নরেন্দ্র মোদী। — ফাইল চিত্র।
গোটা বিশ্ব যখন নানা রকম অনিশ্চয়তায় ডুবে রয়েছে, ভারতই সেখানে জ্বলজ্বল করছে বলে মন্তব্য করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শনিবার দিল্লিতে একটি সংবাদপত্র আয়োজিত শীর্ষ সম্মেলনে বক্তৃতা করছিলেন তিনি। সেখানেই মোদী বলেন, ‘‘আমরা এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে একুশ শতকের এক-চতুর্থাংশ পেরিয়ে গিয়েছে। বিশ্ব বহু উত্থান-পতনের সাক্ষী হয়েছে। আর্থিক সঙ্কট, অতিমারি পরিস্থিতি কোনও না কোনও ভাবে বিশ্বকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। আজ বিশ্ব অনিশ্চয়তায় পূর্ণ। কিন্তু এর মধ্যে ভারত এক ভিন্ন উচ্চতায় উঠে আসছে।”
এমতাবস্থায় দেশবাসীর মন থেকে ঔপনিবেশিক অতীতে সৃষ্ট দাস্য ভাব দূর করার লক্ষ্যমাত্রা আজ বেঁধে দিয়েছেন মোদী। মোদীর কথায়, ‘‘দেশের প্রতিটি কোণ থেকে ঔপনিবেশিক মানসিকতা আমাদের দূর করতে হবে। আগামী দশ বছরের মধ্যে আমি এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নাগরিকদের সামনে এগিয়ে দিতে চাই।” সামনের দশ বছর বলতে ২০৩৫ সালকে বুঝিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ব্রিটিশ শিক্ষাবিদ টমাস ব্যাবিংটন মেকলে প্রণীত শিক্ষানীতির দুশো বছর পূর্ণ হবে ২০৩৫-এ। পরোক্ষে সে কথাই মনে করিয়ে মোদী বলেছেন, “২০৩৫ সালে আমরা ঔপনিবেশিকতার দুশো বছর পূর্ণ করছি। সেখানে পৌঁছতে আমাদের হাতে দশ বছর সময় আছে। আর এই দশ বছরে আমাদের দেশকে ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে মুক্ত করতে হবে।”
শীর্ষ সম্মেলনের থিম ছিল, আগামীর রূপান্তর। সে কথা উল্লেখ করে মোদী বলেন, ‘‘যখন শতবর্ষ পার করা কোনও সংবাদ প্রতিষ্ঠান আগামীর রূপান্তর নিয়ে কথাবলে, তখন বুঝতে হবেরূপান্তরের চিন্তা জাতির বুকে চারিয়ে গিয়েছে।’’ প্রধানমন্ত্রীর দাবি, আগে সংস্কার আসত কোনও ঘটমানতার প্রতিক্রিয়ায়। কিন্তু এখন জাতীয় লক্ষ্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে সংস্কার হয়। ‘‘আমরা এখন অটল, ধারাবাহিকতাসম্পন্ন। জাতিই আমাদের কাছে সবার আগে।’’ কী ভাবে এই পর্বে পা রাখা সম্ভব হল? প্রধানমন্ত্রীর মতে, “আমাদের উত্তর-পূর্ব, আমাদের গ্রাম, আমাদের টিয়ার-২ ও টিয়ার-৩ শহর, নারীশক্তি, নতুন অর্থনীতি, মহাকাশ গবেষণা— এ সবের এবং আরও অনেক কিছুর সম্ভাবনা আগে অনুসন্ধানই করা হয়নি। আজ এ দেশের ক্ষুদ্রতম গ্রাম বা শহরও আধুনিক ব্যবস্থায় সজ্জিত।” ভারতের উন্নয়নে নারী শক্তির অবদানের কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেন মোদী। বলেন, “আমাদের কন্যারা প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজেদের ছাপ রেখে চলেছে... সমাজের চিন্তা ও সক্ষমতা দুটোই বদলে দিচ্ছে... বাধা দূর হলে নতুন ডানা গজায় আকাশে ওড়ার।”
অগ্রগতির উদাহরণ স্বরূপ মোদী জিডিপি-র হারের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘‘কয়েক দিন আগেই ভারতের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের জিডিপি-র পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়েছে। ৮% বৃদ্ধির হার শুধুই সংখ্যা নয়; সামগ্রিক শক্তিশালী অর্থনৈতিক সংকেত। এগুলো বোঝায় যে আজ ভারত বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালক হিসেবে উঠে আসছে।’’ এই অগ্রগতিকেও দাস্যভাব থেকে মুক্ত মন নিয়ে দেখার আহ্বান জানান তিনি। যেমন বর্তমান সরকারের ২০২৫ সালের সাফল্যের তালিকায় মোদী প্রত্যক্ষ কর ব্যবস্থাকে একটি ‘বড় সংস্কার’ বলে অভিহিত করেন। তার সঙ্গেই মনে করিয়ে দেন, ‘‘আগে যখন ভারতের বৃদ্ধির হার অত্যন্ত কম ছিল, তাকে বলা হত ‘হিন্দু রেট অব গ্রোথ’। তখন কিন্তু সেটাকে কেউ সাম্প্রদায়িকতা বলে দাগিয়ে দেননি। আজ ভারতের দ্রুত বৃদ্ধিকে কেউ ‘হিন্দু রেট অব গ্রোথ’ বলবেন?” মোদীর মতে, দাস-মনোবৃত্তি এতটাই গভীর ছিল যে অতীতে সরকারে বসা লোকেরাও বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন যে ভারতে তৈরি অস্ত্র যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। এর ফলে ভারত বিশ্বের বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক দেশে পরিণত হয়েছিল।