দেখেছেন, হারপিসের টিকা এই ক্ষয় রোধ করতে পারে এবং মস্তিষ্কে কোনও রকম ‘প্লাক’ জমা হতে দেয় না। তাই টিকাটি পরোক্ষে স্মৃতিনাশের ঝুঁকিও কমাতে সক্ষম বলেই দাবি করছেন গবেষকেরা। বিশেষ করে ক্যানসার, ডায়াবিটিস, হার্টের রোগ বা ব্রেন স্ট্রোক হয়েছে এমন রোগীদের ক্ষেত্রে হারপিসের প্রতিষেধক ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমাতে পারবে বলেই আশা করা হচ্ছে।

Advertisement
আরও পড়ুন