Punjab and Haryana High Court

‘সোনা ছেলে’ অপরাধ করলেও দোষ দেখতে পান না মায়েরা! নাবালিকা ধর্ষণ-খুনে বলল পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাই কোর্ট

২০১৮ সালে পাঁচ বছরের এক শিশুকন্যাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের পর খুন করেন এক যুবক। সাত বছর আগের ওই ঘটনায় অভিযুক্তের পাশাপাশি তাঁর মাকেও সাজা দিয়েছিল নিম্ন আদালত। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন মা-ছেলে।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৬:০৩

— প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

‘সোনা ছেলে’ অপরাধী হলেও তার দোষ দেখতেই পান না মায়েরা! পাঁচ বছরের শিশুকে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় অপরাধী ও তাঁর মাকে এমনটাই বলল পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাই কোর্ট। ২০১৮ সালের ওই ঘটনায় সম্প্রতি সাজাঘোষণা করেছে হাই কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চ। অপরাধীর ৩০ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৩০ লক্ষ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। পাশাপাশি, নিম্ন আদালতে দোষী সাব্যস্ত মায়ের সাজা মকুব করেছে।

Advertisement

২০১৮ সালে পাঁচ বছরের এক শিশুকন্যাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের পর খুন করেন এক যুবক। সাত বছর আগের ওই ঘটনায় অভিযুক্তের পাশাপাশি তাঁর মাকেও সাজা দিয়েছিল নিম্ন আদালত। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন মা-ছেলে। সেই আবেদনের শুনানিতেই এমনটা বলেছেন হাই কোর্টের বিচারপতি অনুপ চিটকারা ও বিচারপতি সুখবিন্দর কউর। দুই বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, পরিবারের সদস্যেরা, বিশেষত মায়েরা তাঁদের ছেলেকে ‘সোনা ছেলে’ বলে মনে করেন। ছেলে যে দোষই করুক না কেন, অন্ধ ভালবাসার জেরে তাদের দোষ দেখতেই পান না মায়েরা! এর পরেই দোষীকে ৩০ বছর জেলের সাজা দেয় আদালত। সঙ্গে ৩০ লক্ষ টাকা জরিমানাও করা হয়, যা নিহত শিশুটির পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হবে।

ঘটনার সূত্রপাত ২০১৮ সালের ৩১ মে। অভিযুক্ত যুবক সে সময় নির্যাতিতা শিশুটির বাবার অধীনে কাজ করতেন। ওই দিন অভিযুক্ত কোনও ভাবে শিশুটিকে ভুলিয়েভালিয়ে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। সে সময় অভিযুক্তের মা বাইরে কাজে গিয়েছিলেন। ফাঁকা বাড়িতে শিশুটিকে ধর্ষণের পর রান্নার ছুরি দিয়ে কুপিয়ে খুন করেন ওই যুবক। তার পর চালের বড় কৌটোয় লুকিয়ে ফেলেন দেহটি। এর কিছু ক্ষণ পর যুবকের মা বাড়ি ফেরেন। কয়েক ঘণ্টা পর শিশুটিকে খুঁজতে খুঁজতে সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরে যুবকের বাড়ি পৌঁছোন গ্রামবাসীদের একাংশ। কিন্তু ভিতরে ঢুকতে গেলে ঢাল হয়ে দাঁড়ান যুবকের মা। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তাঁর ছেলে নির্দোষ। পরে সকলে জোর করে ঘরে ঢুকতেই চালের কৌটো থেকে শিশুটির ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়। অভিযুক্তের পাশাপাশি মামলা দায়ের হয় তাঁর মায়ের বিরুদ্ধেও। অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, অপহরণ, প্রমাণ লোপাটের মতো একাধিক ধারায় মামলা হয়। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মা-ছেলেকে দোষী সাব্যস্ত করে নিম্ন আদালত। অভিযুক্তকে মৃত্যুদণ্ড এবং তাঁর মাকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

ওই মামলায় হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, ছেলেকে রক্ষা করার জন্য মায়ের এই প্রচেষ্টা নতুন নয়। বরং এই সামাজিক মনোভাব ‘পিতৃতান্ত্রিক মানসিকতা ও সংস্কৃতিতে গভীর ভাবে প্রোথিত’। দুই বিচারপতির আরও বলেন, “যখন মা জানতে পারেন যে তাঁর সোনা ছেলে মোটেও অতটা সরল নয়, এবং সে পাঁচ বছরের একটি শিশুকন্যাকে নির্যাতনের পর নির্মম ভাবে হত্যা করেছে, তখন পুলিশকে জানানো কিংবা শিশুটির জন্য ন্যায়বিচার চাওয়ার পরিবর্তে তিনি তাঁর ছেলেকে রক্ষা করাকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন।” অভিযুক্তের মায়ের সাজা মকুব করে আদালত জানিয়েছে, তাঁর একমাত্র দোষ ছিল নিজের ‘সোনা ছেলে’কে রক্ষা করার নিরন্তর চেষ্টা করে যাওয়া!

Advertisement
আরও পড়ুন