Jammu-Kashmir Terror Attack

‘কাশ্মীরে থাকব, পাকিস্তান যাব না, থাকতে না দিলে ব্যাগে ভরে ফেলে দিন’! উপত্যকা ছাড়তে নারাজ প্রাক্তন জঙ্গিদের স্ত্রীরা

তাল কাটল গত মঙ্গলবার পহেলগাঁও জঙ্গিহানার পর। সরকারি নির্দেশ, পাকিস্তান থেকে আগতদের সে দেশে ফিরে যেতে হবে। কিন্তু প্রাক্তন ওই জঙ্গিদের পরিবার পাকিস্তানে ফিরতে নারাজ।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৫ ২০:৫৪
Wife of Ex-Militant

জম্মু-কাশ্মীর ছাড়তে নারাজ প্রাক্তন জঙ্গির স্ত্রী। ছবি: পিটিআই।

জঙ্গি স্বামীরা কাঁধ থেকে বন্দুক নামিয়ে সংসারের হাল ধরেছেন অনেক দিন। ‘মূল স্রোতে’ ফিরতে তাঁরা আত্মসমর্পণ করেছিলেন সরকারের কাছে। ২০১০ সালে সরকারি পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় ঘর বেঁধেছেন। নতুন করে শুরু করেছেন জীবন। পরিবার নিয়ে জম্মু-কাশ্মীরে থাকার সুযোগ পান। কিন্তু আবার ‘বিপদ’। তাল কাটল গত মঙ্গলবার পহেলগাঁও জঙ্গিহানার পর। সরকারি নির্দেশ, পাকিস্তান থেকে আগতদের সে দেশে ফিরে যেতে হবে। কিন্তু প্রাক্তন ওই জঙ্গিদের পরিবার পাকিস্তানে ফিরতে নারাজ। তাঁদের স্ত্রীরা বলছেন, পাকিস্তানে যাওয়ার চেয়ে জম্মু-কাশ্মীরে মরে যাওয়া ঢের ভাল। সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে এমনই এক মহিলা বলেন, ‘‘হয় আমাদের কাশ্মীরে থাকতে দিন, নয়তো মেরে ব্যাগে পুরে ছুড়ে দিন।’’ অর্থাৎ, নিজেদের ইচ্ছায় পাকিস্তানে যেতে তাঁরা নারাজ।

Advertisement

আলিজ়া রফিক নামে এক মহিলা বিয়ে করেছেন প্রাক্তন এক জঙ্গিকে। ২০১৩ সালে তাঁরা কাশ্মীরে ঘর বাঁধেন। জম্মু-কাশ্মীরের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা সরকারের তরফে পুনর্বাসন পান রফিকরা। এখন তাঁরা রয়েছেন উত্তর কাশ্মীরে। তবে আলিজ়া জানান, পুলিশ তাঁদের কাশ্মীর ছেড়ে চলে যেতে বলেছে। কিন্তু সেটা কেমন করে সম্ভব? প্রশ্ন ওই মহিলার। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের দেশ ছাড়তে বলা হচ্ছে! আমার তিন সন্তান। ওরা (পুলিশ) বলছে, অসুবিধা থাকলে ছোট মেয়েকে এখানে রেখে যেতে। কারণ, ও এতটাই ছোট যে, অন্য কোথাও গেলে বিপদ-আপদ হতে পারে। কিন্তু মেয়েকে না নিয়ে আমরা চলে যাব? আর যাবই বা কোথায়?’’

প্রাক্তন ওই জঙ্গির স্ত্রী জানান, জম্মু-কাশ্মীরে তাঁরা বাড়ি করেছেন তিন বছর হল। তিনি বলেন, ‘‘সৎপথে জীবিকা নির্বাহ করছি। সরকার সুযোগ দিয়েছিল। সরকারি সহায়তাতেই এখানে এসেছি। আমাদের ভোটার কার্ড আছে, আধার কার্ড রয়েছে। ভোটও দিয়েছি।’’ বলতে বলতে অদূর ভবিষ্যতের কথা ভেবে কেঁদে ফেলেন আলিজ়া। জম্মু-কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিন্‌হার কাছে তাঁর আর্জি, ‘‘আমাদের থাকতে দিন। আমাদের ভুল কোথায়?’’

বস্তুত, ২০১০ সালে জম্মু-কাশ্মীরের তৎকালীন সরকার ঘোষণা করে পাকিস্তান বা পাক অধিকৃত কাশ্মীরে থাকা সমস্ত কাশ্মীরি জঙ্গি, যারা আত্মসমর্পণ করবে, তারা সরকারি সহায়তা পাবে। ওই ঘোষণার মাধ্যমে জঙ্গিদের পরিবারগুলিকে পুনর্বাসনে উৎসাহিত করা হয়। যদিও সরকার একে ঠিক পুনর্বাসন প্রকল্প বলেনি। বলা হয়েছিল, বিশেষ পরিস্থিতিতে করা পদক্ষেপ কিংবা উদ্যোগ। লক্ষ্য, উপত্যকায় শান্তি ফেরানো এবং সামগ্রিক উন্নয়ন। এখন আলিজ়ার মতো মহিলারা সরকারের দিকেই চেয়ে আছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘আপনারা এতটা নিষ্ঠুর হবেন না। আমরা কোনও পাপ করিনি। আমাদের এত বড় শাস্তি কেন দিচ্ছেন?’’ আলিজ়া বলছেন, ‘‘যদি একান্তই থাকতে দিতে না চান, মেরে ব্যাগে ভরে সীমান্তের ওই পারে ফেলে দিন। কিন্তু নিজেরা যাব না।’’

আলিজ়ার মতো জম্মু-কাশ্মীরে থাকা প্রাক্তন জঙ্গি পরিবারের কর্ত্রীরা বলছেন, তাঁরা কেউ পাকিস্তানে যাবেন না। এক জনের কথায়, ‘’১৫ বছর হল শান্তিতে বসবাস করছি। ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাচ্ছে। কর্তারা কাজ যাচ্ছে। এই সংসার ভেঙে আর কোথাও যেতে পারব না।’’

Advertisement
আরও পড়ুন