Longevity Medicine

‘বুড়ো’ হওয়া ঠেকাবে দুই ওষুধ! আয়ু বৃদ্ধির অস্ত্র খুঁজে পাওয়ার দাবি করলেন বিজ্ঞানীরা

দু’টি ওষুধ ক্যানসার, ডায়াবিটিসের মতো রোগের চিকিৎসায় লাগত। এখন দেখা গেল, তারা যৌবন ধরে রাখার মোক্ষম অস্ত্র হতে পারে। ওষুধ দু’টি নির্দিষ্ট মাত্রায় ব্যবহার করা গেলে আয়ুবৃদ্ধি হতে পারে বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০২৫ ১৭:২৫
Scientists find pill that may slow aging and boost Longevity

চেনা ওষুধেই দীর্ঘায়ু হওয়ার জাদুকাঠি । ছবি: ফ্রিপিক।

চেনা ওষুধ। তবে তার মধ্যেই যে এমন জাদু লুকিয়ে ছিল, তা কে জানত! প্রথম খুঁজে পেলেন ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ ইস্ট অ্যাঙ্গলিয়ার স্কুল অফ বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেসের বিজ্ঞানীরা। সে দু’টি ওষুধ ক্যানসার, ডায়াবিটিসের মতো রোগের চিকিৎসায় লাগত। এখন দেখা গেল, তারা যৌবন ধরে রাখার মোক্ষম অস্ত্র হতে পারে। ওষুধ দু’টি নির্দিষ্ট মাত্রায় ব্যবহার করা গেলে আয়ুবৃদ্ধি হতে পারে বলে দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।

Advertisement

বুড়ো হতে চান না? বার্ধক্যকে থামিয়ে দিতে চান? মনে মনে সাধ, বয়সের কাঁটা ঘুরবে বিপরীতে। বার্ধক্যের দোরগোড়ায় আসা মাত্রই জীবনের চাকা মুখ ঘুরিয়ে গড়গড়িয়ে পিছন দিকে চলবে। অর্থাৎ, ফিরে যাওয়া যাবে যৌবনে। বয়সের গতি কমানো যায় কি না, তা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন বিশ্বের তাবড় বিজ্ঞানীরা। যৌবন ধরে রাখার কৌশল রপ্ত হলেই অমরত্ব প্রায় হাতের মুঠোয় চলে আসবে। বার্ধক্যকে ঠেকিয়ে রাখার এই যে অদম্য বাসনা, তা থেকেই ‘অ্যান্টি-এজিং’ নিয়ে হুলস্থূল শুরু হয়ে গিয়েছে বিজ্ঞানীমহলে। স্টেম কোষ প্রতিস্থাপন থেকে ক্লোনিং— চিকিৎসা বিজ্ঞানের যত রকম দিক আছে, তার সব ক’টিই আঁতিপাতি করে খোঁজা হচ্ছে। আর তা করতে গিয়েই দু’টি ওষুধের নাম প্রকাশ্যে এসেছে— র‌্যাপামাইসিন এবং মেটাফরমিন। র‌্যাপামাইসিন ক্যানসার প্রতিরোধী ওষুধ আবার অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সময়েও এর প্রয়োগ হয়। আর মেটামরফিন ডায়াবিটিসের ওষুধ। টাইপ ২ ডায়াবিটিসের চিকিৎসায় রোগীদের দেওয়া হয়। কিন্তু এখানে চমক আছে। ওষুধ দু’টি নিজ নিজ ক্ষেত্রে কাজ করে ঠিকই, কিন্তু তাদের মিলিয়ে মিশিয়ে যদি নির্দিষ্ট ডোজ়ে ব্যবহার করা হয়, তা হলে এদের ক্ষমতা হবে দেখার মতো। তখন কোষের পুনর্গঠন, কোষের বৃদ্ধি ও বিভাজনে এরা মুখ্য ভূমিকা নেবে। আরও কিছু কাজ করবে, যেমন অতিরিক্ত ক্যালোরি জমতে দেবে না শরীরে। কড়া ডায়েট বা ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ের মতো দীর্ঘ ক্ষণের উপোস না করেও ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

জিনবিদ্যার সাহায্যে ক্রোমোজ়োমের অদলবদল ঘটিয়ে বার্ধক্যকে থামিয়ে দেওয়ার কৌশল নিয়ে গবেষণা চলছে। মানুষের শরীরে প্রতি দশ বছর অন্তর হার্ট, লিভার, কিডনি, ফুসফুসের কার্যক্ষমতা ৫-১০ শতাংশ হারে কমতে থাকে। সাধারণত ৩০ বছরের পর থেকেই এই ক্ষয়ের প্রক্রিয়া শুরু হয়। তাই দেখা যায়, ৫০ বছরে গিয়ে হয়তো শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির ক্ষমতা প্রায় ২০ শতাংশ কমে গিয়েছে। ৮০ বছরে গিয়ে তাই ৫০ শতাংশ বা তার বেশি কমে যাবে। এর কারণ হল, কোষের ক্ষয় ক্রমাগতই হয়ে চলেছে। কোষের মূল জিনগত উপাদান হল ক্রোমোজোম। যা দেখতে ‘এক্স’-অক্ষরের মতো। এর দু'টি বাহু, ছোটটির শেষ প্রান্তকে বলে টেলোমিয়ার। ক্ষয়টা হয় এখানেই। কোষ কত বার বিভাজিত হবে তার হিসেব আছে। যখন বিভাজন প্রক্রিয়া একেবারেই বন্ধ হয়ে যাবে, তখনই কোষের মৃত্যু হবে। গবেষকেরা দাবি করেছেন, ওষুধ দু’টির কাজ শুরু হবে সেখান থেকেই। কোষের ক্ষয় থামিয়ে দিয়ে নতুন কোষের পুনর্গঠনে এরা সাহায্য করবে। আর যদি কোষের ক্ষয় না-ই হয়, তা হলে বুড়ো হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বছরের পর বছর শরীরের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গই সচল ও সক্রিয় থাকবে। চনমন করবে শরীরের সমস্ত কোষ। স্বাভাবিক নিয়মেই আয়ুবৃদ্ধি হবে।

তবে ওষুধ দু'টি আপাতত পশুদের শরীরে প্রয়োগ করে দেখা হয়েছে। মানুষের উপর প্রয়োগ করার কাজ শুরু হয়েছে। তার ফলাফল এখনও প্রকাশ্যে আনেননি বিজ্ঞানীরা। তার জন্য আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করতেই হবে।

Advertisement
আরও পড়ুন