রাজনাথ সিংহ। — ফাইল চিত্র।
উপলক্ষ বন্দে মাতরম গানের দেড়শো বছর পূর্তি। কিন্তু আসল উদ্দেশ্য হল পশ্চিমবঙ্গের ভোটের কথা মাথায় রেখে বাঙালি অস্মিতাকে উস্কে দিয়ে বিজেপির পক্ষে ভোট টানা। যে কারণে আজ লোকসভার বিতর্কে বর্ষীয়ান বিজেপি নেতা রাজনাথ সিংহ থেকে প্রথম বারের সাংসদ বিপ্লব দেব সকলেই সরব হলেন পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকারের ‘কুশাসন’ নিয়ে। পাল্টা বিরোধীদের বক্তব্য, গোড়া থেকেই ওই বিতর্কের মূল লক্ষ্য যে পশ্চিমবঙ্গ হবে তা বোঝাই যাচ্ছিল। হয়েছেও তা-ই।
আজ বিতর্কে অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লোকসভায় প্রবেশ করতেই বিজেপি সাংসদেরা বন্দে মাতরম্ নিয়ে স্লোগান দেওয়ার পাশাপাশি বলে ওঠেন, ‘বিহার কি জিত হামারি হ্যায়, অব বাঙ্গাল কি বারি হ্যায়।’ যার অর্থ বিহারের জয় আমাদের। এর পরের লক্ষ্য হল পশ্চিমবঙ্গ। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজের বক্তব্যে পশ্চিমবঙ্গ বা তৃণমূলের নাম না নিলেও, তৃণমূলকে আক্রমণের দায়িত্ব নেন বর্ষীয়ান নেতা রাজনাথ সিংহ। বাংলার অতীতের গৌরবময় ইতিহাসের সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতির তুলনা করে রাজনাথ বলেন, “বাংলার জমি পুণ্যভূমি। আধ্যাত্মিকতা, সংস্কৃতি ও বিপ্লবী আন্দোলনের ক্ষেত্র বলে পরিচিত হলেও এখন তা তুষ্টিকরণের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এক সময়ে একতার কথা বলা বাংলা থেকেই নকশালপন্থী আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। যে বাংলা এক সময়ে মহিলাদের সমান অধিকারের আন্দোলনের প্রশ্নে পথিকৃৎ ছিল তা আজ মহিলাদের জন্য অসুরক্ষিত।”বিজেপি সূত্রের দাবি, অনুন্নয়ন, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ও তুষ্টিকরণের রাজনীতির ফলে পশ্চিমবঙ্গ দেশের অন্য অংশের তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে গিয়েছে। রাজনাথের কথায়, “পশ্চিমবঙ্গের পতনের জন্য দায়ী প্রথমে বামপন্থীদের হিংসাত্মক রাজনীতি ও তারপরে তৃণমূলের কুশাসন।” বিশেষ করে তৃণমূলের বিভাজনকারী রাজনীতি, তুষ্টিকরণ ও অনুপ্রবেশকারীদের সংরক্ষণ দেওয়ার নীতির সমালোচনা করে সরব হয়েছেন রাজনাথ। উস্কে দিতে চেয়েছেন মেরুকরণের হাওয়া। রাজনাথ বলেন, “হিন্দুদের আজ পশ্চিমবঙ্গ থেকে পালাতে হচ্ছে।”
বিজেপির আর এক সাংসদ তথা পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বিপ্লব দেব বলেন, “তৃণমূল সাংসদ দাবি করছেন দেশের ৬৮ শতাংশ স্বাধীনতা সংগ্রামী পশ্চিমবঙ্গের। তাহলে আজ বাংলার এই অবস্থা কেন! কেন মেয়েদের রাত সাতটার পরে বেরোতে না করছেন মুখ্যমন্ত্রী! দেশের প্রথম ইস্পাত কারখানা, গাড়ি কারখানা হওয়া সত্ত্বেও কেন রাজ্যে উন্নয়ন একক সংখ্যায়!” পরিযায়ী শ্রমিক কেন বাড়ছে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি!” পাল্টা তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, কেন্দ্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসা মেটাতে ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করতে না পেরে এখন মিথ্যা অভিযোগ তুলে ভাতে মারার কৌশল নিয়েছে বিজেপি।