Parliament Winter Session

বিরোধীদের স্লোগান-বিক্ষোভের মধ্যেই ‘জিরামজি’ বিল পাশ হল লোকসভায়, মহাত্মাকে ভুলে যাওয়া লজ্জার! তোপ মমতার

বৃহস্পতিবার সকালেই প্রকল্প থেকে গান্ধীর নাম সরানোর প্রতিবাদ করে সংসদ চত্বরে মিছিল করেন বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’-র সাংসদেরা। লোকসভার অধিবেশন শুরু হলে গান্ধীর ছবি নিয়ে ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখান তাঁদের অনেকে। বিলের কপি ছিঁড়ে ফেলা হয়।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৪:১৮
(উপরে) ‘জিরামজি’ বিল পাশ হওয়ার সময় লোকসভায় বিক্ষোভ বিরোধী সাংসদদের। সকালে সংসদ চত্বরে প্রতিবাদ মিছিল ‘ইন্ডিয়া’-র সাংসদদের (নীচে)।

(উপরে) ‘জিরামজি’ বিল পাশ হওয়ার সময় লোকসভায় বিক্ষোভ বিরোধী সাংসদদের। সকালে সংসদ চত্বরে প্রতিবাদ মিছিল ‘ইন্ডিয়া’-র সাংসদদের (নীচে)। ছবি: পিটিআই।

বিরোধীদের হইহট্টগোলের মধ্যেই লোকসভায় পাশ করানো হল ‘জিরামজি’ বিল। ধ্বনিভোটে বিলটি পাশ হওয়ার পরেই বৃহস্পতিবার সারা দিনের জন্য লোকসভার অধিবেশন মুলতুবি করে দেন স্পিকার। তার আগে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পের নামবদল নিয়ে শাসক-বিরোধী তরজায় সরগরম ছিল লোকসভা। বৃহস্পতিবার কলকাতার ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহে শিল্প ও বাণিজ্য সম্মেলনে নামবদল নিয়ে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, “মনরেগা (১০০ দিনের কাজের প্রকল্প) থেকেই গান্ধীর নাম বাদ দেওয়া হল! লজ্জা হচ্ছে, জাতির জনককে ভুলে যাচ্ছি আমরা।”

Advertisement

বাণিজ্য সম্মেলন থেকেই মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্যের ‘কর্মশ্রী’ প্রকল্পের নাম বদলে মহাত্মা গান্ধীর নামে রাখছে তাঁর সরকার। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে তোপ দেগে মুখ্যমন্ত্রীর কটাক্ষ, “আপনারা গান্ধীকে সম্মান না-দিলে আমরা দেব। আমরা সম্মান দিতে জানি।”

১০০ দিনের কাজের প্রকল্প নিয়ে নতুন আইন আনতে চাইছে কেন্দ্র। সেই লক্ষ্যে মঙ্গলবার লোকসভায় পেশ করা হয় ‘বিকশিত ভারত- গ্যারান্টি ফর রোজগার অ্যান্ড আজীবিকা মিশন (গ্রামীণ)’। সংক্ষেপে ‘জিরামজি’। এত দিন গ্রামীণ কর্মসংস্থানের ওই প্রকল্পের নাম ছিল মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপাওয়ারমেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট, ২০০৫ (সংক্ষেপে মনরেগা)। প্রস্তাবিত বিলে গান্ধীর নাম না-থাকায় প্রতিবাদে সরব হয়েছে বিরোধী দলগুলি। প্রস্তাবিত বিলে বছরে ১০০ দিনের পরিবর্তে ১২৫ দিন কাজ দেওয়ার কথা বলা হলেও প্রকল্পের ৪০ শতাংশ ব্যয়ভার বহন করতে হবে রাজ্যগুলিকে। এই বিষয়টি নিয়েও আপত্তি জানিয়েছেন বিরোধী সাংসদেরা।

বৃহস্পতিবার সকালেই প্রকল্প থেকে গান্ধীর নাম সরানোর প্রতিবাদ করে সংসদ চত্বরে মিছিল করেন বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’-র সাংসদেরা। লোকসভার অধিবেশন শুরু হলে গান্ধীর ছবি নিয়ে ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখান তাঁদের অনেকে। বিলের কপি ছিঁড়ে ফেলা হয়। প্রস্তাবিত বিল নিয়ে বিতর্কে যোগ দেন কংগ্রেসের প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা, ডিএমকে-র টিআর বালু, এসপি-র ধর্মেন্দ্র যাদব। বিলের বিরোধিতা করে তারা সেটি নিয়ে সবিস্তার আলোচনার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানোর দাবি জানান। শেষমেশ অবশ্য বিরোধীদের স্লোগান-বিক্ষোভের মধ্যেই ধ্বনিভোটে বিলটি পাশ করানো হয়। বৃহস্পতিবারই বিলটি সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় পেশ করানো হতে পারে। শুক্রবার শীতকালীন অধিবেশনের শেষ দিন। বিরোধীদের অভিযোগ, যথাযথ আলোচনা ছাড়া তড়িঘড়ি করে শুক্রবারই বিলটি রাজ্যসভায় পাশ করানো হতে পারে।

প্রকল্পের নাম পরিবর্তন নিয়ে প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে রীতিমতো বাগ্‌যুদ্ধ হয় কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের। প্রিয়ঙ্কা কটাক্ষের সুরে বলেছিলেন, “এই সরকারের নাম বদল করার একটা বাতিক রয়েছে।” পাল্টা শিবরাজের দাবি, কংগ্রেসই বরং সব প্রকল্পের নাম বদলে জওহরলাল নেহরুর নামে করেছিল। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এ-ও দাবি করেন যে, ২০০৫ সালে প্রথম ইউপিএ সরকারের আমলে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প চালু হলেও পরে ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে গান্ধীর নাম জোড়া হয়েছিল।

কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলির দাবি, প্রকল্প থেকে গান্ধীর নাম সরিয়ে জাতির জনকের অপমান করা হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ উড়িয়ে শিবরাজের পাল্টা দাবি, নরেন্দ্র মোদীর সরকার গান্ধীর আদর্শ মেনেই কাজে বিশ্বাসী।

Advertisement
আরও পড়ুন