Uttarakhand Cloudburst

৩৬ কোটি ঘনমিটার কাদামাটি, নুড়ির স্তূপ! উত্তরকাশীতে উদ্ধার ২৭৪ জন, এখনও নিখোঁজ অনেকে

মহারাষ্ট্রের জলগাঁও থেকে ১৯ জনের একটি দল উত্তরকাশী গিয়েছিল। তাদের মধ্যে মাত্র তিন জনের সঙ্গে যোগাযোগ করা গিয়েছে। বাকি ১৬ জন নিখোঁজ। ধরালীর অদূরে হর্ষিলের সেনাছাউনির ১১ জনও নিখোঁজ। তাঁদের খোঁজ চলছে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২৫ ১৭:৫০
উত্তরকাশীর ধ্বংসচিত্র।

উত্তরকাশীর ধ্বংসচিত্র। ছবি: পিটিআই।

মেঘভাঙা বৃষ্টি ও হড়পা বানের জোড়া ফলায় মঙ্গলবার দুপুরে তছনছ হয়ে গিয়েছিল উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীর একাধিক এলাকা। সেই ঘটনার পর ৪৮ ঘণ্টারও বেশি সময় পেরিয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন সূত্র মতে, এখনও পর্যন্ত ধরালী ও সংলগ্ন এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ২৭০ জনকে। তবে ৫০ জন এখনও নিখোঁজ।

Advertisement

মঙ্গলবারের ওই বিপর্যয়ের পরেই পুরোদমে উদ্ধারকাজ শুরু করেছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। উদ্ধারকারী দলগুলির সঙ্গে কথা বলেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামী। হাসপাতালে গিয়ে আহতদের সঙ্গে দেখাও করেছেন তিনি। উত্তরকাশীর জেলাশাসক প্রশান্ত আর্য জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত পাঁচ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। কিন্তু হড়পা বানে ঠিক কত জন ভেসে গিয়েছেন, সেই সংখ্যা এখনও অজানা। মহারাষ্ট্রের জলগাঁও থেকে ১৯ জনের একটি দল উত্তরকাশী গিয়েছিল। তাদের মধ্যে মাত্র তিন জনের সঙ্গে যোগাযোগ করা গিয়েছে। বাকি ১৬ জন নিখোঁজ। ধরালীর অদূরে হর্ষিলের সেনাছাউনির ১১ জনও নিখোঁজ। তাঁদের খোঁজ চলছে।

গঙ্গোত্রী থেকে মুখওয়া যাওয়ার পথে ৩০৭ জন পুণ্যার্থীকে উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালেই তাঁদেরকে হর্ষিলের হেলিপ্যাডে পাঠানো হয়েছে। সকালেই ধরালীতে পৌঁছেছেন এনডিআরএফের ৬৯ জন জওয়ান। সঙ্গে মৃতদেহ শনাক্তকারী ক্যাডাভার কুকুরও রয়েছে। ড্রোন, স্যাটেলাইট ফোন এবং অত্যাধুনিক নানা সরঞ্জামের সাহায্যে ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে উদ্ধারকাজ চলছে।

কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত তথ্য এবং ছবি বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞদের অনুমান, মেঘভাঙা বৃষ্টির পরবর্তী হড়পা বানে ক্ষীরগঙ্গা নদী বেয়ে প্রায় ৩৬০ মিলিয়ন ঘনমিটার আয়তনের কাদামাটি ও পাথরের স্তূপ নেমে এসেছিল ধরালীর উপর। এই ধ্বংসাবশেষের সম্মিলিত আয়তন ১,৪০,০০০টি অলিম্পিক সুইমিং পুলের সমান। মঙ্গলবার দুপুরে এই বিপুল পরিমাণ ধ্বংসাবশেষ প্রবল বেগে উপর থেকে নেমে আসে। মুহূর্তে খড়কুটোর মতো ভেসে যায় গোটা গ্রাম। দুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক রাজীব শরণ আলুওয়ালিয়া সংবাদমাধ্যম ‘টাইম্‌স অফ ইন্ডিয়া’কে বলেন, ‘‘প্রতি সেকেন্ডে ৬-৭ মিটার বেগে ধ্বংসাবশেষ নেমে এলে তা পথের যে কোনও কাঠামোকে গুঁড়িয়ে দিতে সক্ষম। এই গতি যদি দ্বিগুণ হয়, তা হলে ধ্বংসাবশেষের বহন ক্ষমতাও ৬৪ গুণ বৃদ্ধি পাবে।’’ বিশেষজ্ঞদের একাংশের অনুমান, দুর্যোগের আগের কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা বেশি থাকায় হিমবাহের গলন বেড়ে গিয়েছিল। তার জেরেই এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।

প্রসঙ্গত, মেঘভাঙা বৃষ্টির ফলে মঙ্গলবার দুপুর দেড়টা নাগাদ উত্তরকাশীর ধরালী গ্রামে পাহাড় থেকে নেমে এসেছিল হড়পা বান। ক্ষীরগঙ্গা নদীর অববাহিকায় মেঘভাঙা বৃষ্টির ফলে পাহাড়ের উপর থেকে নেমে আসে বড় বড় পাথর, বোল্ডার এবং কাদামাটির স্রোত। প্রথমে তা আছড়ে পড়ে ধরালী গ্রামের উপর। তার পর জলের তোড় নেমে আসে আশপাশের গ্রামগুলির উপরে। গোটা এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। অন্য দিকে, বুধবার একই ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় আঘাত হানে পার্শ্ববর্তী রাজ্য হিমাচল প্রদেশের কিন্নৌরে। আচমকা মেঘভাঙা বৃষ্টির জেরে হড়পা বান দেখা দেয়। জলের তোড়ে ভেসে যায় টাংলিং নালার উপরের অস্থায়ী সেতু। আটকে পড়েন বহু পুণ্যার্থী। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর তৎপরতায় শেষমেশ জ়িপলাইনের সাহায্যে উদ্ধার করা হয় চারশোরও বেশি পুণ্যার্থীকে।

Advertisement
আরও পড়ুন