India-Bangladesh

হাসিনা-অস্ত্র ঢাকার, উপায় ভাবছে দিল্লি

সংশ্লিষ্ট মহলের পরামর্শ, রাজনৈতিক আবেগ ঝরিয়ে বাস্তবসম্মত ভাবে বাংলাদেশের উগ্র এবং ক্রমবর্ধমান ভারত-বিরোধিতার নিরসনের কথা ভাবা প্রয়োজন। বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারিতে ভোট হলেও, ভারত সম্পর্কে ঘৃণা রাতারাতি কমে যাবে, এমনটা ভাবা দুরাশা।

অগ্নি রায়
শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৭:৩৯

— প্রতীকী চিত্র।

বাংলাদেশের এই উত্তাল সময়ে সে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নয়াদিল্লির আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টিকে পুরোমাত্রায় প্রচারের কাজে লাগাচ্ছে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তিকালীন সরকার। নয়াদিল্লি এখনও এই নিয়ে কোনও কৌশলী পদক্ষেপ করতে পারেনি, বরং কোণঠাসা হচ্ছে। বাংলাদেশে ক্রমশ বাড়তে থাকা ভারত-বিরোধিতার মধ্যে দাঁড়িয়ে এমনটাই মনে করছে কূটনৈতিক মহল। সেই সঙ্গে বাড়ছেকূটনীতির স্নায়ুযুদ্ধও।

ভারতের উপরে চাপ বাড়াতে দিল্লির বাংলাদেশ হাই কমিশন আজ থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য ভিসা পরিষেবা বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছে। হাই কমিশনের দরজায় একটি বিজ্ঞপ্তি সেঁটে দেওয়া হয়েছে, যাতে লেখা, অনিবার্য কারণবশত পরবর্তী বিজ্ঞপ্তি না আসা পর্যন্ত ভিসা এবং অন্যান্য কনস্যুলার পরিষেবা স্থগিত করা হল। ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশের উপ-দূতাবাসও ভিসা পরিষেবা সাময়িক বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছে। অন্য দিকে বাংলাদেশে কিন্তু চট্টগ্রাম ছাড়া সর্বত্র ভারতীয় ভিসা পরিষেবা চালু রয়েছে। আজ দিল্লির বাংলাদেশ হাই কমিশনের পদক্ষেপের পরে এই কথাটা মনে করিয়েছে নয়াদিল্লি।

তবে সংশ্লিষ্ট মহলের পরামর্শ, রাজনৈতিক আবেগ ঝরিয়ে বাস্তবসম্মত ভাবে বাংলাদেশের উগ্র এবং ক্রমবর্ধমান ভারত-বিরোধিতার নিরসনের কথা ভাবা প্রয়োজন। বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারিতে ভোট হলেও, ভারত সম্পর্কে ঘৃণা রাতারাতি কমে যাবে, এমনটা ভাবা দুরাশা। কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তিকালীন সরকার নয়াদিল্লিকে অস্বস্তিতে রাখা এবং ঘরোয়া রাজনীতিতে ভারত-বিরোধী হাওয়া তোলার জন্য গত সতেরো মাস ধরে লাগাতার শেখ হাসিনার ভারতে থাকার বিষয়টি সামনে নিয়ে আসছে। ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ভারতের ন্যায্য অভিযোগগুলিকে ভোঁতা করতে মাঝে মাঝেই হাসিনাকে ফেরত চেয়ে নয়াদিল্লিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে।

কূটনৈতিক মহলের মতে, ফাঁসির দড়ি ঝুলছে যেখানে, শেখ মুজিবের কন্যাকে সেখানে অবশ্যই ফেরত পাঠাতে পারে না নয়াদিল্লি। বিদেশমন্ত্রী এবং বিদেশ মন্ত্রকের তরফে বার বার জানানো হয়েছে, হাসিনা কবে ফিরবেন সেটা তাঁর উপর নির্ভর করছে। কিন্তু এখন মনে করা হচ্ছে, ঢাকার হাতে তুলে না দিলেও ভারতের বন্ধু উপসাগরীয় রাষ্ট্র অথবা ইউরোপের দেশগুলির সঙ্গে দৌত্য করা প্রয়োজন। যাতে সেখানকার কোনও দেশে নিরাপদে হাসিনা রাজনৈতিক শরণার্থী হতে পারেন। এই দেশগুলির বাংলাদেশের সঙ্গে পারস্পরিক স্বার্থের সম্পর্ক নেই, সীমান্তও নেই ভারতের মতো। ফলে তাদের পক্ষে হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া সহজতর। বাংলাদেশে কবে পরিস্থিতি আওয়ামী লীগের জন্য সুগম হবে, তা চূড়ান্ত অনিশ্চিত। বিএনপি সরকার এলেই যে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর উপর থেকে সমস্ত মামলা তুলে নেওয়া হবে, এমনও স্থির করে কেউ বলতে পারে না।

পাশাপাশি, ভারতের মাটি থেকে গত দু’তিন মাস ধরে লাগাতার হাসিনা নিশানা করে চলেছেন ইউনূসকে। আওয়ামী লীগকে জাগানোর চেষ্টা করছেন জ্বালাময়ী বক্তৃতায়। আজও তিনি সাম্প্রতিক হিংসা নিয়ে মুখ খুলেছেন। গোটা বিষয়টি ভারত সরকারের অনুমতি ছাড়া সম্ভব হত না। কিন্তু হাসিনাকে দিয়ে এই ছদ্ম-যুদ্ধ লড়ে সাউথ ব্লকের আপাতত লাভ হবে, না কি পরিস্থিতি আরও জটিল হবে, সেই প্রশ্নও থাকছে।

বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উত্তরোত্তর খারাপ হলে ভারতের জন্য তিনটি চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রথমত ৪ হাজার কিলোমিটার সীমান্তে নিরাপত্তাহীনতা এবং অনুপ্রবেশ বাড়বে। দুই, ভারত-বিরোধী শক্তিগুলো আন্তঃসীমান্ত ঘাঁটি গড়তে সুবিধা পাবে। তিন, এই ফাটলের মূল্যে চিন ও পাকিস্তান তার প্রভাব একচ্ছত্র ভাবে বাড়িয়ে চলবে ঢাকায়। চলতি বছরে চিনের কুনবিং-এ ঢাকা, ইসলামাবাদ এবং বেজিংয়ের ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে বিদেশসচিব স্তরের। ইউনূস সরকারের সঙ্গে এই দুই রাষ্ট্রের সম্পর্ক তার পর ক্রমেই গভীর হতে দেখা যাচ্ছে।

বিদেশ মন্ত্রকের একাংশের বক্তব্য, সে দেশের সমাজমাধ্যমে এবং রাস্তা থেকে যে চিৎকার কানে আসছে, তার থেকে সারবস্তুকে আলাদা করে দেখা দরকার বটেই। কিন্তু বাংলাদেশে এখন যা পরিস্থিতি, তাতে এই হট্টগোলই কূটনৈতিক সারবস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে ইউনূস সরকারের কল্যাণে। তাদের নীতিই হল এই চিৎকার এবং উগ্র ভারত বিরোধিতাকে হাওয়া দিয়ে চলা। বিদেশ মন্ত্রক ঘরোয়া ভাবে জানাচ্ছে, গোটা বিষয়টায় ভারতের কোনও নিয়ন্ত্রণও নেই।

আরও পড়ুন