New Delhi Railway Station Stampede

‘১৫টা লাশ অ্যাম্বুল্যান্সে তুলেছি, ৪৪ বছরে এত ভিড় দেখিনি’, শিউরে উঠছেন নয়াদিল্লি স্টেশনের বৃদ্ধ কুলি

কুলি বলরাম জানান, যে গাড়ি ঠেলে মালপত্র নিয়ে যেতেন, তাতে লাশ চাপিয়ে নিয়ে গিয়েছেন, তার পরে তুলে দেন অ্যাম্বুল্যান্সে। শিশুদের লাশও ছিল।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৩:২৮
(বাঁ দিকে) অসুস্থ মহিলাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন মহিলারা। নয়াদিল্লি স্টেশনের বাইরে অ্যাম্বুল্যান্স (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) অসুস্থ মহিলাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছেন মহিলারা। নয়াদিল্লি স্টেশনের বাইরে অ্যাম্বুল্যান্স (ডান দিকে)। ছবি: পিটিআই।

১৯৮১ সাল থেকে নয়াদিল্লি স্টেশনে কুলির কাজ করেন। এত দিন যাত্রীদের মাল বয়ে গাড়িতে পৌঁছে দিতেন। শনিবার তাঁদের লাশ নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে দেন কৃষ্ণকুমার যোগী। এখনও সেই দৃশ্য মনে করে শিউরে উঠছেন তিনি। তাঁর দাবি, ৪৪ বছরে এত ভিড় দেখেননি এই স্টেশনে। আর এক কুলি বলরাম জানান, যে গাড়ি ঠেলে মালপত্র নিয়ে যেতেন, তাতে লাশ চাপিয়ে নিয়ে গিয়েছেন, তার পরে তুলে দেন অ্যাম্বুল্যান্সে।

Advertisement

নয়াদিল্লি স্টেশনে প্রতি মুহূর্তে আড়েবহরে বাড়ছিল ভিড়। নিজের ৪৪ বছরের কর্মজীবনে সেই ভিড় দেখেননি বলে জানিয়েছেন কৃষ্ণকুমার। তিনি জানান, প্রয়াগরাজগামী ট্রেন স্টেশনে প্রবেশ করার কথা ঘোষণা হতেই যেন একটা ঢেউ আছড়ে পড়ল। কোথা থেকে এত লোক এল, বোঝার আগেই ঘটে গেল সেই ভয়াবহ কাণ্ড। তিনি বলেন, ‘‘১২ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে প্রয়াগরাজ স্পেশ্যাল ছাড়ার কথা ছিল। আচমকাই ঘোষণা করা হয় ১৬ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে সেটা ছাড়বে। ১২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ট্রেন ধরার জন্য যাঁরা দাঁড়িয়েছিলেন এবং যাঁরা স্টেশনের বাইরে দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁরা ১৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মে যাওয়ার চেষ্টা করেন। শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি। অনেকেই ফুটব্রিজে ওঠার সিঁড়ি, এসকালেটরে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যান। ভিড় সামাল দিতে আমরা বেশ কয়েক জন কুলি জড়ো হই সেখানে। আটকানোর চেষ্টা করি।’’ কৃষ্ণকুমারের আক্ষেপ, তাতে কোনও লাভ হয়নি।

কৃষ্ণকুমারের চোখের সামনে ভাসছে সেই দৃশ্য! তাঁর কথায়, ‘‘ফুটব্রিজে তখন বীভৎস ভিড়। দমবন্ধকর পরিস্থিতি। অনেকেই পড়ে যান। সেখানে প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন দম আটকে মারা যান।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘গোটা ঘটনা নিজের চোখের সামনে দেখেছি। ১৪ এবং ১৫ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে লাশ তুলে নিয়ে গিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সে রেখেছি।’’ কৃষ্ণকুমারের দাবি, কুলিরাই পুলিশ এবং দমকলবাহিনীকে খবর দেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছোয় তিন-চারটি অ্যাম্বুল্যান্স। মৃতদের মধ্যে ছিল অনেক শিশুও। আর এক কুলি বলরাম বলেন, ‘‘মালপত্র বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে ঠেলাগাড়ি ব্যবহার করি, তাতে চাপিয়ে লাশ নিয়ে গিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স তুলেছি। ১৫ বছর ধরে এই স্টেশনে কুলির কাজ করছি। এত ভিড় কখনও দেখিনি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ভিড় থেকে অনেক বাচ্চাকে টেনে বার করেছি। বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদেরও উদ্ধার করেছি।’’

নয়াদিল্লি স্টেশনের ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১৮। মৃতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে রেল। গুরুতর আহতদের আড়াই লক্ষ টাকা এবং কম জখম হওয়া ব্যক্তিদের এক লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে।

Advertisement
আরও পড়ুন