Golden Hour After Heart Attack

‘গোল্ডেন আওয়ার’ কী? ওই সময়ে কোন কোন কাজ দ্রুত করলে হার্ট অ্যাটাকের রোগীকে বাঁচানো সম্ভব?

হার্ট অ্যাটাক হয়েছে কি না ধরতেই অনেক সময় লেগে যায়। পরিবারের কারও এমন হলে আগে লক্ষণ চিনতে হবে। তার পর থেকে কী কী করণীয়, সে বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিন।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২৫ ১৩:০৭
What is Golden Hour after the onset of Heart Attack symptoms, doctor explains what to do in this time

হার্ট অ্যাটাক হয়েছে বুঝলে ঠিক কী কী করতে হবে, পরামর্শ চিকিৎসকের। ছবি: ফ্রিপিক।

বুকের বাঁ দিকে চাপা ব্যথা শুরু হলে অনেকেই ভাবেন, হজমের গণ্ডগোল। তার পরেই শুরু হয় দরদর করে ঘাম, শ্বাসকষ্ট। হার্ট অ্যাটাক হয়েছে কি না, তা বুঝতেই এতটা সময় পেরিয়ে যায় যে রোগীকে যত ক্ষণে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, তত ক্ষণে বাঁচানোর সময়টুকুও পেরিয়ে যায়। অথচ চিকিৎসকেরা বলেন, হার্ট অ্যাটাকের পরে ৬০ থেকে ৯০ মিনিট সময়টাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ওই সময়ের মধ্যে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে প্রাইমারি অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টি করাতে পারলে রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়। কিন্তু সমস্যা হল, হার্ট অ্যাটাক হয়েছে কি না তা বোঝা ও এর পরবর্তী ১ থেকে ২ ঘণ্টার মধ্যে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া— এই দু’টি কাজই ঠিকমতো হয়ে ওঠে না। কারণ, বিষয়টি নিয়ে অনেকেরই স্বচ্ছ ধারণা নেই।

Advertisement

হার্ট অ্যাটাকের পরবর্তী ১ থেকে ২ ঘণ্টা অবধি সময়টাকেই ‘গোল্ডেন আওয়ার’ বলা হয়। হৃদপিন্ডের পেশিগুলিকে পুনর্জীবিত করার জন্য আদর্শ ওই সময়। তখন যত দ্রুত রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক করা যায়, ততই কমে ঝুঁকি। অথচ ওই ৯০ মিনিটে অনেকেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পান না। ফলে বাড়ে জীবনের ঝুঁকি। গোল্ডেন আওয়ারের সময়টা বুঝতে হলে আগে জেনে নিতে হবে, হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ কী কী।

হার্ট অ্যাটাক হয়েছে কি না বুঝবেন কী দেখে?

হার্টের চিকিৎসক দিলীপ কুমার জানালেন, বুকের মাঝে একটা চাপা ব্যথা হবে, যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে ‘কমপ্রেসিভ চেস্ট পেন’। সেই সঙ্গে প্রচুর ঘাম হবে। জামাকাপড় ভিজে যেতে পারে ঘামে। ব্যথা শুধু বুকে হবে তা নয়, অনেকেরই বুকে ব্যথা হয় না। তবে বাঁ দিকের চোয়াল, কাঁধ এবং হাতে ব্যথা হতে পারে। কারও আবার পিঠের দিকেও এই ব্যথা ছড়িয়ে যেতে পারে। মুখ ফ্যাকাসে, হাত পা ঠান্ডা হয়ে যেতে পারে। রক্তচাপ কমে যেতে পারে। এ সব দেখলে বুঝতে হবে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে।

বাড়ির লোকজনের কী করা উচিত?

বাড়িতে চিকিৎসক ডেকে এনে পরীক্ষা করানোর চেষ্টা করবেন না। বরং সঙ্গে সঙ্গে দু’টি অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট অর্ধেক গ্লাস জলে গুলে খাইয়ে দিন রোগীকে।

এর পরে জিভের নীচে সরবিট্রেট দিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। এতে প্রাথমিক ভাবে হার্ট অ্যাটাক থেকে মৃত্যুর ঝুঁকি অন্তত ৩০ শতাংশ কমে যাবে।

হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ বোঝার পর থেকে হাতে থাকবে ১ থেকে ২ ঘণ্টা। ওই সময়ের মধ্যেই কাছাকাছি হাসপাতালে আগে নিয়ে যেতে হবে। এখন প্রায় সব হাসপাতালেই এর জন্য থাকে আলাদা বিভাগ। এ ক্ষেত্রে আপৎকালীন নম্বরে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স পৌঁছে যাবে রোগীর বাড়ি। তেমন নম্বর আগে থেকেই ফোনে সেভ করে রেখে দেবেন। বিশেষ করে, বাড়িতে বয়স্ক সদস্য বা হার্টের রোগী থাকলে তা করতেই হবে।

হার্ট অ্যাটাক বুঝলে কার্ডিয়োপালমোনারি রিসাসিটেশন (সিপিআর) করা হবে। প্রয়োজনীয় ইঞ্জেকশন, ওষুধ থাকবে অ্যাম্বুল্যান্সেই। এই ধরনের অ্যাম্বুল্যান্সকে বলে ‘কার্ডিয়াক অ্যাম্বুল্যান্স’ বা ‘অ্যাডভান্সড লাইফ সাপোর্ট অ্যাম্বুল্যান্স’।

প্রাইমারি অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টি করানো যাবে এমন হাসপাতালেই যেতে হবে। রোগী হাসপাতালে পৌঁছনোর পর থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যেই ক্যাথল্যাবে নিয়ে গিয়ে অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টি করে ফেলতে হবে। তা হলেই রোগীর প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে।

অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টির সুবিধা যদি না থাকে, তা হলে প্রথমে থ্রম্বোলাইসিস করে রোগীকে কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থায় আনার চেষ্টা করা হয়। এ ক্ষেত্রে রক্তনালিতে রক্ত জমাট বেঁধে থাকলে, তা ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তাতে রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক হয়। পরে অন্য হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে অ্যাঞ্জিয়োপ্লাস্টি করানো যেতে পারে।

Advertisement
আরও পড়ুন