গরমের দিনে চা-কফি বেশি নয়, খেতেও হবে মেপে, বয়স্কদের কী কী খাওয়া ভাল? ছবি: ফ্রিপিক।
কাঠফাটা গরমে বাড়ির বয়স্করা যাতে অসুস্থ হয়ে না পড়েন, সে চিন্তাই বেশি থাকে। যতই জ্বালাপোড়া রোদে কষ্ট হোক, অনেক বাড়িতেই প্রবীণেরা নিয়ম করে বাজার করতে বা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটা করতে বেরোবেনই। অনেককে কাজের জন্যও বাড়ির বাইরে বেরোতে হয়। তাই এই সময়টাতে শরীর ঠিক রাখা খুব জরুরি। চিকিৎসকেরা বারে বারেই সাবধান করছে, বেলা ১১টার র থেকে রোদে না বেরোতে। কারণ বাড়তে থাকা তাপমাত্রা ও আর্দ্রতায় ‘হিট স্ট্রোক’ হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তা ছাড়া ডিহাইড্রেশন বা জলশূন্যতার ভয়ও আছে। ডিহাইড্রেশন থেকে আবার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও বাড়ে।
গরমে সুস্থ থাকতে হলে খাওয়াদাওয়ায় সবচেয়ে আগে নজর দিতে হবে। এই সময়ে পেটের গোলমাল, অম্বল-বদহজম বেশি হয়। পেটের সমস্যা ভোগাতে থাকলে ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকিও বাড়বে। আর খাওয়াদাওয়ায় অনিয়ম, বেশি তেলমশলা দেওয়া খাবার খাওয়া, জল কম খেলে, গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কাও বেশি। তাই জেনে নিতে হবে এই সময়টাতে বয়স্কদের কেমন খাবার খেলে ভাল।
প্রথমত, মনে রাখতে হবে রোদ থেকে ফিরেই ফ্রিজের ঠান্ডা জল খাওয়া যাবে না। পুষ্টিবদ শম্পা চক্রবর্তী পরামর্শ দিলেন, রোদ থেকে ফিরে শরীর তেতে থাকে। তাই হঠাৎ করে ঠান্ডা জল খেলে এই পরিবর্তিত তাপমাত্রা শরীর মানিয়ে নিতে পারে না। ফলে শরীর খারাপ হয়। তাই আগে ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় কিছু ক্ষণ বসতে হবে। তার পর জল অল্প অল্প করে খেতে হবে। কাঁচা আমের শরবত, দইয়ের ঘোল, তরমুজের শরবত বা বেলের পানা খেলেও শরীর ঠান্ডা থাকবে।
প্রাতরাশে হালকা খাবার খাওয়াই শ্রেয়। যাঁদের বাইরে বেরোতে হয়, তাঁরা সকালে তেলে ভাজা লুচি, পরোটা খাবেন না। প্রোটিনও কম খেতে হবে। বদলে দই-ওট্স, দই-ভাত, দুধ-কর্নফ্লেক্স, ওট্সের চিল্লা বা ঘরে তৈরি দোসা খেতে পারেন। ডালিয়ার খিচুরি বা কিনোয়াও খাওয়া যেতে পারে।
দুপুরের খাওয়া হবে তেলমশলা ছাড়া। এই বয়সে সবচেয়ে বেশি দেখা দেয় ‘ইটিং ডিজ়অর্ডার’। অনেকের যেমন খাবারে অনীহা তৈরি হয়, তেমনই অনেকের মধ্যে অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে নেওয়ার প্রবণতাও দেখা যায়। ফলে ঘন ঘন বদহজম, পেটখারাপ, কোষ্ঠকাঠিন্য, গাঁটে গাঁটে ব্যথা ভোগায়। গরমের দিনে দুপুরে অল্প করে ভাত, ডালের জল, সব্জি, মাছ বা চিকেন খেলে সব্জি দিয়ে সট্যু খেলে ভাল। সঙ্গে স্যালাড রাখতে হবে। খাবার পাতে কাঁচা নুন একদমই চলবে না। রান্নায় চিনির মাত্রা কমাতে হবে। খাওয়ার পরে টক দই খেতে পারেন।
দুপুরের খাওয়ার পরে বিকেলের দিকে খিদে পেলে ওই সময়ে চপ বা তেলেভেজা নয়, বরং হালকা স্ন্যাক্স খাওয়া যেতে পারে। চিঁড়েতে আয়রন আছে। মুড়ি মেখে খেতে পারেন। ড্রাই ফ্রুট্স খাওয়া খুব ভাল। একটা খেজুর, দু’টি করে আখরোট, কাঠবাদাম, চিনেবাদাম মিশিয়ে খেতে পারেন। ফল খেলে বিকেল ৫টার মধ্যে খেয়ে নিতে হবে। জলের ভাগ বেশি এমন ফলই খেতে হবে গরমের দিনে। তরমুজ, শসার মতো ফল খেতে পারেন। চা বা কফি কম খাওয়াই ভাল। চা খেলে দুধ-চিনি ছাড়া খেলে অম্বল কম হবে।
রাতের খাওয়া ৯টার মধ্যে সেরে নিতে হবে। রাতে একদমই হালকা খেতে হবে। ভাত খাওয়ার অভ্যাস থাকলে এক কাপের বেশি নয়, না হলে দু’টি রুটি, এক বাটি সব্জি খেতে পারেন। প্রোটিন রাতে যতটা সম্ভব কম খাওয়ারই পরামর্শ দিলেন পুষ্টিবিদ।