Copper For Human Body

তামার বোতলে জল খান, খাবারে ‘তামা’ থাকে কি? না হলে কোন সমস্যায় পড়বেন?

অল্প পরিমাণে প্রয়োজন। কিন্তু এর গুণ অনেক। শরীরে কপারের অভাব ঘটলে কী ভাবে তা বুঝবেন? এ থেকে কী কী হতে পারে?

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০২৫ ১৯:৫০
তামার অভাব হলে শরীর কী ভাবে জানান দেবে?

তামার অভাব হলে শরীর কী ভাবে জানান দেবে? ছবি: সংগৃহীত।

শরীরের উপকারের জন্য অনেকেই তামার পাত্রে জল খান। বলা হয়, তামার পাত্রে রাখা জল শরীর শীতল রাখতে সাহায্য করে। এর আরও অনেক স্বাস্থ্যকর উপযোগিতাই আছে। গত কয়েক বছর ধরে নতুন করে তামার পাত্রে জল খাওয়া নিয়ে উৎসাহও বেড়েছে। কিন্তু দৈনন্দিন খাবারে ‘তামা’ কতটা আছে, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করেন কি?

Advertisement

শরীর সুস্থ রাখতে কিছু ‘মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস’-এর দরকার হয়। যেগুলি যৎসামান্য লাগলেও অত্যাবশ্যক। তেমনই একটি উপাদান হল কপার বা তামা। ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ’-এর তথ্য বলছে, ঊনিশোর্ধ্ব মানুষের দৈনিক ৯০০ মাইক্রোগ্রাম কপারের দরকার হয়। গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে সেই পরিমাণ আরও কিছুটা বেড়ে যায়।

পুষ্টিবিদেরা জানাচ্ছেন, অল্প পরিমাণে দরকার হলেও, এই খনিজের অভাব শরীরে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। রক্তাল্পতা, শরীর দুর্বল হয়ে যাওয়া, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া সহ একাধিক সমস্যা হতে পারে শুধু কপারের অভাবেই। পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘কপারের কার্যকারিতা অনেক। আয়রন শোষণে সহায়তা করে লোহিত রক্তকণিকা গঠনে ভূমিকা রাখে খনিজটি। কপারের অভাব হলে আয়রন ঠিকমতো কাজ করবে না। তার প্রভাবে রক্তাল্পতা হতে পারে। শরীরে ক্লান্তি আসতে পারে। তবে শুধু এ টুকুই নয়, তামার কার্যকারিতা অনেক।’’

শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে: কপার খাবার পরিপাকেও ভূমিকা রাখে। এই খনিজ খাবার হজমকারী উৎসেচকের কাজে সহায়তা করে এবং শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও তামার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। রক্তে থাকা শ্বেতকণিকা গঠন এবং তার কার্যাবলিতে সাহায্য করে কপার। বিশেষত শ্বেতরক্তণিকায় থাকা নিউট্রোফিল গঠনে এর বিশেষ ভূমিকা থাকে। শরীরে কপারের ঘাটতি হলে ‘নিউট্রোপেনিয়া’ হয়, যাতে শ্বেত রক্তকণিকা কমে যায়। শ্বেত রক্তকণিকা কমে গেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেঙে পড়ে।

মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা: মস্তিষ্কের কোষে কোষে বার্তা বহন করে নিউরোট্রান্সমিটার। শরীর সুস্থ রাখার ক্ষেত্রেও তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিউরোট্রান্সিমিটারের সঠিক ভাবে কাজ করার জন্য কপার বিশেষ জরুরি। স্নায়ুতন্ত্রের উপর মায়েলিনের পরত থাকে। এই মায়েলিনের কাজকর্ম সঠিক ভাবে সম্পাদনের ক্ষেত্রেও কপার গুরুত্বপূর্ণ। সেই কারণে কপারের ঘাটতি হলে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমে যেতে পারে, যার প্রভাব পড়বে সমগ্র শরীরেই।

হাড়ের কর্মক্ষমতা: হাড় গঠনেও কপারের ভূমিকা রয়েছে। কোলাজেনের উৎপাদনে এই খনিজ সাহায্য করে। ক্যালশিয়াম এবং জ়িঙ্কের সঙ্গে মিলেমিশে হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধিতেও কপার গুরুত্বপূর্ণ।

হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখে: রক্তবাহী নালী গঠনেও তামার ভূমিকা থাকে। অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে হার্ট ভাল রাখতেও কপার জরুরি।

এত উপকারী খনিজে মিলবে কিসে?

পুষ্টিবিদ শম্পা বলছেন, ‘‘ বিভিন্ন রকম সামুদ্রিক মাছে, প্রাণীর শরীরে কপার মেলে। এ ছাড়া বিভিন্ন রকম বীজ, বাদাম, দানাশস্য, সবুজ শাকসব্জি, মাশরুম, ডাল, মুরগি বা পাঁঠার যকৃতে, মাছের মাথা খেলেও শরীরে কপারের ঘাটতি দূর হবে। ’

তবে কপার যেমন উপকারী তেমনই প্রয়োজনের অতিরিক্ত ক্ষতিকর। ‘উইলসন’ নামক অসুখ হলে কপার রয়েছে এমন খাবার খাওয়া যায় না। এই অসুখে শরীরে কপার সঞ্চিত হতে থাকে। এ ছাড়া সুস্থ মানুষের কপার রয়েছে এমন খাবার খাওয়ায় কোনও সমস্যা নেই। বরং এর অভাবে শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে।

Advertisement
আরও পড়ুন