Artificial Sperms

কৃত্রিম শুক্রাণু ঘোচাবে বন্ধ্যত্ব! জনন কোষ তৈরি হচ্ছে গবেষণাগারে, পিতার প্রয়োজন কি তবে ফুরোবে?

বন্ধ্যত্বের সমস্যার সমাধানেই গবেষণাগারে কৃত্রিম ভাবে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু তৈরি করার চেষ্টা করে চলেছেন গবেষকেরা। ইতিমধ্যেই ইঁদুরের উপর পরীক্ষা সফল হয়েছে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৫ ০৯:০৬
Scientists are just a few years from creating viable lab-grown sperm and egg cells

কৃত্রিম শুক্রাণু ও ডিম্বাণু তৈরি হবে গবেষণাগারেই, কী ভাবে তা সম্ভব? ছবি: ফ্রিপিক।

সন্তানজন্মের জন্য কি সত্যিই এবার ফুরিয়ে যাচ্ছে পুরুষের প্রয়োজন? বিজ্ঞানের গতি কি সেই দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে? বিষয়টা তেমন নয়। বন্ধ্যত্বের সমস্যার সমাধানেই গবেষণাগারে কৃত্রিম ভাবে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু তৈরি করার চেষ্টা করে চলেছেন গবেষকেরা। ইতিমধ্যেই ইঁদুরের উপর পরীক্ষা সফল হয়েছে। কৃত্রিম শুক্রাণু দিয়ে নাকি ডিম্বাণুর নিষেকের ফলে জন্ম নিয়েছে হৃষ্টপুষ্ট ছানা ইঁদুরও।

Advertisement

জনন কোষ অর্থাৎ, শুক্রাণু ও ডিম্বাণু কৃত্রিম ভাবে তৈরি করতে উঠেপড়ে লেগেছেন জাপান, চিন, আমেরিকার বিজ্ঞানীরা। এই প্রক্রিয়াকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘ইন ভিট্রো গ্যামেটোজেনেসিস’। এর উদ্দেশ্য হল, এমন দম্পতিদের সন্তান ধারণে সহায়তা করা, যাঁদের স্বাভাবিক প্রজনন সম্ভব নয়। অথবা যাঁরা প্রজননের ক্ষমতা হারিয়েছেন। এই পদ্ধতি সফল হলে, সমলিঙ্গেও সন্তানের জন্ম দেওয়া সম্ভব। তা হলে বিষয়টা দাঁড়াল, মা বা বাবার শরীর যদি সন্তানের জন্ম দিতে অক্ষম হয়, তা হলেও চিন্তা থাকবে না। কারণ, জনন কোষ কৃত্রিম ভাবেই বানিয়ে নেওয়া যাবে।

কৃত্রিম শুক্রাণু কী ভাবে তৈরি হবে?

এর জন্য সেই সবেধন নীলমণি স্টেম কোষকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। চিনের বিজ্ঞানীরা তো এর মধ্যেই ইঁদুরের শরীরের স্টেম কোষ থেকে কৃত্রিম ভাবে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু বানিয়ে ফেলেছেন। স্টেম কোষ হল শরীরের সেই আদি কোষ, যার থেকে অন্যান্য কোষ তৈরি হয়। একে তাই 'মাতৃকোষ'ও বলে। এই কোষ থেকে কৃত্রিম ভাবে রক্তের কোষও তৈরি করা যায়। গবেষকেরা কৃত্রিম শুক্রাণু ও ডিম্বাণু তৈরির জন্য বেছে নিয়েছেন প্লুরিপোটেন্ট স্টেম কোষকে। প্লুরিপোটেন্ট স্টেম কোষ আদতে সেই ধরনের স্টেম কোষ, যার থেকে শরীরের যে কোনও ধরনের কোষ চটজলদি বানিয়ে ফেলা যায়। তা সে রক্তকোষই হোক বা পাকস্থলী বা কিডনির কোষ। এই ধরনের প্লুরিপোটেন্ট স্টেম কোষ বানানো যায় দু’ভাবে— ১) ভ্রুণের থেকে কোষ নিয়ে। যাকে বলে, ‘এমব্রায়োনিক স্টেম সেল’ বা ‘ইএস’। ২) না হলে বয়স্ক মানুষের শরীরের কোষ নিয়ে। এগুলিকে বলা হয়, ‘ইনডিউস্‌ড প্লুরিপোটেন্ট সেল’ বা ‘আইপিএস’।

স্টেম কোষগুলিকে নিয়ে গবেষণাগারে নানা রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ‘প্রাইমরডিয়াল জার্ম সেল’ তৈরি করা হবে। এটি হল এমন কোষ, যার থেকে জনন কোষ অর্থাৎ, শুক্রাণু বা ডিম্বাণু তৈরি হয়। তাই ‘প্রাইমরডিয়াল জার্ম সেল’ তৈরি করে ফেলা মানেই, লক্ষ্যের পথে অনেকটাই এগিয়ে যাওয়া। বাকি কাজটা ওই কোষ নিজেই করে দেবে অর্থাৎ, শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর জন্ম দেবে। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা স্টেম কোষ থেকে কৃত্রিম ভ্রুণ বা স্টেম কোষ থেকে জনন কোষ তৈরির প্রক্রিয়া নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরেই গবেষণা করছেন।

লক্ষ্য আসলে কী?

গবেষণা সবে চলছে। মানুষের উপর পরীক্ষা করে সাফল্য কতখানি আসবে, তার নিশ্চয়তা বিজ্ঞানীরা দিতে পারেননি। নীতিগত দিক থেকে অবশ্য নানা কথা উঠেছে। উঠেছে কৃত্রিম ভাবে জনন কোষ সৃষ্টি এবং তার প্রতিরূপ তৈরির বিপদের কথা। তেমনই ভিন্নমতও রয়েছে।

গবেষকেরা দাবি করছেন, সন্তানহীন দম্পতির মুখে হাসি ফোটাতেই এমন প্রচেষ্টা চলছে। পাশাপাশি, এই পদ্ধতিতে জিনগত ত্রুটিগুলিকেও মেরামত করা যাবে। জিনগত রোগ নিয়ে জন্মাবে না শিশু। দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছেন, এমন পুরুষ বা মহিলাও কৃত্রিম জনন কোষের ভরসায় সন্তানের জন্ম দিতে পারেন। একই সুবিধা হবে সমলিঙ্গের দম্পতিদেরও।

বেশি বয়সে সন্তানধারণের ইচ্ছা হলে এই পদ্ধতি কার্যকর হতে পারে বলেও দাবি। আইভিএফ পদ্ধতি যেখানে ব্যর্থ হবে, সেখানে এই প্রক্রিয়ায় সুস্থ সন্তানের জন্ম দেওয়া সম্ভব হবে বলেও দাবি করা হয়েছে।

Advertisement
আরও পড়ুন